প্রতিবেদন : যে সুরে গোয়াতে জনসভা করে এসেছিলেন, সেই চড়া সুরেই সোমবার দেখা গেল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। একদিকে কংগ্রেসকে আক্রমণ, অন্যদিকে বিজেপিকে। দুটি দলকেই কার্যত কাঠগড়ায় তুলে নেত্রী বললেন, নীতিটাই শেষ কথা। এরজন্য সমঝোতা করা যায় না। জানবাজারে কালীপুজোর উদ্বোধনে তৃণমূলের অবস্থান পরিষ্কার করে দিলেন নেত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী চড়া সুরে বিজেপিকে আক্রমণ করে বলেন, ওরা একদিকে দাম বাড়াচ্ছে অন্যদিকে দেশের সম্পত্তি বিক্রি করছে। মানুষ চুলোয় যাক। ওরা আবার কোনও জবাব দেয় না। খালি উত্তর চায়। সবটাই ভোটকে কেন্দ্র করে। ভোট এলেই ডেইলি প্যাসেঞ্জারি। কোটি কোটি টাকা ঢালা হয়। ভেবেছিল ক্ষমতায় আসবে। কিন্তু বাংলার মানুষ যে অন্যরকম বুঝতে পারেনি।
আরও পড়ুন-তৃণমূলে যোগদান চলছে
এরপরই কংগ্রেসকে আক্রমণ করেন নেত্রী। বলেন, ওরা যতই ফোঁসফাঁস করুক কিছু যায়-আসে না। বাংলায় আমাদের বিরুদ্ধে লড়বে আর অন্য জায়গায় কী করে আশা করে ওদের সমর্থন করব। নীতি কখনওই বদলায় না। আমরাও তো কংগ্রেস করতাম। ছেড়ে দিয়ে চলে এসেছিলাম। কেন? কারণ, ওরা আমাদের ও মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছিল। আজ এই জায়গায় আসতে প্রচুর কষ্ট করতে হয়েছে। পরপর তিনবার জিতেছি মানুষের আশীর্বাদে। প্রথমবার তো কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়েছিলাম একসঙ্গে কাজ করার জন্য। মাঝপথে ছেড়ে দিয়ে চলে যায়। আমরাও ইউপিএ ছেড়ে দিয়ে চলে এসেছিলাম। রোজ গ্যাসের দাম বাড়ত, জনবিরোধী নীতি। কাউকে তো কখনও কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি। তাই ছেড়ে দিয়ে আসি। ওরা পারে না তাই সব থেকে বড় শত্রু সিপিএমের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, সেদিন কংগ্রেস কী করে সিপিএমকে সমর্থন করল? এনডিএকে ন্যূনতম কর্মসূচির ভিত্তিতে সমর্থন দিয়েছিলাম। কোনও ধর্মের ওপর আঘাত করা যাবে না। এটাই ছিল প্রথম কথা। নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর কংগ্রেস কোনও লড়াই করেনি। আমরা সব জায়গায় যেতে বাধ্য হচ্ছি তার কারণ কংগ্রেসের উপর ভরসা করা যায় না, ওরা সমঝোতা করে। মৃত্যুভয় দেখিয়েও কিছু করা যাবে না আমাদের। বিজেপিকে শক্তিশালী হতে দেব না। এটা আমাদের অঙ্গীকার। ওরা মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে, আমরা করি লড়াই।
পুজোয় শান্তি-সমৃদ্ধি এবং সংহতি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যবাসীকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, মাস্ক পরবেন। কোভিড বিধি মেনে চলতে হবে।
আরও পড়ুন-ফের পথে কৃষকরা,ভোগান্তি বাড়াচ্ছে পেট্রোল-গ্যাস
নেত্রী বলেন, গ্যাসের দামে রান্নাঘরে কান্না। তেলের দাম কোথায় গিয়ে থামবে কেউ জানে না। জিনিসের দাম তাই লাগামছাড়া হচ্ছে। কৃষকদের অবস্থা দুর্বিষহ। লড়াই করে আমাদের অধিকার কেড়ে নিতে হচ্ছে। ত্রিপুরায় মারছে। উত্তরপ্রদেশে ঢুকতে দিচ্ছে না। গোয়ায় গেলাম, কালো পতাকা দেখাল। গো ব্যাক স্লোগান দিচ্ছে। অন্যরা অপ্রস্তুত হল। আমি প্রত্যুত্তরে নমস্কার করলাম। বাজারে গিয়েছি, শুনলাম ওখানেও বিক্ষোভ দেখাবে। কালো পতাকা দেখাবে। আমাকে বলল, ঘুরে চলুন। বললাম, কেন? কালো পতাকা! আগামিদিনে পাবলিকের ভোট রয়েছে, কালো পতাকা যারা দেখাল তাদের ব্ল্যাকলিস্টেড করবে। দেখুন, ওখানে একটাও কংগ্রেসের পতাকা ছেঁড়া হয়নি। ওদের একটা পোস্টারেও কালি লাগানো হয়নি। কংগ্রেস যে বিজেপির সঙ্গে এক্কা-দোক্কা খেলে এটাই তার বড় প্রমাণ।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা যা কথা দিই তা রাখি। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের সুযোগ এক কোটির বেশি মহিলা পেয়েছেন। স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড, কৃষকবন্ধু চালু হয়েছে। ১৬ তারিখ থেকে দুয়ারে সরকার চালু হবে। দুয়ারে রেশনও পৌঁছবে। মানুষ বুঝতে পারছেন, তৃণমূল কংগ্রেস ভরসার জায়গা।