চলছে বিয়ের মরশুম। বিয়ের পরেই হনিমুন। কোথায় যাওয়া যায়, চলছে আলোচনা। সমুদ্র পছন্দের হলে আদর্শ জায়গা হতে পারে আলিবাগ। তিনদিকে সমুদ্র। অগাধ জলরাশি। মহারাষ্ট্রের এই বিস্তীর্ণ সৈকতে আরব সাগরের সৌন্দর্য ও নির্মলতাকে প্রাণ খুলে উপভোগ করা যায়। পাশাপাশি রয়েছে জঙ্গল এবং দুর্গ। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আলিবাগে বেড়ানো যায়। এই সময় আবহাওয়া থাকে শীতল ও শুষ্ক। তারপর ধীরে ধীরে তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করে। জুন মাস থেকে নামতে শুরু করে বৃষ্টি।
আলিবাগ এবং এর আশপাশের গ্রামগুলি বেনে ইজরায়েলি ইহুদিদের ঐতিহাসিক পশ্চাৎভূমি। শহরের ইজরায়েল আলি এলাকায় একটি উপাসনালয় রয়েছে। একটা সময় সেখানে আলি নামে এক বেনে ইজরাইল বাস করতেন। তিনি ছিলেন ধনী ব্যক্তি। তাঁর বিশাল বাগানে আম ও নারকেল গাছ ছিল। তাই স্থানীয়রা জায়গাটিকে আলিচি বাগ বা কেবল আলিবাগ বলে ডাকতেন।
জায়গাটার ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। সপ্তদশ শতকে শহরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কানহোজি আংরে। তিনি ছত্রপতি শিবাজির শাসনকালে নৌপ্রধান ছিলেন। তার আগে, আলিবাগ কোলাবা নামে পরিচিত ছিল। সেখানে দুর্গ নির্মাণ করেছিলেন শিবাজি। আলিবাগ শহর এবং আশপাশে আছে বেশকিছু দর্শনীয় স্থান।
আরও পড়ুন-ফের রক্তাক্ত হল বিজেপি শাসিত মণিপুর, হত ২, উত্তেজনা চরমে
সেগুলো কী কী?
আলিবাগ বিচ
আলিবাগ সমুদ্র সৈকত আলিবাগের সবচেয়ে বিখ্যাত জায়গাগুলোর মধ্যে একটি। এই সৈকতটির সৌন্দর্য এককথায় অসাধারণ। চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। প্রকৃতপক্ষে একটি রোমান্টিক জায়গা। নব দম্পতিদের জন্য আদর্শ। প্রিয়জনের সঙ্গে নিভৃতে সময় কাটানো যায়।
ভার্সোলি বিচ
আলিবাগ সমুদ্র সৈকতের পরে, ভার্সোলি সৈকত আলিবাগের দ্বিতীয় সর্বাধিক জনপ্রিয় জায়গা হিসাবে পরিচিত। এই পর্যটন কেন্দ্রটি অনেকেই বেছে নেন, যখন তাঁরা আলিবাগ ভ্রমণের পরিকল্পনা করেন। কটেজ, রিসর্টের পাশাপাশি আছে বিলাসবহুল হোটেল। আরব সাগরের মুখোমুখি বসা যায়। একান্তে কথা বলা যায় ঢেউয়ের সঙ্গে।
অকসি বিচ
একটি শান্ত ও মন ভাল করা জায়গা অকসি বিচ। এটা আলিবাগ সমুদ্র সৈকত এবং নগাঁও সমুদ্র সৈকতের ঠিক মাঝখানে স্ম্যাক ডাউনে অবস্থিত। মূলত জেলেরা এখানে থাকে। সৈকতটির শান্ত পরিবেশ শরীর ও মনকে নিমেষে চাঙ্গা করে দিতে পারে।
রেওয়া জেটি
দারুণ জায়গা রেওয়া জেটি। এই জেটির কাছাকাছি রয়েছে বেশ কয়েকটি ছিমছাম বাংলো এবং গ্রাম, যেখানে রাতে থাকার জন্য বুকিং করা যায়। এখানে থাকলে আলিবাগকে নতুন করে চিনে নিতে পারা যাবে। শহর থেকে একটু দূরে। বেশ মনোরম।
মুরুদ জঞ্জিরা ফোর্ট
আলিবাগের কাছে সবচেয়ে বিখ্যাত পর্যটন স্থানগুলোর মধ্যে একটি হল মুরুদ জাঞ্জিরা ফোর্ট। মুরুদ গ্রামের উপকূলে একটি দ্বীপে অবস্থিত দুর্গটি। এখান থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দুটিই দারুণভাবে উপভোগ করা যায়। চমকপ্রদ জায়গা। ফোটোগ্রাফির জন্য আদর্শ।
কোলাবা ফোর্ট
এটি শুধু জনপ্রিয় সমুদ্র সৈকতই নয়, একটি আকর্ষণীয় জায়গাও বটে। জায়গাটা ইতিহাসের হদিশ দেবে। অতীতদিনে শিবাজী মহারাজের শাসনকালে কোলাবা ফোর্ট নৌ স্টেশন হিসাবে ব্যবহৃত হত।
কিহিম বিচ
আলিবাগ শহর থেকে প্রায় ১২ কিমি দূরে এক অদ্ভুত সমুদ্র সৈকত কিহিম। নারকেল গাছ এবং বিশুদ্ধ হাওয়ায় ভরপুর। ফলে এই সৈকতে নিয়মিত ভ্রমণপিপাসুদের আনাগোনা লেগে থাকে। জায়গাটিকে রোমান্টিক করে তোলে এর অপরূপ সৌন্দর্য। নবদম্পতিরা ঘুরে দেখতে পারেন।
কানাকেশ্বর জঙ্গল
সমুদ্রের পাশাপাশি আছে জঙ্গল। তারমধ্যে অন্যতম কানাকেশ্বর জঙ্গল। আলোআঁধারি পরিবেশ। এই জঙ্গলে দেখা মিলবে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, বন্যপ্রাণী, গাছপালার। জঙ্গলের মধ্যে ক্যাম্প করে থাকা যায়। যাঁরা রোমাঞ্চ পছন্দ করেন, তাঁদের জন্য বিশেষ পছন্দের জায়গা।
কানাকেশ্বর মন্দির
আলিবাগের গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থান হল কানাকেশ্বর মন্দির। এখানকার আরাধ্য দেবতা ভগবান শিব। এটি একটি পবিত্র তীর্থস্থান। প্রতিদিন ভক্তদের ভিড়ে জমে। বিশেষ করে পুজো ও উৎসবের দিনগুলোতে। এটা আলিবাগে দেখার সেরা জায়গাগুলির মধ্যে একটি।
কাশিদ বিচ
কাশিদ বিচের বিশেষ পরিচিতি রয়েছে মহারাষ্ট্র জুড়ে। অসাধারণ সমুদ্র সৈকত। আলিবাগের অন্যতম দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে একটি। ৩ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত, সৈকতটি সূক্ষ্ম গাছ এবং গুল্ম দিয়ে সাজানো। মনে হয়, এ যেন এক মায়াবী সৈকত। মন ও শরীরের ক্লান্তি দূর করে দিতে পারে।
আরও পড়ুন-লাদাখে সশস্ত্র চিনা সেনা, খালি হাতেই প্রতিরোধ ভারতীয় মেষপালকদের
কীভাবে যাবেন?
রেল অথবা আকাশপথে পৌঁছে যান মুম্বাই। মুম্বই থেকে এই উপকূলীয় শহরের দূরত্ব মাত্র ৯৫ কিলোমিটার। জাতীয় সড়ক ৬৬-র মাধ্যমে পৌঁছনো যায় প্রায় ২ ঘণ্টায়। মুম্বই থেকে জলপথেও আলিবাগ পৌঁছনো যায়।
কোথায় থাকবেন?
আলিবাগে আছে বেশকিছু হোটেল, রিসর্ট, গেস্ট হাউস। থাকা এবং খাওয়ার কোনও অসুবিধা হবে না। আগে থেকে বুকিং করে গেলেই ভাল। বেড়ানোর জন্য গাড়ির প্রয়োজন হলে হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। তাঁরা যথেষ্ট সহযোগিতা করেন। হাতছানি দেয় আলিবাগ। দেরি না করে চটপট বেরিয়ে পড়ুন।