কী নেই ভারতে? পর্বত, সমুদ্র, অরণ্য, মরুভূমি, মালভূমি, তুষারভূমি, সমতলভূমি, নদী, নালা, হ্রদ, দিঘি সবই আছে। বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের সংস্কৃতি, আচার আচরণ, রীতিনীতি, ধর্মীয় বিশ্বাসের মধ্যে যেমন পার্থক্য রয়েছে, তেমনই পার্থক্য রয়েছে দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশে। আবহাওয়ার মধ্যেও রয়েছে বৈচিত্র। এই সব বৈশিষ্ট্য এবং সৌন্দর্যের টানে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ বিদেশি পর্যটক ছুটে আসেন। আবার দেশীয় পর্যটকরাও সুযোগ সময় পেলে দেশের নানা জায়গা ঘুরে বেড়ান।
আরও পড়ুন-নিয়োগে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে জটিলতা তৈরির চেষ্টা, বিচারপতির তোপে বামপন্থী আইনজীবীরা
বিদেশিদের ভারতে আসতে গেলে পাসপোর্ট ভিসার প্রয়োজন হয়। সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু দেশের মধ্যে এমন কিছু জায়গা রয়েছে যেখানে যাওয়ার জন্য ভারতীয়দেরও অনুমতি নিতে হয়। এই অনুমতির পোশাকি নাম ইনার লাইন পারমিট। এরকমই একটি জায়গা সো মোরিরি। এটা লাদাখের চ্যাংথং মালভূমির অন্তর্গত এক অপূর্ব সুন্দর হ্রদ। চাংটাং বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের মধ্যে অবস্থিত। সো মোরিরি হ্রদকে বলা হয় প্যাংগং সো হ্রদের যমজ। ‘সো মোরিরি’ শব্দের অর্থ পর্বতের হ্রদ বা মাউন্টেন লেক। হ্রদ এবং আশপাশের এলাকা সো মোরিরি জলাভূমি সংরক্ষণ রিজার্ভ হিসাবে সুরক্ষিত। পাহাড়ি ঝরনা এবং সংলগ্ন পর্বতের তুষার গলা জলে পরিপূর্ণ। উত্তর এবং দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে দুটি জলের ধারা হ্রদে প্রবেশ করে তাকে ভরিয়ে তুলেছে। এই দুই ধারাতেই রয়েছে জলাভূমি। এটা মূলত লবণাক্ত জলের হ্রদ। অপরূপ ভূপ্রকৃতি, রঙিন পর্বতের দৃশ্য, সুবিশাল উপত্যকা এই হ্রদকে ঘিরে রেখেছে। এখান থেকে সূর্যাস্ত দেখতে দারুণ লাগে। পাড় বরাবর পায়ে হেঁটে যত দূর ইচ্ছে যাওয়া যায়। হ্রদের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৯ কিলোমিটার এবং প্রস্থ প্রায় ৮ কিলোমিটার। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে হ্রদের উচ্চতা ৪,৫২২ মিটার। এই এলাকায় তিব্বতি নেকড়ে, লাদাখি ভরাল, পরিযায়ী পাখি, আইবেক্স এবং বিভিন্ন বিরল প্রজাতির পাখির বসবাস। সুউচ্চ পর্বতমালা বেষ্টিত এই জায়গায় একবার পা রাখলে শরীর মন প্রশান্তিতে ভরে উঠবে। বসন্তের শুরু থেকে গরমকাল পর্যন্ত এই অঞ্চলে প্রবেশের অনুমতি মেলে।
আরও পড়ুন-ফুটপাথবাসীদের জন্য শহরে আরও নাইট শেল্টার
সো মোরির পশ্চিম তীরে রয়েছে প্রায় চারশো বছরের প্রাচীন করজোক বৌদ্ধমঠ। এটা পর্যটক এবং বৌদ্ধ তীর্থযাত্রীদের কাছে অন্যতম আকর্ষণকেন্দ্র। ঘুরে দেখা যায় প্যাংগং হ্রদ। এই হ্রদ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৪ হাজার ফুট উপরে অবস্থিত। লাদাখের উষর মরুভূমির মধ্যেই মরূদ্যানের মতোই বিধাতার এক আশীর্বাদ। দেখেই মোহিত হতে হয়। বিস্ময়ে হতবাক হতে হয়। সারা লেক জুড়ে চোখে পড়ে রঙের বৈচিত্র। তীরের কাছে পান্না সবুজ, একটু দূরে ময়ুরকণ্ঠী নীল, আরও দূরে গাঢ় নীল। স্বচ্ছ জলের তলায় নুড়ি-পাথরগুলো পরিষ্কার দেখা যায়। পৃথিবীর সর্বোচ্চ লবণাক্ত জলের হ্রদ এটি। জলে কাঁকড়া জাতীয় প্রাণী ছাড়া কোনও মাছ নেই। তবে এখানে রয়েছে প্রচুর ব্রাহ্মণী হাঁস, রাজহাঁস ও গাঙচিল। পাশাপাশি দূরের তিব্বত পাহাড় থেকে নেমে আসে কিয়াং নামে এক প্রকার বুনো গাধা। তবে ক্রিস্টাল ক্লিয়ার জলের প্যাংগং লেকের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দেয় দূরের বাদামি-ধূসর পাহাড়ের রাশি ও পরিষ্কার আকাশের পটভূমি। ঠান্ডা হাওয়ায় এই লেকের জলে ছোট ছোট ঢেউ খেলে। ঝকঝকে নীল আকাশ, মাঝেমধ্যে খণ্ড খণ্ড সাদা মেঘের আনাগোনা। এককথায় অসাধারণ। এছাড়াও ঘোরা যায় নুব্রা ভ্যালি। আগেই বলেছি, সো মোরিরি বেড়াতে গেলে অনুমতির প্রয়োজন। অপূর্ব সুন্দর এই হ্রদ প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার খুব কাছে অবস্থিত। তাই নিরাপত্তার খাতিরেই এখানে প্রবেশের অনুমতি বা ইনার লাইন পারমিট নিতে হয়। ভারতীয় এবং বিদেশি উভয় পর্যটকদের ক্ষেত্রেই এই নিয়ম প্রযোজ্য। ইনার লাইন পারমিট সংগ্রহ করতে হয় লে-র ডিসি অফিস থেকে। এখানকার প্রকৃতি চরমভাবাপন্ন। তাই বয়স্ক মানুষদের জন্য যাত্রা কঠিন হতে পারে। যাতে ভ্রমণে কোনও বিড়ম্বনায় পড়তে না হয়, তার জন্য যাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। হাতছানি দেয় সো মোরিরি? সপরিবারে ঘুরে আসুন।
আরও পড়ুন-আপেল-কমলালেবুর মিশেলে নয়া জাতের কুল চাষে চমক
কীভাবে যাবেন?
সড়ক, রেল এবং বিমান যে কোনও উপায়েই সো মোরিরি পৌঁছনো যায়। সো মোরিরির নিকটবর্তী বিমানবন্দরটি রয়েছে লে-তে। লে-এর কুশোক বকুলা রিনপোচে বিমানবন্দর। ট্রেনে যেতে চাইলে নামতে হবে নিকটতম রেলস্টেশন জম্মু তাওয়াইয়ে। সেখান থেকে প্রায় ২৩০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে সো মোরিরি। লে থেকে কারু, উপশি, কুমডোক, কেরে, চুমাথাং, মাহে এবং সুমদো পেরিয়ে তবে পৌঁছনো যায় সো মোরিরি। পথ ঠিক থাকলে পেরোতে সময় লাগে প্রায় আট ঘণ্টার মতো। জম্মু ও কাশ্মীর স্টেট রোড ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন লেহ থেকে সো মোরিরি পর্যন্ত সরাসরি বাস চালায়।
আরও পড়ুন-গেরুয়া মিথ্যের মুখোশ খুলে গেল
কোথায় থাকবেন?
কাছাকাছি থাকার জায়গা খুব বেশি নেই। তবে এখানে তাঁবু খাটিয়ে বসবাসের ব্যবস্থা রয়েছে। রকমফের রয়েছে তাঁবুর। পছন্দমতো নেওয়া যায়। এছাড়াও হ্রদের কাছে রয়েছে গেস্ট হাউস। সেখানেও থাকা যায়। আগে থেকে বুকিং করে গেলেই ভালো। কিছু সাধারণ ওষুধপত্র সঙ্গে নিতে পারেন। যেমন বমি, মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা ও পেটের সমস্যার ওষুধ। কোল্ড ক্রিম ও সানস্ক্রিন লোশন নিতে ভুলবেন না। শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে দেরি না করে হাসপাতালে যাবেন।