প্রতিবেদন : বোঝা গেল আসলে তিনি ছিলেন মুখোশধারী। নিরপেক্ষতার ভান করে ভারতীয় জনতা পার্টিরই প্রতিনিধিত্ব করছিলেন এতদিন। বিচারব্যবস্থাকে কলুষিত করে যেসব মামলায় রায় দিয়েছিলেন তা ছিল রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট। এভাবেই সদ্যপ্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের যাবতীয় কুৎসার পাল্টা জবাব দিল তৃণমূল কংগ্রেস। ইস্তফার পরে সাংবাদিক বৈঠক করেন তৃণমূলের বিরুদ্ধে। অযাচিতভাবে কুৎসা করেছেন অভিজিৎ।
আরও পড়ুন-তল্লাশির নামে আটকে রাখতে পারবে না ইডি, পাঞ্জাব–হরিয়ানা হাইকোর্টের নির্দেশ
আসলে ‘আপাতত’ বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন বলে তাকে ধোয়া তুলসীপাতার মতো ব্যাখ্যা করেছেন। আর তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে কুৎসা করেছেন। মঙ্গলবার বিকেলে তৃণমূল ভবনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে তুলোধোনা করেন বর্ষীয়ান আইনজীবী ও সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কেও এদিন ব্যক্তিগত কুরুচিকর আক্রমণ করেছেন অভিজিৎ। তারও জবাব দিয়েছেন তিনি। আমরা অনেকদিন ধরেই বলছিলাম অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট। আজ তা প্রমাণিত। ওঁর বেশিরভাগ মামলাই উচ্চআদালতে খারিজ হয়ে গিয়েছে, অথবা রায় বদলে গিয়েছে। কল্যাণের তোপ, অভিজিৎ বিচারব্যস্থার কলঙ্ক। বিচারব্যবস্থাকে উনি কলুষিত করেছেন। যেসব রায় দিয়েছেন তা অবিলম্বে বাতিল করা দরকার। কারণ সেগুলি পক্ষপাতদুষ্ট। বিচারপতির চেয়ারের সুযোগ নিয়ে যা ইচ্ছে তাই করেছেন। যাকে যা খুশি তাই করেছেন। পাড়ার মস্তানের মতো আচরণ করেছেন। সংযোজন কল্যাণের। এরপরেই তীব্র কটাক্ষে অভিজিৎকে খরমুজ বলে আক্রমণ করেন কল্যাণ। তিনি বলেন, অভিজিৎ ওপরে লাল ভিতরে গেরুয়া। ৫৬ বছর বয়সে এসে ওঁর মনে হয়েছে বিজেপি ভাল আর বাকি সব খারাপ। আসলে এতদিন বিজেপি-সিপিএমের ব্রিফিংয়ে কাজ করেছেন। এবং সমস্ত রাজনৈতিক ফায়দা লুটেছেন। এমনকী মিডিয়ার লোকেদেরও ধমকাতে ছাড়েননি। কল্যাণের তোপ, ২০১৭ সালে উনি বিচারপতি হন। তার আগে কোনওদিন সিনিয়র অ্যাডভোকেটও ছিলেন না। কারণ কলকাতা হাইকোর্ট কোনওদিন ওঁকে যোগ্যই মনে করেনি। আমি ১৯৮১ সাল থেকে এই পেশায় আছি। উনি যে কোনও প্ল্যাটফর্মে এসে ৫ পাতার একটি জাজমেন্ট দিন। বোঝা যাবে উনি কতবড় বিচারপতি ছিলেন। চ্যালেঞ্জ কল্যাণের। তাঁর কটাক্ষ রাজ্য সরকারের দু’-একটি মামলা আর মোটর ভেহিকলসের মামলা ছাড়া আর কোনও মামলাই পেতেন না অভিজিৎ। সিপিএমের দয়ায় এসএসসির আইনজীবী ছিলেন। সিপিএম থেকে সব সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন। এখন বিজেপি থেকেও নেবেন।
আরও পড়ুন-এসবিআইকে ঢাল করে তথ্য লুকোতে চায় বিজেপি
কুণাল ঘোষ বলেন, তৃণমূল কংগ্রেস যে সঠিক লোককেই আক্রমণ করেছিল সেটা আজ প্রমাণিত হল। উনি রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে রায় ও পর্যবেক্ষণের নামে নিজের পলিটিক্যাল মার্কেটিং করেছেন। ‘আপাতত’ বিজেপিতে যাবেন বলেছেন। কারণ তিনি নিজেই সন্ধিহান এই দলটি সম্পর্কে। গদ্দারের কাগজে মুড়ে টাকা নেওয়ার কথা উল্লেখ করে কুণাল বলেন, অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এখন ওকে ভগবান মনে হচ্ছে। কাগজে টাকা ছিল কি না বুঝতে পারছেন না। যার বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের এফআইআর খাতায় নাম রয়েছে। রাজনৈতিক ক্ষমতার লোভে ওই দলটির সঙ্গে আপস করছেন।
তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে যেসব মন্তব্য করেছেন তা উল্লেখ করে কুণাল বলেন, যার ভিতরে এত বিষ তিনি কী করে সঠিক বিচার করবেন? বিচারের ক্ষেত্রে তার প্রভাব পড়েছে। তাঁর সংযোজন, অভিষেক এই অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের কার্যকলাপ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলা করেছেন। যা এখনও বিচারাধীন রয়েছে। প্রার্থী হওয়ার সময় একটি এফিডেফিট দিতে হয়। সেখানে ক্রিমিনাল কেস আছে কি না সেটি দিতে হয়। এই বাংলায় এবং গোটা দেশে বিজেপির প্রার্থীরা যখন জানাবেন তাঁদের নামে ক্রিমিনাল কেস রয়েছে, তখন অভিজিৎ বলবেন তো এই দলটা করব না? এই দলটা ক্রিমিনালের দল। তোপ কুণালের।
আরও পড়ুন-খিদেয় কেঁদে মরে ভারতের শিশুরা, তবু নির্বিকার মোদি সরকার
কল্যাণ বলেন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে এত ভয় পায় বলেই তাঁর বিরুদ্ধে ইডি-সিবিআই-সহ বড় বড় নেতারাও পিছনে লেগে আছে। ওকে দেখে আমার মুলায়ম সিং যাদব, শরদ পাওয়ারদের কথা মনে পড়ে।