শ্যামল রায়, নবদ্বীপ : চৈতন্যভূমি নবদ্বীপ শহরে আগমেশ্বরী কালীপুজো শুরু হয় ৬০০ বছর আগে। সেই পুজো আজও নিষ্ঠা সহকারে করছেন বর্তমান কর্মকর্তারা। শতাব্দীপ্রাচীন এই পুজোর জাঁকজমক যথেষ্ট। আশ্চর্যের বিষয়, এখনও মৃৎশিল্পীরা মূর্তির পিছন থেকে দেবীর চোখ এঁকে থাকেন। তন্ত্রমতে নয়, বৈষ্ণবমতে পুজো হয় আগমেশ্বরী কালীর। পুজো ঘিরে মানুষের মধ্যে যথেষ্ট নিষ্ঠা ও ভক্তি রয়েছে। আগমেশ্বরী কালীর বিশেষত্ব হল তন্ত্রমতে কারণবারি পুজোর অন্যতম উপকরণ হলেও বৈষ্ণবমতে পূজিত আগমেশ্বরী কালীপুজোয় কারণবারি লাগে না। গোপালের মূর্তি সামনে রেখে মায়ের পুজো হয়।
আরও পড়ুন-চুনোমাছ বাঁচাতে মা কালীর পুজো
দেবীর উদ্দেশে বলি দেওয়া হয় না। মায়ের পুজো ঘটে হয় না, পুজো হয় দক্ষিণাকালীর যন্ত্রে, একমাত্র পুরোহিতই যা স্পর্শ ও দর্শন করতে পারেন। কালীপুজোর রাতে যন্ত্রটিকে মন্দির থেকে বের করে দেবীর বিশাল মূর্তির সামনে রেখে ভোগরাগ নিবেদন করা হয়। তন্ত্রসাধক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ এই পুজো শুরু করেছিলেন বলে তাঁর নামেই আজও আজমের শরিফ দেবীর নামকরণে আগমেশ্বরী কালীপুজো হয়ে আসছে নিয়মনিষ্ঠা সহকারে। এখনও বড় হাঁড়িতে খিচুড়ি, অন্য কড়াইতে সবজি, তরকারি, পায়েস আগমেশ্বরী মাকে ভোগ দেওয়া হয়। প্রতি বছর পুজোয় চতুর্দশী তিথিতে ২০ হাত কালীমূর্তি স্থাপন করা হয়। অমাবস্যা তিথি পড়লে চক্ষুদান করা হয়। তবে সারা বছর নবদ্বীপের আগমেশ্বরীতলা মন্দিরে দেবীর পঞ্চমুন্ডির আসনে নিত্য সেবা করে থাকেন কর্মকর্তারা।
আরও পড়ুন-করোনা সচেতনতা পুজো ভাবনায়
কালীপুজোর রাতে মূর্তিতে পুজো হলেও নিত্য সেবা বন্ধ হয় না। ৬০০ বছর আগে বাংলা-অসম-উড়িষ্যায় চৈতন্য মহাপ্রভুর আমলে বৈষ্ণবধর্মের প্লাবন বয়েছিল। ইতিহাস বলে, সেই সময় চৈতন্যদেবের শিক্ষক তথা বৈষ্ণব আন্দোলনের অন্যতম প্রধান অদ্বৈত মহাপ্রভুর বড় ছেলে মথুরা গোস্বামীর পরিবারে ৬৫০ খ্রিস্টাব্দে জন্ম নেন তন্ত্রসাধক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ। তিনি নবদ্বীপে নিজের বাড়িতে শক্তিপুজো শুরু করেন মায়ের দর্শনের জন্য। কৃষ্ণানন্দ মায়ের কাছে কাতর প্রার্থনা জানিয়েছিলেন। এক রাতে মা তাঁকে স্বপ্নে দেখা দিয়ে বলেন, ভোরবেলা প্রথম যে মহিলাকে তিনি দেখতে পাবেন তিনিই মা কালী। পরের দিন ভোরে কৃষ্ণানন্দ খোলা চুলে এক কালো বর্ণের আদিবাসী মহিলাকে ডান পা সামনে এগিয়ে ও হাত তুলে বরাভয় রূপে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন। ঐ রূপ দেখে কৃষ্ণানন্দ দেবীর দেওয়া স্বপ্নের কথা মনে করে তাঁকেই দক্ষিণাকালী রূপে চিনতে পারেন। আদিবাসী মহিলার রূপেই কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ মা কালীর পুজো শুরু করেন। সেই থেকে আজও এখানে আগমেশ্বরী কালীপুজো হয়ে আসছে। আরও জানা গিয়েছে যে প্রাচীন আগমেশ্বরী কালীকে ভয়ঙ্কর রুদ্রমূর্তিতে পুজো করা হয়। লোকমুখে এই প্রচলিত কাহিনির কথা জানা যায় বিভিন্ন সূত্রে। নদীয়ার মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র একবার স্বপ্নে ওই ভয়ঙ্কর রুদ্রমূর্তিতে
দেবীকে দেখেছিলেন।