আন্দোলন রুখতে বেনজির স্বৈরাচার বিজেপি সরকারের। মঙ্গলবার পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং উত্তরপ্রদেশের কৃষকরা ‘দিল্লি চলো’ অভিযান করার ঘোষণা করেছেন। কৃষকদের ভয়ে আন্দোলন আটকাতে দিল্লিতে জারি হয়েছে অঘোষিত জরুরি অবস্থা। কৃষকদের আন্দোলন দমনে নজিরবিহীন পদক্ষেপ নিয়ে আগামী ১৫ মার্চ পর্যন্ত দিল্লিতে ১৪৪ ধারা জারি করেছে মোদি সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা দিল্লি পুলিশ। কড়া নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয়েছে রাজধানী দিল্লিকে। কৃষকদের রুখতে রাস্তার মোড়ে মোড়ে পুলিশ মোতায়েনের বহর দেখে মনে হতে পারে রাজধানী যেন রণাঙ্গন!
ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (এমএসপি) সহ কৃষি সংক্রান্ত একাধিক দাবি নিয়ে কৃষকরা আবারও রাজধানী দিল্লি ঘেরাওয়ের প্রস্তুতি নিয়েছেন। কৃষক সংগঠনগুলির ঘোষণা: তারা কেন্দ্রীয় সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে এবং তাদের ন্যায্য দাবিগুলি নিয়ে আলোচনা করতে ১৩ ফেব্রুয়ারি ‘দিল্লি চলো’ অভিযান করা হবে। ইতিমধ্যেই পাঞ্জাব-হরিয়ানার কৃষকরা আন্দোলনের জন্য দিল্লির উদ্দেশে জড়ো হয়েছেন। এদিকে, আন্দোলনের আগেই হরিয়ানা থেকে দিল্লি পর্যন্ত সীমান্তে বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। রাজধানী এবং সংলগ্ন এলাকা জুড়ে জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। দিল্লির পুলিশ কমিশনার সঞ্জয় অরোরা বলেছেন, ১৩ ফেব্রুয়ারি কৃষকদের দিল্লি চলো অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতেই ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। গাজিপুর, সিংঘু এবং হরিয়ানা থেকে দিল্লিতে প্রবেশ করার সমস্ত পথ ইতিমধ্যেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে ৫ হাজারেরও বেশি পুলিশ কর্মী। বড় বড় লোহার বিম এবং লোহার ব্যারিকেড দিয়ে সীমান্তবর্তী সব এলাকা সিল করে দেওয়া হয়েছে। রাস্তা জুড়ে পোঁতা হয়েছে অসংখ্য পেরেক, যাতে কৃষকদের নিয়ে আসা গাড়িগুলি কোনওভাবেই দিল্লিতে প্রবেশ করতে না পারে।
২০২০-২১ সালে রাজধানী দিল্লি কৃষকদের নজিরবিহীন বিক্ষোভের সাক্ষী থেকেছে। সেই বিক্ষোভ টানা এক বছর ধরে চলেছিল। এবার লোকসভা ভোটের মুখে সেরকম আন্দোলনের আঁচ যাতে দিল্লিতে না পড়ে তার জন্য আগেভাগেই কোমর বেঁধে আসরে নেমেছে পুলিশ-প্রশাসন। ‘দিল্লি চলো’ ঘোষণা করেছে ইউনাইটেড কিসান মোর্চা এবং কিসান মজদুর মোর্চা। এই দুটি সংগঠন সহ দু’শো কৃষক ইউনিয়ন আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। সংগঠনগুলির অধিকাংশই পাঞ্জাব-হরিয়ানার। ভোটের আগে যাতে কেন্দ্রের মুখ না পোড়ে সেজন্য ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় স্তরে আলোচনা করা হয়েছে কৃষক সংগঠনগুলির সঙ্গে।
একমাসব্যাপী দিল্লি জুড়ে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে বেশ কিছু শর্ত। এগুলি হল : এখন থেকে পাঁচ বা ততোধিক ব্যক্তির একসঙ্গে রাস্তা অবরোধ করা, জমায়েত, সমাবেশ বা সভা করার অনুমতি নেই। সভা বা সমাবেশের আগে আগে থেকে নির্দিষ্ট কারণ দেখিয়ে অনুমতি নিতে হবে।
আরও পড়ুন- স্মৃতিকে হুঁশিয়ারি চন্দ্রিমা-বীরবাহার
যে কোনও কারণে মিছিল, বিক্ষোভ বা পায়ে হেঁটে মিছিল সংগঠিত করা বা অংশগ্রহণ করা দিল্লিতে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ট্রাক্টর বা ট্রলির মতো যানবাহন যাতে করে বিভিন্ন জিনিস বহন করা যায় বা কোনও রকম হিংসার সামগ্রী রয়েছে এরকম যানবাহন প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ দিল্লিতে।
দিল্লিতে পাবলিক প্লেসে আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরক, ক্ষয়কারী পদার্থ বা কোনো বিপজ্জনক জিনিস বহন করা নিষিদ্ধ। এছাড়াও, মানুষের ক্ষতি করতে পারে এমন জিনিসপত্র সংগ্রহ করা বা বহন করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
প্রতিবেশী জেলাগুলি থেকে আসা যানবাহনগুলি দিল্লির সীমান্তে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে চেক করা হবে। যারা লাঠি, ব্যানার বা অন্যান্য জিনিসপত্র বহন করছে তাদের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না।
জনসাধারণের বিশৃঙ্খলা বা অশান্তি সৃষ্টি করতে পারে এমন কোনও উসকানিমূলক বার্তা বলা বা ছড়িয়ে দেওয়া বেআইনি।
বিবাহ, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া, বা অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠান সম্পর্কিত যেকোনও জমায়েত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আগাম অনুমতি নিয়ে করা যাবে। রাজনৈতিক মহল বলছে, শুধু কৃষকরাই নয়, ১৪৪ ধারার অজুহাতে বিরোধীদের জমায়েত, মিটিং-মিছিল বন্ধ করতে চায় কেন্দ্রীয় সরকার। বাংলার সন্দেশখালিতে পরিকল্পিতভাবে অশান্তি তৈরি করতে বিজেপি নেতারা যখন ১৪৪ ধারার বিরুদ্ধে লাগাতার চিৎকার করছেন তখন তাদের সরকার গোটা রাজধানীতেই এক মাস ধরে ১৪৪ ধারা বলবৎ করছে। এর বিরুদ্ধে এখন কী বলবেন বঙ্গ বিজেপির আহাম্মকরা?