প্রতিবেদন : দেশের আর্থিক পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। একদিকে মূল্যবৃদ্ধিতে জেরবার আমজনতা, অন্যদিকে কর্মসংস্থানের সংকট তীব্র হচ্ছে। বছরে ২ কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি ভেসে গিয়েছে ভাগীরথীর জলে। সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকার সমস্যা থেকে দৃষ্টি ঘোরাতে নানা কৌশল নিচ্ছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। লোকসভা ভোটের আগে নরেন্দ্র মোদির হয়ে দেশজুড়ে প্রচারের হাওয়া তুলতে সরকারি অর্থের দেদার নয়-ছয় শুরু করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। মোদির প্রচারের জন্য এবার নয়া ফন্দি বিজেপির। গরিবের রেশনকে প্রচারের হাতিয়ার করতে রেশন ব্যাগে ছাপানো হবে নরেন্দ্র মোদির ছবি । গণবণ্টন ব্যবস্থায় খাদ্যসামগ্রী নেওয়ার জন্য বিশেষ ধরনের প্লাস্টিক ব্যাগ চালু করছে কেন্দ্র। এই ব্যাগেই ছাপা হবে মোদির ছবি, যা লোকসভা ভোটের আগে প্রধানমন্ত্রীর আত্মপ্রচারে নয়া মাধ্যম।
আরও পড়ুন-কোপাই-দখল খতিয়ে দেখে নিষেধাজ্ঞা জারি প্রশাসনের
সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, লোকসভা ভোটকে নজরে রেখে বাংলা-সহ সারা দেশে প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনার আওতায় থাকা ২০.০৩ কোটি জনতার হাতে মোদি-ছাপ দেওয়া ব্যাগ পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় খাদ্যমন্ত্রক এই খাতে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা মঞ্জুর করেছে। শুধু তাই নয়, সময়মতো ব্যাগ সরবরাহ না করলে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে আর্থিক জরিমানা করার কথাও বলা হয়েছে। কেন্দ্রের এই পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেনের প্রতিক্রিয়া, পিএম-এর ফুলফর্ম এখন আর প্রাইম মিনিস্টার নয়। পিএম-এর অর্থ এখন হয়ে গিয়েছে পাবলিসিটি মাস্টার। যে প্রধানমন্ত্রী নিজের জীবদ্দশায় নিজের নামেই স্টেডিয়াম উদ্বোধন করেন, যিনি নিজের ছবি দিয়ে ইউজিসিকে বলেন প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ে সেলফি স্ট্যান্ড বানাতে হবে, যিনি রেশন ব্যাগে নিজের ছবি দিতে বলেন, আগামী দিনে প্রচারের স্বার্থে তিনি শৌচাগারের বাইরেও নিজের ছবি দেওয়ার কথা বলতে পারেন!
আরও পড়ুন-জোড়া সভায় চন্দ্রিমা, কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ শপথ গ্রহণ মহিলা তৃণমূলের
মোদির ছবি দেওয়া প্লাস্টিকের রেশন ব্যাগের জন্য সরকারি কোষাগার থেকে ৩০০ কোটি টাকা মঞ্জুর প্রসঙ্গে তৃণমূল সাংসদের কটাক্ষ, বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে ভারত ১২১টি দেশের মধ্যে ১১১ নম্বরে রয়েছে। মানুষ না খেতে পেয়ে মরছে আর রেশন ব্যাগে ছবি সেঁটে নিজের প্রচার চালাচ্ছেন মোদি। এর আগেও বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও প্রকল্পের ৮৫ শতাংশ টাকা আত্মপ্রচারে ব্যবহার করেছেন মোদি। একের পর এক এই পদক্ষেপ স্বৈরাচারী ও তুঘলকি শাসন ব্যবস্থার নির্দশন। তৃণমূলের রাজ্যসভার মুখ্যসচেতক সুখেন্দুশেখর রায় একাধিক প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেছেন, “চটের ব্যাগ ব্যবহার না করে প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার করা হচ্ছে কেন? প্লাস্টিকের ব্যাগে প্রধানমন্ত্রীর ছবি কেন? টাকাটা কি প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে আসছে? টাকাটা দেশের মানুষ কর বাবদ দিচ্ছেন, ফলে ওই প্লাস্টিকে ভারতের ম্যাপ থাকলে বেশি ভালো হতো। জোরজুলুমের রাজত্ব চলছে। লোকসভার তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেন, মোদি সবসময় এভাবেই নিজের প্রচার করেন তবে এই আত্মপ্রচার করেও কোনও লাভ হবে না। এর আগেও রেশন দোকানে মোদির ছবি দেওয়া হোর্ডিং বসানো বাধ্যতামূলক করেছিল কেন্দ্রের বিজেপি সরকার তা নিয়ে তুমুল বির্তক হয়।
আরও পড়ুন-স্বীকৃতি চাই বাংলার ৪ খণ্ডের গবেষণাপত্র প্রকাশ মুখ্যমন্ত্রীর
বিরোধীরা একযোগে এর সমালোচনা করেন। তারপরেও এবার গরিবের রেশনকে হাতিয়ার করে মোদির ছবি ভোটের আগে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রে যুগ্মসচিব অনিতা করোল ব্যাগ সংক্রান্ত পরিকল্পনার কথা জনিয়ে চিঠি দিয়েছেন ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার (এফসিআই) চেয়ারম্যান অশোক মিনাকে। সেখানে দ্রুত টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এমনকী সময়মতো ব্যাগ সরবরাহ না করলে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে জরিমানা করা হবে বলে জানানো হয়েছে। ৬ মাস অন্তর অর্থাৎ বছরে দু’বার রেশন উপভোক্তাদের ব্যাগ বিলির কথা বলা হলেও আসলে মোদির ছবি দিয়ে ভোটের প্রচার শুরু করাই এখন অগ্রাধিকার বিজেপির।