রাজকোট, ১৪ ফেব্রুয়ারি : খান্দেরি বললে বাইরের লোক কিছু বুঝবে না। কিন্তু রাজকোটের নতুন স্টেডিয়াম ঠিক এই জায়গায়। খুব নতুন অবশ্য নয়। অনেকগুলো ম্যাচ হয়েছে এখানে। কয়েকদিন আগে রবিচন্দ্রন অশ্বিন বলছিলেন, এখানকার প্রেসবক্স দেখলে তাঁর লর্ডসের কথা মনে পড়ে। দুটোর মধ্যে সাযুজ্য আছে।
একসময় বোর্ড সচিব ছিলেন নিরঞ্জন শাহ। জগমোহন ডালমিয়ার আমলের দুঁদে ক্রিকেট কর্তা। তাঁর সাধের মাঠ এটা। এখানে অনেক রান যেমন হয়, তেমনই পরের দিকে স্পিনাররা টার্ন পায়। এই টার্নার ব্যাপারটা ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টকে ধন্দে রেখেছে। তাহলে কি তিন স্পিনারে যাওয়া যায়? রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও রবীন্দ্র জাদেজা থাকবেন। সঙ্গে কে? কুলদীপ যাদব না লোয়ার অর্ডার ব্যাটিংকে শক্তিশালী করা অলরাউন্ডার অক্ষর প্যাটেল।
আরও পড়ুন-ছন্দে ফিরছে সন্দেশখালি
রাহুল আর জাদেজা দুজনেই এনসিএতে ছিলেন। জাদেজা ফিট ঘোষিত হয়েছেন। এখানে পৌঁছে প্রথমদিনই অনেকক্ষণ নেটে পড়ে ছিলেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন সরফরাজ খান ও ধ্রুব জুরেল। এই দুজনের অভিষেক হতে পারে আজ। যদি সেটা হয়, তাহলে একঝাঁক নতুন মুখ নিয়ে মাঠে নামবেন রোহিত শর্মা। বেন স্টোকসের পোড়খাওয়া দলের সামনে ব্যাপারটা কেমন দাঁড়াবে সেটা অবশ্যই চর্চার বিষয়।
সরফরাজের কপাল খুলছে রাহুলের অনুপস্থিতিতে। বেঙ্গালুরু ব্যাটার বিসিসিআইয়ের কাছে কড়া ধমক খেয়েছেন নিজের বিভ্রান্তিমূলক ব্যাটিং ভিডিও পেশ করার জন্য। যার উপর নির্ভর করে নির্বাচকরা তাঁকে বাকি তিন টেস্টের দলে নিয়েছিলেন। কিন্তু দেখা গেল তিনি ফিট নন। ফলে রাজকোটে রাহুল নেই। সরফরাজ অনেকদিন অপেক্ষায় ছিলেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে রান করেছেন। ফলে এই সুযোগ তাঁর প্রাপ্য ছিল। এদিন নেটে স্থানীয় এক বোলার রোহিতকে বেশ বিপাকে ফেলেছিলেন। তবে হিটম্যান বড় ম্যাচের প্লেয়ার।
এদিকে, জুরেলের কাছেও সুযোগ আসছে বলে খবর। কেএস ভারতের পারফরম্যান্স নির্বাচক ও টিম ম্যানেজমেন্টকে সন্তুষ্ট করতে ব্যর্থ। না তিনি রান করছেন, না উইকেটের পিছনে সপ্রতিভ হচ্ছেন। জায়গাটা ঈশান কিশান হয়তো পেতেন। কিন্তু তিনি বোর্ডের সঙ্গে এমন টক্করে গিয়েছেন যে সবার জন্য নতুন শর্ত আসছে। আইপিএল খেলতে হলে রঞ্জিও খেলতে হবে। ঈশান ঝাড়খণ্ডের হয়ে না নেমে বাকি সব করছেন। বারোদায় হার্দিকদের সঙ্গে রিলায়েন্স মাঠে প্রস্তুতি সেরেছেন। এখন মুম্বইয়ে টুর্নামেন্ট খেলবেন। এদিকে ঝাড়খণ্ড শেষ রঞ্জি ম্যাচে নামছে শুক্রবার।
আরও পড়ুন-মহিলারাই রুখবে বিজেপিকে মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ সাতগাছিয়ার
ইংল্যান্ড অধিনায়ক স্টোকসের এটা ১০০ টেস্ট। এখানে আবার তাঁকে নেটে বল করতেও দেখা গেল। মনে হয় না শেষপর্যন্ত স্টোকস হাতে বল তুলে নেবেন। কিন্তু এই অপশনটা নিশ্চিতভাবে তাঁকে ভাবাচ্ছে। জিমি অ্যান্ডারসন বিশাখাপত্তনমে যে বোলিং করেছেন তাতে মার্ক উডের সঙ্গী হচ্ছেন অনায়াসে। উপমহাদেশে গতির থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হল বলের কারিকুরি। সেটা অ্যান্ডারসনের থেকে কে ভাল জান। উডকে এখানে পায়ে মোটা স্ট্র্যাপ বেঁধে বল করতে দেখা গেল। চোট? খবর নেই। অলি রবিনসনকেও তৈরি রাখা হচ্ছিল। তবে শেষমেশ ইংল্যান্ড প্রথম এগারো ঘোষণা করে দিয়েছে। তাতে অ্যান্ডারসন ও উড দুজনেই আছেন। বাইরে গেলেন শোয়েব বশির।
জ্যাক লিচ আবুধাবি থেকে আর ফেরেননি। ফলে জেনুইন স্পিনার বলতে ছিলেন রেহান আহমেদ ও শোয়েব বশির। এর মধ্যে বশিরকে বাইরে রাখা হচ্ছে। ইংল্যান্ডের অবশ্য তাতে মাথাব্যথার কারণ থাকতে পারে না। জো রুট আছেন। তাঁর হাতে বড় স্পিন আছে। কিন্তু টেস্টে এগারো হাজার রান করা ইংলিশ ব্যাটারের ট্র্যাডিশনাল ব্যাটিং বাজবল নষ্ট করে দিয়েছে বলে অনেকের তোপ। তিনি রিভার্স সুইপ মেরে স্কোরিং শুরু করছেন। ইংল্যান্ডের এক নম্বর ব্যাটার রানেও নেই। আগের টেস্টে শতাধিক রানে হারে বাজবলের উপর যত রাগ গিয়ে পড়েছে রুটের ব্যাটিং স্টাইলের বদল দেখে।
অদ্ভুত এক সন্ধিক্ষণে এই সিরিজ। প্রথম দুটি টেস্টের পর ১-১। রাজকোটে যারা জিতবে, এগিয়ে যাবে। তবে ইংল্যান্ডের গতবারের ভারত সফরের স্মৃতিও বেশ টাটকা। চেন্নাইয়ে প্রথম টেস্ট জিতে তারা সিরিজ হেরেছিল ১-৩-এ। এবার হায়দরাবাদে স্টোকসরা জিতলেও ভারত সমতা ফিরিয়েছে। তাহলে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হবে না তো?