প্রতিবেদন : মসনদে কে তা এখনও চূড়ান্ত নয়। পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে কোনও রাজনৈতিক দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। ফলে ত্রিশঙ্কু সংসদে অবধারিতভাবে জোট সরকার গড়তেই হবে। কিন্তু ক্ষমতার ভাগাভাগির বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়। আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও দলই মুখ খোলেনি। নওয়াজ শরিফ ও ইমরান খান— পাকিস্তানের প্রাক্তন দুই প্রধানমন্ত্রীই এবারের নির্বাচনে নিজেদের জয়ের দাবি করেছেন। এমনিতেই রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে পাকিস্তান। নির্বাচনের পর নতুন সরকার গঠন এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
আরও পড়ুন-গৃহযুদ্ধে অশান্ত মায়ানমার, জল মেপে এগোতে চায় বাংলাদেশ সরকার
পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী যিনি হবেন, জাতীয় পরিষদে ১৬৯ জন সদস্যের সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেখাতে হবে তাঁকে। ফলে কোন দল কী শর্তে কার সঙ্গে জোট করবে তা খোলসা হতে এখনও দেরি। পাকিস্তানের সাধারণ পরিষদের আসন ৩৩৬টি। এর মধ্যে ২৬৬টি আসনে সরাসরি নির্বাচন হয়। এবারের নির্বাচনের আগে দুষ্কৃতীদের গুলিতে একজন প্রার্থী নিহত হওয়ায় একটি আসনে ভোট স্থগিত করা হয়েছিল আগেই। আরেকটি আসনে ভোটের ফল স্থগিত করা হয়েছে। বাকি ৭০টি আসন সংরক্ষিত। এর মধ্যে ৬০টি নারীদের ও ১০টি সংখ্যালঘুদের জন্য। নির্বাচনের পর পাকিস্তানে জোট সরকার গঠন নিয়ে লাগাতার আলাপ-আলোচনা চলছে। যদিও ক্ষমতার ভাগাভাগি নিয়ে অচলাবস্থা এখনও কাটেনি।
আরও পড়ুন-পড়ুয়াদের পাশে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন)। পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের ফল অনুসারে, এবারের নির্বাচনে এই দল ৭৫টি আসনে জয় পেয়েছে। অন্যদিকে বিলওয়াল ভুট্টো জারদারির দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) পেয়েছে ৫৪টি আসন। আসনপ্রাপ্তির নিরিখে শীর্ষে রয়েছে ইমরান খানের সমর্থিত নির্দল প্রার্থীরাই। রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটাতে জোট গড়ে ক্ষমতায় যেতে চাইছে পিএমএল-এন ও পিপিপি। আগামী কয়েক দিনে এই দুটি দল ক্ষমতা ভাগাভাগির জন্য সমঝোতায় পৌঁছতে পারে। পাশাপাশি জোট সরকারে যুক্ত হতে পারে মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট-পাকিস্তান (এমকিউএম-পি), জেইউআই-এফ ও আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দল। নতুন জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী পদে দেখা যেতে পারে নওয়াজ শরিফ অথবা তাঁর ভাই শাহবাজ শরিফকে। এ ছাড়া সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদ শরিকদের দেওয়া হতে পারে।
আরও পড়ুন-লুকিয়ে থাকা প্রাচীন শহর
পাকিস্তানে পিএমএল-এন ও পিপিপির জোট নতুন নয়। দুই দল জোট গড়ে পার্লামেন্টের অনাস্থা ভোটে ইমরান খানকে পরাস্ত করেছিল। গত অগাস্ট পর্যন্ত ১৬ মাস পিএমএল-এন ও পিপিপির জোট সরকার দেশ শাসন করেছে। ওই সরকারে শাহবাজ শরিফ প্রধানমন্ত্রী ও বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি বিদেশমন্ত্রী ছিলেন। এবারের ভোটের লড়াইয়ে সবচেয়ে বেশি আসনে জয়ী হয়েছেন নির্দল প্রার্থীরা। তাঁদের প্রায় সবাই জেলবন্দি ইমরান খান ও তাঁর দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) সমর্থক। আইনি প্রতিবন্ধকতায় পিটিআই এবার দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেনি। কৌশল হিসেবে নির্দল দিয়ে লড়াইয়ে নামেন দলটির নেতারা। পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত ফল অনুসারে নির্দলরা জিতেছেন ১০১টি আসনে। পার্লামেন্টে এখন যদি তাঁরা একক ব্লকে বা ছোট কোনও দলে যুক্ত হন, তাহলে সংখ্যাগরিষ্ঠতার অর্জনের জন্য পদক্ষেপ নিতে পারেন। এমনকী প্রধানমন্ত্রী পদেও প্রার্থী দাঁড় করাতে পারেন। এছাড়া জোট গড়ার জন্য অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও আলোচনা করতে পারে নির্দলদের নিয়ে গঠিত ব্লক বা জোট। এর ফলে প্রকারান্তরে ইমরান-সমর্থিত সাংসদদের পাকিস্তানের ক্ষমতার কেন্দ্রে আবার দেখা যাবে। এই পরিস্থিতি বাস্তবায়িত হলে ইমরানের মুক্তির পথও খুলে যাবে। যদিও আইনি বাধা থাকায় ইমরান খান নিজে সরকারের প্রধান হওয়ার লড়াইয়ে শামিল হতে পারবেন না।