এই মুহূর্তে জমজমাট নন্দন-রবীন্দ্র সদন-বাংলা আকাদেমি প্রাঙ্গণ। চলছে বাংলা ভাষার বৃহত্তম সাহিত্য পার্বণ ‘সাহিত্য উৎসব ও লিটল ম্যাগাজিন মেলা ২০২৪’। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের অন্তর্গত পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি আয়োজিত এই উৎসবে মহামিলন ঘটেছে বাংলা ভাষার কবি, সাহিত্যিক, সম্পাদক, পাঠকদের। প্রাণখুলে তাঁরা ভাবের আদানপ্রদান করছেন।
আরও পড়ুন-আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা, ২০ দেশের অংশগ্রহণ উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রী
১০ জানুয়ারি একতারা মুক্তমঞ্চে উৎসবের উদ্বোধন করেন সাহিত্যিক ঝড়েশ্বর চট্টোপাধ্যায় এবং কবি প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির সভাপতি ব্রাত্য বসু, মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন, সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, কবি সুবোধ সরকার, সাহিত্যিক ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশক সুধাংশুশেখর দে, সাহিত্যিক প্রচেত গুপ্ত, কবি অভীক মজুমদার, কবি প্রসূন ভৌমিক, কবি শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায়, আকাদেমির সচিব বাসুদেব ঘোষ প্রমুখ।
আরও পড়ুন-আজ রাত পোহালেই মকরস্নান, নয়া রেকর্ড
মেলায় অংশ নিচ্ছে রাজ্যের বিভিন্ন জেলার প্রায় ৪৬০ লিটল ম্যাগাজিন। রয়েছে অন্য রাজ্যের কয়েকটি পত্রিকাও। বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে স্টল। প্রতিদিন রয়েছে চা, জল, টিফিনের ব্যবস্থা। খুশি সম্পাদকরা। ভিড় চোখে পড়ছে সন্দেশ, বিচিত্রপত্র, আরাত্রিক, পুরবৈয়াঁ, কলকাতার যিশু, বৃষ্টিদিন, অঙ্কুরীশা, রূপশালী, শরৎশশী, ইলশেগুঁড়ি, ছোটর দাবি, ফজলি, নৌকো, তকমিনা, পানকৌড়ি, খেয়া৯, আলো, জঙ্গলমহল, প্রিয় বসুন্ধরা, এবং জলার্ক, এবং মুশায়েরা, লুব্ধক, শব্দবাউল, পদ্য, আর্ষ, কাব্যপথিক, কেয়ার অফ দার্জিলিং, আনন্দকানন, রোদরং, গ্রামীণ পুঁথি, চারুপত্র, প্রোরেনাটা, গাধা, চুনুমুনু, অচিন পাখি, কৃশাণু, সপ্তধা, ইসক্রা, বনানী, ক্লেদজ কুসুম, মহুল, শব্দমালা, শুধু বিঘে দুই, সাঁঝবাতি, আদম, অঞ্জস, ভাষাপথ, কচিকাঁচা সবুজসাথী, সাহিত্য রংবেরং, প্রভৃতি পত্রিকার স্টলে। বিক্রি হচ্ছে ভালই। বিশেষ সংখ্যার প্রতি পাঠকদের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। উৎসবে ঘটেছে ৭ শতাধিক কবি-লেখকের সম্মিলন। কবিরা পাঠ করছেন কবিতা। গল্পকারেরা শোনাচ্ছেন গল্পের জন্মকথা। লিটল ম্যাগাজিনের সম্পাদকেরা জানাচ্ছেন তাঁদের পত্রিকা সম্পাদনার সমস্যার কথা। আয়োজিত হয়েছে আলোচনাসভা ও সাহিত্য আড্ডা। নবীন-প্রবীণ গল্পকারের গল্প পাঠ করছেন বাচিক শিল্পীরা। অনুষ্ঠান চলছে একতারা মুক্তমঞ্চ, বাংলা আকাদেমি সভাঘর, জীবনানন্দ সভাঘর এবং রাজ্য চারুকলা পর্ষদ সংলগ্ন মুক্তমঞ্চে। প্রদান করা হয়েছে ১২টি সম্মাননা। ‘আবোল তাবোল’-এর শতবর্ষ সুকুমার রায়ের ‘আয় বেয়াড়া সৃষ্টিছাড়া নিয়মহারা হিসাবহীন’ এবারের শীর্ষ পঙক্তি। উৎসব উপলক্ষে প্রকাশিত হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির কয়েকটি বই।
আরও পড়ুন-রাজ্যপাল কি সরকারের বাইরে? বোসের আলটপকা মন্তব্য, ধুইয়ে দিলেন ব্রাত্য বসু
নবস্পন্দন গ্রন্থমালা সিরিজে প্রকাশিত হয়েছে তরুণ কথাকার শুভ্রদীপ চৌধুরী, পাতাউর রহমান এবং তরুণ কবি নীলাদ্রি দেব, রাজীব ঘোষালের লেখা নিয়ে চারটি এক ফর্মার পুস্তিকা। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ১২৫তম জন্মবর্ষে তাঁর স্মরণে একটি বিশেষ স্মারকগ্রন্থ ‘তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় : ফিরে দেখা’ প্রকাশিত হয়েছে। আয়োজিত হয়েছে প্রদর্শনী, বাংলা গানের অনুষ্ঠান। একটি আলোচনাসভার মধ্যে দিয়ে বিশেষভাবে স্মরণ করা হয়েছে সন্দীপ দত্তকে। মেলা প্রাঙ্গণে রয়েছে সাহিত্য অকাদেমি, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ, রাজ্য পুস্তক পর্ষদ, পশ্চিমবঙ্গ শিশু অধিকার সুরক্ষা আয়োগ, কলকাতা পৌরসংস্থা পশ্চিমবঙ্গ দলিত সাহিত্য আকাদেমি, উদ্বোধন পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ড, বঙ্কিম ভবন, ইনস্টিটিউট অফ ল্যাঙ্গুয়েজ স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চ প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের স্টল। আজ রবিবার। মনন চিন্তন কল্পনার এই উৎসবের শেষ দিন। আশা করা যায়, উপচে পড়বে সাহিত্যপ্রেমীদের ভিড়। ছাপিয়ে যাবে বাকি দিনগুলোকেও।