এবার নির্বাচনের আগে কেন্দ্রীয় চক্রান্তে যাঁদের আধারলিঙ্ক কাটা যাচ্ছে, তাঁদের পাশে দাঁড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী (CM Mamata Banerjee)। রবিবার, বীরভূমের সিউড়ির সরকারি পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে তিনি ঘোষণা করলেন, এর জন্যে রাজ্যের প্রকল্পের টাকা পাওয়া বন্ধ হবে না। বিকল্প পদ্ধতিতে প্রাপকদের অনুদান দেবে রাজ্য সরকার। এর জন্য মুখ্যসচিবকে পোর্টাল তৈরির নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। সব সময়ই বাংলার বঞ্চিত মানুষের পাশে থাকেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রের বঞ্চনার শিকার ১০০দিনের কাজের শ্রমিকদের প্রাপ্য দেবে রাজ্য।
লোকসভা নির্বাচনের আগেই দেশে CAA চালু হবে বলে ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ। সেই নিয়ে এদিন কেন্দ্রের মোদি সরকারকে তুলোধনা করেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। একাধিক জেলায় বহু মানুষের আধার কার্ড বাতিল করে দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি অভিযোগ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, লোকসভা নির্বাচনের আগে বাংলার মানুষকে রাজ্যে দেওয়া প্রকল্পের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করতে এবং NRC চালু করতেই কেন্দ্রের এই পদক্ষেপ। সিউড়ির সভা থেকে মমতা বলেন, “আমার কাছে খবর আছে। অনেকের আধার কার্ডের লিঙ্ক কেটে দেওয়া হচ্ছে। জামালপুরে ৫০ জনের আধার লিঙ্ক কেটে দেওয়া হয়েছে। বর্ধমান, বীরভূম, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, উত্তরবঙ্গেও চলছে। প্রথমে বলবে আধার না হলে চোখে আঁধার দেখবে। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট হবে না, কোনও সুযোগ-সুবিধা পাবে না। আর এখন কাউকে জিজ্ঞেস না করে লিঙ্ক কেটে দেওয়া হচ্ছে।”
আরও পড়ুন: অভিষেকের নির্দেশ বিধায়কদের জানালেন পরিষদীয়মন্ত্রী
মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ, ভোটের আগে সাধারণ মানুষ যাতে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার-সহ অন্য প্রকল্পের টাকা না পান, তার জন্যেই এই চক্রান্ত। বাংলার মানুষের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, “আমি পরিষ্কার বলে যাচ্ছি, আধার না থাকলেও আমাদের কোনও প্রকল্প বন্ধ হবে না। নিজেদের কার্ড দিয়ে চালিয়ে যাব। দিল্লি যা করছে, থোঁতা মুখ ভোঁতা করে দেব। আধার কার্ড, রেশন কার্ড, স্মার্ট কার্ড, কোভিড কার্ড, জন্মের কার্ড, এথ কার্ড কি গলায় মালা করে রাখবেন? তার পর আবার কাউকে জিজ্ঞেস না করে বাতিল করে দিচ্ছে। বাংলার মানুষকে বলব, ভয় পাবেন না। আমি আছি। যদি দেখি এর মধ্যে ছলনা আছে, বাংলার একটি প্রকল্পকেও আমি আধার সংযুক্ত হতে দেব না।”
দেশে NRC চালু করতে নতুন করে চক্রান্ত শুরু হয়েছে বলে এদিন অভিযোগ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, এক মাসের মধ্যে নির্বাচনের ঘোষণা হবে। তার আগে ভোটের পরিচয়পত্র কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। মুখ্যসচিব বিপি গোপালিকাকে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দেন, “কার কার কার্ড বাতিল হচ্ছে দেখুন। একটি পোর্টাল খুলুন দেখি। যাঁদের কার্ড বাতিল হচ্ছে, আমাদের জানান। আমরা বিকল্প ব্যবস্থা করে দেব। ব্যাঙ্ক যদি আধার ছাড়়া হবে না বলে,তাহলে আধার ছাড়াই চলব। আমাদেরও সমবায় ব্যাঙ্ক রয়েছে। মানুষ কোনও সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন না, আমি ১০০ শতাংশ গ্যারান্টি দিলাম।”
CAA প্রসঙ্গেও এদিন মোদি সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, “নির্বাচন এলেই ক্যা ক্যা বলে চিৎকার করে। জানেন CAA হলে কী হবে? পাঁচ বছরের জন্য সব বাতিল হয়ে যাবে, ভোটার তালিকা-সহ সব তালিকা থেকে নাম বাদ যাবে। সব অধিকার চলে যাবে আপনার। পাঁচ বছর পর নাগরিক হবেন। কিন্তু আপনারা তো ইতিমধ্যেই নাগরিক? কেন আবার নিতে হবে? কী ভাবে ওরা? শরীরকে কেটে দু’ভাগ করে চলে না? আমি বলি, খ্যাপা, মুণ্ডু গেলে খাবি কী? হৃদয় আমাদের একটাই, সেটাকে ভাগ করলে চলবে কী করে?”