প্রতিবেদন : আজ, রবিবার সন্দেশখালি (Sandeshkhali) যাচ্ছে তৃণমূলের তিন সদস্যের এক প্রতিনিধিদল। মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক ছাড়াও এই প্রতিনিধিদলে রয়েছেন মন্ত্রী সুজিত বসু ও সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিধায়ক হাজি নুরুল। রবিবার তাঁরা সন্দেশখালির বর্তমান পরিস্থিতি খতিয়ে দেখবেন। বিরোধীদের পরিকল্পিত চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র রুখে দিতে প্রস্তুত হচ্ছে সন্দেশখালি। আগামী ৩ মার্চ সেখানে বিশাল জনসভা করবে তৃণমূল। জনজোয়ারে ভাসবে সন্দেশখালি। সেইদিন থাকবেন মন্ত্রী ব্রাত্য বসু, পার্থ ভৌমিক, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, তাপস রায়, নির্মল ঘোষ-সহ অন্য নেতা-নেত্রীরা। এদিকে, সার্বিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে শনিবার সন্দেশখালি যান রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের ৪ সদস্যের এক প্রতিনিধিদল। ছিলেন চেয়ারপার্সন তুলিকা দাস এবং পরামর্শদাতা সুদেষ্ণা রায়।
গ্রেফতার আরও ১ : সন্দেশখালি- কাণ্ডে গ্রেফতার আরও ১। শনিবার সন্ধ্যায় শিবপ্রসাদ হাজরা ওরফে শিবুকেও গ্রেফতার করে ন্যাজাট থানার পুলিশ। আগেই গ্রেফতার হওয়া উত্তম সর্দারের পাশাপাশি শিবুর বিরুদ্ধেও গণধর্ষণের ধারা দিয়েছে পুলিশ। এক মহিলার গোপন জবাববন্দির ভিত্তিতে রাজধর্ম পালন করে গণধর্ষণের ধারা দিয়েছে পুলিশ।
ডিজির সাংবাদিক বৈঠক : রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার সাংবাদিক সম্মেলন করে জানান, সন্দেশখালির অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সন্দেশখালির (Sandeshkhali ) এক মহিলার গোপন জবানবন্দির ভিত্তিতেই মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। ৬ ফেব্রুয়ারির আগে আমরা এই বিষয়ে কোনও অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেতেই তৎক্ষণাৎ কড়া ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ। রাজ্য পুলিশের তরফে ইতিমধ্যেই একটি দল গঠন করা হয়েছে। তারা গ্রামে গিয়ে প্রত্যেক মহিলার সঙ্গে কথা বলে পুরো বিষয়টি জানার চেষ্টা করবেন। পাশাপাশি বিরোধীদের লাগাতার ১৪৪ ধারা জারি প্রসঙ্গে রাজীবের সাফ জবাব, শান্তি বজায় রাখতেই সন্দেশখালির একাধিক জায়গায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। এলাকাভিত্তিক পর্যালোচনা করে তবেই পুলিশ ধীরে ধীরে ১৪৪ ধারা নিয়ন্ত্রণ করবে।
আরও পড়ুন: বীরভূমে মুখ্যমন্ত্রী
এডিজি ও ডিআইজি বদল : দক্ষিণবঙ্গের এডিজি পদে বদল আনা হল। বদল হয়েছে বারাসতের ডিআইজি পদেও। এই দুই পদের পুলিশকর্তাদের নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই পড়ে সন্দেশখালি এলাকা। দক্ষিণবঙ্গের এডিজি পদে ছিলেন সিদ্ধিনাথ গুপ্তা। তাঁর জায়গায় সুপ্রতিম সরকারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সন্দেশখালি এলাকা বারাসত ডিআইজির নিয়ন্ত্রণাধীন। সেই বারাসতের ডিআইজি পদে থাকা সুমিত কুমারের জায়গায় দায়িত্ব পেয়েছেন ভাস্কর মুখোপাধ্যায়।
তৃণমূলের প্রতিক্রিয়া : তৃণমূলের তরফে রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ জানিয়েছেন, শিবুকে গ্রেফতার করে পুলিশ রাজধর্ম পালন করছে। বাম জমানায় রাজধর্ম পালন হত না, বিজেপি রাজ্যগুলিতেও পালন হয় না। পুলিশ অভিযোগের ভিত্তিতে ধারা যোগ করেছে। কিন্তু এতে প্রমাণ হয় না মহিলাদের উপর লাগাতার গণধর্ষণ হয়েছে এবং চাপে পড়ে পুলিশ ধারা যোগ করেছে। সন্দেশখালিতে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু নারী নির্যাতন নিয়ে কুৎসা চলছে। এতদিন সিপিএম, বিজেপি কেন অভিযোগ করল না? লাগাতার গণধর্ষণের ঘটনা বলে মিথ্যাচার করা হচ্ছে। পুলিশ এখন গণধর্ষণের ধারা যোগ করেছে মানেই, চাপের মুখে নতি স্বীকার করেছে তেমনটা নয়। ঘটনা প্রমাণ করতে হবে। একজন মাত্র মহিলা অভিযোগ করেছেন। তদন্তে কেউ দোষী প্রমাণিত হলে তার শাস্তি হবে। ওই জায়গায় সিপিএম, বিজেপি রয়েছে। ওরা কাউকে দিয়ে এটা করছে কিনা সেটাও দেখতে হবে। গোপন জবানবন্দিতে আসলে কী বলা হয়েছে সেটা আমরা কেউ জানি না। পুলিশ রাজধর্ম পালন করেছে, অভিযোগ উঠেছে তাই ধারা দিয়েছে। কিন্তু তার মানে এই নয়, চাপের মুখে পুলিশ মানতে বাধ্য হল।
পার্থ ভৌমিক যা জানালেন : বিজেপি-সিপিএম পরিকল্পিতভাবে সন্দেশখালিকে অশান্ত করতে যে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র করেছে তা প্রতিহত করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। ছন্দে ফিরেছে সন্দেশখালি। শান্ত রয়েছে এলাকা। বিরোধীরা তাকে অশান্ত করতে চাইছে। তা আমরা হতে দেব না। আমরা স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলব। পঞ্চায়েত এলাকাগুলিতে কথা বলব। বিরোধীদের এই নোংরামি চলতে দেব না। সর্বস্তরের মানুষের উপস্থিতিতে সন্দেশখালির জনজোয়ার সেদিন বিজেপির পরিকল্পিত চক্রান্তের জবাব দেবে। সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক, তৃণমূলের বসিরহাট সাংগঠনিক জেলার বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধি মন্ত্রী সুজিত বসু ও বসিরহাট সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা হাড়োয়ার বিধায়ক হাজি নরুল ইসলামের সঙ্গে যোগ দেবেন স্থানীয় বিধায়ক সুকুমার মাহাতোও। ১৪৪ ধারা যেখানে নেই, সেইসব জায়গায় গিয়ে কথা বলবেন প্রতিনিধিরা। পরে শেয়ারা এলাকায় দলীয় পদাধিকারী ও তৃণমূলের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করবেন তাঁরা।