সিজন চেঞ্জের (season change fever) সময় ঘরে ঘরে অসুখ বাড়ছে। জ্বর, সর্দি, হাঁচি, কাশি তো আছেই। এর সঙ্গে বদহজম, অম্বল, গ্যাস, পেটব্যথা, গ্যাস থেকে অনেক সময় প্রচণ্ড মাথাব্যথা হয়। ঠান্ডা লাগার ফলে হয় কানে ব্যথাও। চিকিৎসকের কাছে ছোটার আগে ঘরে হাতের কাছে থাকা মা-ঠাকুমার টোটকা দিয়েই পেয়ে যেতে পারেন অর্ধেক সমস্যার সমাধান।
জ্বর কমানোর টোটকা
এক চা-চামচ মধু, অর্ধেক লেবুর রস ও এককাপ গরম জলে মিশিয়ে দিনে দুবার খান। মধুতে রয়েছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান, যা শরীরের ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে। এর ফলে ভাইরাল জ্বর প্রশমিত হয়। সঙ্গে লেবুর রসে রয়েছে ভিটামিন-সি যা ইমিউনিটি সিস্টেমকে ইনফেকশনের বিরুদ্ধে লড়তে সহায়তা করে। সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে জল খান।
সর্দি-হাঁচি-কাশির টোটকা
সর্দি-হাঁচি-কাশির সমস্যায় মধু ও তুলসীপাতা মা ঠাকুমার বহু পুরনো টোটকা। এতে গলার কফ পরিষ্কার হয় ঝটপট। লিকার চা করুন আদার কুচি দিয়ে। ভাল করে ফোটান। ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে নিন। কয়েক ফোঁটা লেবুর রস দিন। কাশিতে দারুণ কাজে দেবে। রসুন তাওয়ায় সেঁকে কাপড়ে মুড়ে নাকে গন্ধ নিন, হাঁচিতে আরাম পাবেন।
গলাব্যথার টোটকা
গলাব্যথা উপশমের জন্য নুন দেওয়া গরম জলে গার্গল করুন। সকালে এবং রাতে। গলার খুসখুসে ভাব কেটে যাবে। ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। তাই আমলকী বা লেবুর মতো ফল খান। একটি পাত্রে আদা, কাঁচাহলুদ, গোলমরিচ, তেজপাতা, লবঙ্গ আর মেথি একসঙ্গে ভাল করে ফুটিয়ে নিন। জল ফুটে অর্ধেক হয়ে গেলে নামিয়ে নিন। এরপর ঠান্ডা করে অর্ধেক পাতিলেবুর রস মিশিয়ে পান করুন।
পেটব্যথার টোটকা
যে কোনও পেট ব্যথায় জোয়ান অব্যর্থ। এক চামচ জোয়ান সরাসরি মুখে পুরে দিন। কিংবা সম পরিমাণ জোয়ান এবং এক চিমটে বিট নুন একসঙ্গে মিশিয়ে তা জল দিয়ে গিলে নিন। উপকার পাবেন। জিরে পেটে ব্যথায় খুব কার্যকরী দাওয়াই। জিরে ভেজানো জল খান। কোষ্ঠকাঠিন্য, পেট ফাঁপা কমবে। পেটে ব্যথার সমস্যায় এক টুকরো আদা মুখে পুরে চুষে খেতে পারেন কিংবা আদা জল দিয়ে গিলে নিলেও ঝটপট উপকার পাওয়া যায়। বমি বা বমি-বমি ভাব কমাবে আদা। যাঁরা রোজ গ্যাস-অ্যাসিডিটিতে কষ্ট পান তাঁরা মৌরি খান বা মৌরি ভেজানো জল খান।
কানে ব্যথার টোটকা
কানে ব্যথা সারাতে দারুণ কাজ করে রসুন। এছাড়াও রসুন যে কোনও রকম ব্যথা-বেদনা উপশমে ভাল কাজ করে। দুই টেবিল চামচ তিলের তেলের মধ্যে এক চা-চামচ থেঁতো করা রসুন দিয়ে ফুটিয়ে নিন। ঠান্ডা হলে দুই থেকে তিন ফোঁটা কানে ঢালুন। পেঁয়াজের রস গরম করে দুই থেকে তিন ফোঁটা কানে ঢালতে পারেন। অথবা পেঁয়াজ থেঁতো করে পাতলা কাপড়ে জড়িয়ে কানে চেপে ধরে থাকুন। যে কোনও ব্যথায় গরম সেঁক দিলে আরাম লাগবে। পুদিনা পাতার রস ড্রপারে করে নিয়ে কানে দিতে পারেন। তুলসী পাতা বেটে রস করে দিনে দু’বার তিন থেকে চার ফোঁটা কানে ঢালুন। নিমপাতার রস বের করে ড্রপার করে কানে দিন কয়েক ফোঁটা।
আরও পড়ুন- বিমান উড়তেই অঘটন, অল্পের জন্য প্রাণ বাঁচল ২৩৫ যাত্রীর
মাথাব্যথার টোটকা
শরীরে জলের ঘাটতি হলে অনেক সমস্যা তৈরি হয়। এই পরিস্থিতিতে হতে পারে ডিহাইড্রেশন। এটা মাথাব্যথার অন্যতম কারণ। তাই অনেকটা পরিমাণে জলপান করুন। দেখবেন কমছে সমস্যা। এছাড়া এমন ফল খান যার মধ্যে তরলের পরিমাণ রয়েছে বেশি। এভাবেই সমস্যা দূর করতে পারবেন। শরীরে ম্যাগনেশিয়ামের ঘাটতি হলে মাথাব্যথা হয়। তাই এই খনিজযুক্ত খাবার খান।
আয়ুর্বেদিক ওষুধ এবং সহজ ঘরোয়া চিকিৎসা
সিজন চেঞ্জের সময় অসুখবিসুখ সারাতে কী ভূমিকা রয়েছে আয়ুর্বেদের? জানালেন বিশিষ্ট আয়ুর্বেদ চিকিৎসক প্রদ্যোতবিকাশ করমহাপাত্র
সিজন চেঞ্জের (season change fever) সময় সর্দি-কাশি-হাঁচি, জ্বর, মাথার যন্ত্রণা, গা-হাত-পা ব্যথা ইত্যাদি সমস্যা প্রায় ঘরে ঘরে লেগে রয়েছে। এই ক্ষেত্রে আয়ুর্বেদের রয়েছে বিশেষ ভূমিকা। এতে কিছু ঘরোয়া গাছগাছড়া বা কিচেনের কিছু কিছু সামগ্রী ব্যবহার করতে পারি। সিজন চেঞ্জের সময় কফ দোষের প্রাদুর্ভাব ঘটে। যার ফলে এই লক্ষণগুলো দেখা যায়। আমরা সাধারণত পিপুল, যষ্ঠিমধু, তালিসপত্র, বংশলোচন, শুঁঠ, মরিচ, কালো জিরা ইত্যাদি গাছগাছড়া বা ভেষজ সামগ্রী দিয়ে চিকিৎসা করতে পারি। মাথার যন্ত্রণা বা সাইনাস জ্যাম হলে নাকের মধ্যে পরিশুদ্ধ সরষের তেল বা তিল তেল একফোঁটা করে দিনে দু’বার দেওয়া যায়।
যদি খুব কাশি হয়, তাহলে তালিশপত্র এবং শুঁঠ-পিপল-মরিচ চূর্ণ করে হাফ চামচ করে দু’বার মধুর সঙ্গে খেলে কাশি কমে যাবে। গায়ে হাতে ব্যথা এবং তার সঙ্গে জ্বর হলে জ্বরনাশক ওষুধ দিতে হবে। যেমন, লক্ষ্মীবিলাস রস, রামবানৎরস, মৃত্যুঞ্জয় রস ইত্যাদি ১২৫ মিলিগ্রাম করে দু-বার বা ২৫০ মিলিগ্রাম করে দু’বার গরমজল-সহ খেলে উপকার পাওয়া যাবে। কাশির সঙ্গে বুকে কফ জমলে বাসক পাতা ফুটিয়ে তার মধ্যে পিপুল চূর্ণ দিয়ে খেতে দিলে কাশি কমে যায়, কফ দূর হয়ে যায়।
সিজন চেঞ্জের (season change fever) সময় অনেকের পেট ফাঁপা, ব্যথা হয়। তার জন্য হরীতকী, শুঁঠ, জোয়ান ইত্যাদি ভেষজ সামগ্রী সমান মাত্রায় গুঁড়িয়ে ৩ গ্রাম করে দু’বার গরম জল দিয়ে খাওয়ালে উপকার পাওয়া যায়। বাচ্চাদের জন্য ৫০০ মিলিগ্রাম থেকে ১ গ্রাম গরম জল-সহ খাওয়ানো যায়। সেক্ষেত্রে পায়খানা পরিষ্কার হয়, পেটে গ্যাসও জমে না, অম্বল বা পেটভার কমে যেতে পারে।
বসন্তকাল এলে জলবসন্ত বা হাম ইত্যাদি রোগেরও প্রাদুর্ভাব ঘটে। এই ধরনের রোগ যাতে না হয় তার জন্য প্রতিদিন সকালে দুটো করে নিমপাতা আর একটু করে কাঁচাহলুদ চিবিয়ে খেতে হবে। এটা জলবসন্ত বা হামের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। জলবসন্ত বা হাম হলে রোগীকে আইসোলেট করে রাখতে হবে। ঘরে ধুনো দিতে হবে। রোগীকে দিতে হবে হালকা সহজপাচ্য খাবার। এই সময় সর্দি-কাশি, জ্বর, নিউমোনিয়াও হতে পারে। তখন নিতে হবে বিশেষ কেয়ার। দিতে হবে উপযুক্ত প্রতিষেধক। তেজপাতা, আদার শুঁঠ, এলাচ ইত্যাদি কিচেনের সামগ্রী এই ক্ষেত্রে যথেষ্ট কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
গলাব্যথা একটা বড় সমস্যা। এই ক্ষেত্রে যষ্টিমধুকে টুকরো টুকরো করে চুষতে দেওয়া যেতে পারে। তাতে গলা ধরা ছেড়ে যাবে। গলা পরিষ্কার হয়ে যাবে। এছাড়া গার্গল করার জন্য গরম জলে দেওয়া যায় লবঙ্গের তেল, গোলমরিচের গুঁড়ো, পিপুলের গুঁড়ো। তাতে রোগী আরাম পেতে পারে। এই সময় অনেকের মাড়ি ফুলে যায়, তার জন্য খদির বটি চুষতে দিতে হবে। গলা খুসখুস, কাশি, গলা ধরে যাওয়ার ক্ষেত্রেও এটা খুব কাজে দেয়। তালিশাদি চূর্ণ মধুর সঙ্গে খেলে কাশি কমে। শ্বাসকষ্ট হলে শ্বাসকুঠার রস নামের ওষুধ ২৫০ মিলিগ্রাম করে দিনে দু’বার গরম জল সহ দেওয়া যায়। বাচ্চাদের কাশি হলে তালমিছরি দারুণ উপকারী। আয়ুর্বেদের মাধ্যমে ঘরোয়া ভাবে মানুষের জ্বর-সর্দি-কাশি ইত্যাদি রোগের চিকিৎসা হয়। এই সহজ চিকিৎসা পদ্ধতি এবং ওষুধ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন।