আগরতলা : পুরভোটের ঠিক আগেই ত্রিপুরায় ফিরে এল পঞ্চায়েত ভোটের ভয়ঙ্কর স্মৃতি। গেরুয়া সন্ত্রাসে হাড়হিম করা পরিস্থিতি উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে। তৃণমূল-সহ বিরোধী প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকদের হুমকি, ভয় দেখানো, লুঠপাট, বাড়িতে অগ্নিসংযোগ চলছেই। অভিযোগের তির বিজেপির দিকে।
আগামী ২৫ নভেম্বর আগরতলা কর্পোরেশন-সহ ত্রিপুরার ২০টি পুরসভার মোট ৩৩৪টি ওয়ার্ডে নির্বাচন। গত বুধবারই ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। ত্রিপুরা নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, মোট ওয়ার্ডের এক-তৃতীয়াংশ কার্যত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গিয়েছে গেরুয়া শিবির। জেলার ৭টি পুরসভায় ইতিমধ্যেই সংখ্যাগরিষ্ঠ বিজেপি। যার মধ্যে পাঁচটি পুর পরিষদ এবং দু’টি নগর পঞ্চায়েত। তৃণমূলের অভিযোগ, হুমকি দেখিয়ে, সন্ত্রাস ছড়িয়ে তাদের প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করতে বাধ্য করছে বিজেপির গুন্ডারা। তার মধ্যেও বিশাল মিছিল করে আগরতলা পুরনিগমের ৫১ আসনের প্রতিটিতেই তৃণমূল প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। কিন্তু জেলার পুরসভাগুলিতে লাগাম ছাড়া সন্ত্রাস ছড়াচ্ছে বিজেপি।
আরও পড়ুন-ভয়াবহ দূষণের কবলে রাজধানী
আগরতলা কর্পোরেশন-সহ ২০টি পুরসভার মোট ৩৩৪টি ওয়ার্ডেই প্রার্থী দিয়েছে বিজেপি। বামফ্রন্ট মনোনয়ন জমা করেছে ২২৭টি আসনে। এর মধ্যে সিপিএমের প্রার্থী ২১৪ জন। দুর্বল কংগ্রেসও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে ১০১টি ওয়ার্ডে। অন্যদিকে, প্রথমবার ত্রিপুরায় নির্বাচনী লড়াইয়ে নেমে মোট ১২৫টি ওয়ার্ডে মনোনয়নপত্র জমা দিতে পেরেছে তৃণমূল। অন্য জায়গাগুলিতে সন্ত্রাসের বাতাবরণ তৈরি করে তৃণমূল প্রার্থীদের মনোনয়ন জমায় বাধা দেওয়া হয়। যাঁরা গেরুয়া চোখরাঙানি উপেক্ষা করেই মনোনয়ন জমা করেছেন, তাঁদের প্রত্যাহার করার জন্য মিথ্যা মামলা থেকে শুরু করে হামলা, বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, লুঠপাট চলছে। কার্যত রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস কায়েম করে পুরভোটের বৈতরণী পার হতে চান মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব ও তাঁর দল বিজেপি। এমন পরিস্থিতিতে বছর দুই আগের পঞ্চায়েত ভোটের ভয়ঙ্কর স্মৃতি ফের টাটকা হয়ে উঠেছে ত্রিপুরাবাসীর সামনে।
এর আগে বিজেপি রাজ্যে ক্ষমতায় এসেই ২০১৯-এর জুলাই মাসে ত্রিপুরা পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৯৬ শতাংশ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছিল। বাড়ি ভাঙচুর, লুঠপাট, অগ্নিসংযোগ, খুন-জখমের মতো ঘটনাই ছিল বিজেপির প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের মূলমন্ত্র। তৃণমূল-সহ বিরোধীদের অভিযোগ, পঞ্চায়েত ভোটে সন্ত্রাসে নিজেদের রেকর্ড ভাঙার লক্ষ্য নিয়ে পুরভোটে শুরু হয়েছে গেরুয়া তাণ্ডব। আগামী ৮ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষদিন পর্যন্ত এই তাণ্ডব চলবে। প্রশাসন নীরব।
ত্রিপুরা প্রদেশ তৃণমূলের স্টিয়ারিং কমিটির আহ্বায়ক সুবল ভৌমিকের অভিযোগ, খোয়াই, উদয়পুর, বিলোনিয়া ও সাব্রুমে রিটার্নিং অফিসারের দফতর ঘেরাও করে রেখেছিল গেরুয়া বাহিনী। যাতে কেউ মনোনয়নপত্র
জমা দিতে না পারে। কিন্তু এভাবে তৃণমূলকে রোখা যাবে না। মানুষ যদি ভোট দিতে পারেন, তাহলে জোড়াফুলের জয় নিশ্চিত।