প্রতিবেদন : কেন্দ্রের প্রস্তাব খারিজ করে দিল্লি অভিযানের সিদ্ধান্তে অনড় রইলেন কৃষকরা। ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নিয়ে আইনি সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি মানতে নারাজ কেন্দ্র। সরকারের দেওয়া বিকল্প প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার জন্য দু’দিন কর্মসূচি স্থগিত রাখার ঘোষণা করা হয়। শেষপর্যন্ত কেন্দ্রের প্রস্তাব খারিজ করল কৃষক সংগঠনগুলি। জানিয়ে দেওয়া হল, বুধবার থেকে নতুন উদ্যমে ফের ‘দিল্লি চলো’ অভিযানে শামিল হবেন দেশের কৃষকরা। পাঞ্জাব-হরিয়ানা সীমান্তে শম্ভু এবং খানৌরিতে দুই হাজারের বেশি ট্রাক্টর একত্রিত করে দিল্লি চলোর ডাক দেওয়া হয়েছে। লোকসভা ভোটের মুখে অন্নদাতাদের এই ক্ষোভে রক্তচাপ বাড়ছে মোদি সরকারের। দাবি আদায়ে বুধবার সকালেই দিল্লি অভিমুখে মিছিল করবেন হাজার হাজার কৃষক।
আরও পড়ুন-শাহকে ‘খুনি’ বলায় গ্রেফতার রাহুল, আধঘণ্টায় জামিন কোর্টে
আন্দোলনের চাপে রবিবার গভীর রাত পর্যন্ত কৃষকদের সঙ্গে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল। চতুর্থ দফার ওই বৈঠকে আন্দোলনকারী কৃষকদের আগামী পাঁচ বছরের জন্য শস্যের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (এমএসপি) নিয়ে কেন্দ্র একটি প্রস্তাব দেয়। সেই প্রস্তাব খতিয়ে দেখার জন্য ১৯ ও ২০ ফেব্রুয়ারি সময় চান কৃষকরা। তবে সমস্যার সমাধান না হলে এবং দাবি পূরণ না হলে ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে ফের অভিযান শুরু হবে বলে আগেই জানিয়েছিলেন তাঁরা। শেষ পর্যন্ত কৃষকদের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, মোদি সরকারের পক্ষ থেকে যে প্রস্তাব এসেছে তাতে তাঁদের কোনও লাভ হবে না। তাই প্রস্তাব খারিজ করা হচ্ছে। ফলে বুধবার থেকে থেকে ফের কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হচ্ছে। জানিয়েছে আন্দোলনরত কৃষক সংগঠনগুলি।
আরও পড়ুন-সন্দেশখালিতে বিরোধীদের নাটক, প্ররোচনা; পুলিশকে ‘খালিস্তানি’ বলল গদ্দার, প্রতিবাদে শিখ-ধরনা
প্রসঙ্গত, কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছিল, সরকারি সংস্থাগুলি আগামী পাঁচ বছর ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে ফসল কেনার জন্য কৃষকদের সঙ্গে চুক্তি করবে। ফসল কেনার কোনও ঊর্ধ্বসীমা থাকবে না। রবিবারের বৈঠকের পর নিজেদের মধ্যে আলোচনার জন্য দু’দিন সময় চায় কৃষক সংগঠনগুলি। এরপর সোমবার রাতে কৃষক সংগঠনগুলি ২৩টি ফসলের উপরই এমএসপি-র দাবি জানিয়েছে। পাঞ্জাব-হরিয়ানার শম্ভু সীমান্তে সম্মিলিত কিষান মোর্চা এবং কিষান মজদুর মোর্চার নেতা সারওয়ান সিং পান্ধের সাংবাদিক সম্মেলন করে জানিয়ে দিয়েছেন, কৃষকদের কোনও সংগঠনই সরকারের প্রস্তাব গ্রাহ্য করছে না। মূল দাবি এড়িয়ে কেন্দ্র যে প্রস্তাব দিয়েছে তা অন্নদাতারা খারিজ করছে। তিনি জানান, এই মুহূর্তে সরকারের সঙ্গে আর আলোচনার অবকাশ ও প্রস্তাব কোনওটাই নেই। আলোচনার জন্যই ‘দিল্লি চলো’ অভিযান বন্ধ রাখা হয়েছিল। বুধবার থেকে সেই অভিযান নতুন করে শুরু হবে। পাশাপাশি তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী একদিনের সংসদ অধিবেশন ডেকে এমএসপি নিয়ে আইন করতে পারেন। সমস্ত বিরোধী দলেরও এব্যাপারে অবস্থান স্পষ্ট করা উচিত। ইতিমধ্যেই তৃণমূল কংগ্রেস, আপ, কংগ্রেস-সহ একাধিক বিরোধী দল কৃষক আন্দোলনকে সমর্থন করেছে।
আরও পড়ুন-মহিলার গোপন জবানবন্দি, পুলিশ হেফাজতে সেই যুবক
আন্দোলনকারী আরেক শীর্ষ কৃষক নেতা জগজিৎ সিং দাল্লেওয়াল বলেন, সরকার পাঁচ বছরের জন্য মাত্র দু–তিনটি ফসলের এমএসপি দিতে চাইছে। অথচ আমাদের দাবি ২৩টি ফসলের এমএসপির আইনি বৈধতা। এর অর্থ পরিষ্কার। কেন্দ্রীয় সরকার চায় ডাল, ভুট্টা ও তুলার জন্য এমএসপি দিয়ে বাকি শস্য চাষ করা কৃষকদের ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিতে। দাল্লেওয়াল বলেন, সরকার বছরে বিদেশ থেকে ১ লক্ষ ৭৫ হাজার কোটি টাকার পাম তেল আমদানি করে। ওই তেল স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। কৃষকদের ওই টাকা দিলে দেশেই তাঁরা স্বাস্থ্যকর তৈলবীজ উৎপাদন করতে পারেন। সেজন্য প্রয়োজন তৈলবীজের এমএসপি। তিনি বলেন, এগ্রিকালচারাল প্রাইজ কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান প্রকাশ কামারডি জানিয়েছেন, সব ফসলের জন্য এমএসপি ধার্য হলে সরকারকে বছরে মাত্র ১ লক্ষ ৭৫ হাজার কোটি টাকা খরচ করতে হবে। এরপরেও কেন্দ্রর এত অনীহা কিসের?
আরও পড়ুন-১০০ দিনের বকেয়া মেটাতে এবার টাস্কফোর্স গঠন রাজ্যের
প্রসঙ্গত, সমস্ত শস্যের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য প্রদান-সহ বিভিন্ন দাবিতে ফের রাস্তায় নেমেছেন কৃষকরা। সহায়ক মূল্যের পাশাপাশি কৃষিঋণ মকুব, স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করা, কৃষক ও কৃষি শ্রমিকদের পেনশনের ব্যবস্থা করা এবং আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশের মামলা প্রত্যাহারের দাবিও জানিয়েছেন কৃষকরা। বর্তমানে পাঞ্জাব ও হরিয়ানার মধ্যবর্তী শম্ভু ও খানৌরি সীমানায় অবস্থান করছেন তাঁরা। আর কৃষকদের রুখতে ইতিমধ্যেই দিল্লিতে ১৫ মার্চ পর্যন্ত ১৪৪ ধারা বলবৎ করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের আওতায় থাকা দিল্লি পুলিশ।