বিধানসভায় সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের স্মৃতিচারণায় স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন,”সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মত মানুষ গণতন্ত্রে বিরল। সুব্রত মুখোপাধ্যায় বিধানসভায় খুবই সিরিয়াস থাকতেন। তাঁর মতামত অনেক সময়ই নিয়েছি। তিনি যে দফতরের মন্ত্রী সে বিষয়ে অনেক বলার ছিল। সময় কম দিয়েছিলাম বলে রেগে গিয়েছিল। সুব্রত দা মোবাইল ফোন বন্ধ করতে জানত না। কখনও একে ওকে ডেকে মোবাইল বন্ধ করতে বলতেন। মাঝেমধ্যেই এমন সব মন্তব্য করতেন না হেসে পারতাম না৷ বিধানসভায় অনেকেই বেশি বলে ফেলেন। তিনি কখনও এটা করতেন না। বিধানসভায় অনেক কিছু তাঁর কাছ থেকে শেখার ছিল।”
আরও পড়ুন-“সুব্রতদাকে নিয়ে আজকে কিছু বলতে হবে ভাবিনি”, পঞ্চায়েত মন্ত্রীর স্মৃতিচারণায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়
বিধানসভায় সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে শোক প্রস্তাবে বলতে গিয়ে কেঁদে ফেললেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “৬০ এর দশকে ছাত্র পরিষদ ও কংগ্রেসের মুখ হয়ে দাঁড়িয়েছিল প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি ও সুব্রত মুখোপাধ্যায়। মহাজাতি সদন তীর্থ ক্ষেত্র ছিল। বহু লড়াই একসঙ্গে করেছি। বালিগঞ্জের রেললাইনের ওপারে যাওয়ার উপায় ছিল না। আমরা যেতাম সুব্রতদার হয়ে। সেই সময় বলা হত কংগ্রেসকে প্রিয়- সুব্রত ক্ষমতায় এনেছে। মনোমালিন্যও হয়েছে কতবার। মোহনবাগান অন্তপ্রাণ ছিলেন। আমি ৩ মিনিট, সুব্রত ১০ মিনিট বক্তৃতা করে দার্জিলিং চলে গেলাম খেলা দেখতে। আজ খারাপ লাগছে। যে কোনও বিষয়ে টানা বলতে পারত। মজা করত। এই বিধানসভায় কত ঘটনা মনে পড়ছে। রাত একটায় ফোন করে বলত শোভন ঘুমোচ্ছিস। আমি বললাম না ফুটবল খেলছি। বলল একটা গল্প বলব বলে ফোন করেছি। ছন্দবাণী আমার প্রিয়। ভগবান ওকে শক্তি দিক।”
অশোক দেব বলেন, “সুব্রত এই নামটা মানেই আন্দোলন। খুব একগুঁয়ে মানুষ ছিলেন। একসঙ্গে বহু আন্দোলন করেছি। একজন অভিভাবককে হারালাম।”
ফিরহাদ হাকিম বলেন, “আজ এমন একজনকে নিয়ে আলোচনা করছি যাকে খুব ছোট থেকে দেখেছি। সুব্রতদাকে দেখতে বিধানসভায় আসতাম। সুব্রতদাকে দেখে হিরো মনে হতো। উত্তম কুমারকে দেখিনি কিন্তু সুব্রতদাকে দেখে আমার উত্তম কুমার মনে হত। মিনি বাসে করে যেতাম তাঁকে দেখতে। যখন আমি, অরূপ কাউন্সিলর হলাম তখন সুব্রত দা মেয়র। কিন্তু কোনওদিন বুঝতে দেননি তিনি কত বড় মাপের মানুষ। সুব্রতদা নেই ভাবতে পারছি না। বিধানসভায় সব জায়গায় সুব্রতদা রয়েছেন। যতদিন বাঁচব এই স্মৃতি নিয়েই বাঁচব।”
চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন,”যে কাজের জন্য এখানে বলতে হচ্ছে সেটা কোনওদিন করতে হবে ভাবিনি। বিধানসভায় এসে সুব্রতদার আসন খালি এটা দেখতে হবে এটা কল্পনাও করিনি। সুব্রতদা অনেক কাজের মধ্যে দিয়ে মানুষের পাশে থেকেছেন। সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গেই তাঁর সখ্যতা ছিল। আমি যে দুর্গাপুজোর সঙ্গে জড়িত তা সুব্রতদার বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে। যে সাহায্য তিনি করেছেন ভুলি কী করে। ছাত্র রাজনীতি থেকে সুব্রতদাকে অনুসরণ করেছি। জীবন তার মতো চলবে শুধু এই আসনটা শূন্য হয়ে গেল।”
মানস ভুঁইয়ার কথায়,”সুব্রত মুখোপাধ্যায় শুধু একটা নাম নয়। একটা সময়। নকশাল আন্দোলনের উত্তাল সময়ে মেডিকেল কলেজে কী সব কাণ্ড ঘটেছে। মহাজাতি সদনে যেতাম মাঝেমধ্যে। দেখতাম প্রিয়, সুব্রত চা বানাচ্ছে। বললাম ছাত্র পরিষদ করব। সুব্রতদা বলল সত্যি করবি। ৮০ ভাগ জুড়ে আমার ভিতর সুব্রতদা রয়েছে। বাবা মারা গেল আমার। খবর দিতে পারিনি। কোথা থেকে থবর পেয়ে বাড়িতে বৌদিকে নিয়ে হাজির। মা মারা যাওয়ার সময়েও তাই। বুকে আগলে রাখত। জড়িয়ে রাখত। রাজনীতির ঊর্ধ্বে সম্পর্ক ছিল। দাদা- ভাই। বিরোধী দলের ভূমিকা কী হবে তা সুব্রত দা শিখিয়েছে। বাংলার রাজনীতিতে সুব্রতদাকে বাদ দিয়ে কোনও রিসার্চ- আলোচনা-ইতিহাস কোনও কিছুই লেখা যাবে না। স্পিকার মহোদয়কে বলব বিশেষ অনুষ্ঠান বা কিছু করা যায়ন কি না দেখবেন।”
আরও পড়ুন-“মমতা বড় মনের মানুষ”, দলনেত্রীর প্রশংসায় রেজ্জাক মোল্লা
সুব্রত সাহা বলেন, “যে মানুষ টা দু’দিন আগেও ছিলেন আজ নেই ভাবতে পারছি না। যেদিন হাসপাতালে দেখতে গেলাম জিজ্ঞেস করলেন মা কেমন আছেন। সুব্রতদাকে নিয়ে গিয়ে মুর্শিদাবাদের গ্রামে গ্রামে মিটিং করেছি। জিপ জোগাড় করেছি। তেলের পয়সা নেই। সুব্রতদা বুঝতে পেরে নিজের পকেট থেকে টাকা বের করে দিলেন। এই হচ্ছে সুব্রতদা। আন্দোলন করতে গিয়ে কতবার লালবাজারের সেন্ট্রাল লকআপে কাটিয়েছি। সুব্রত দা ছিলেন আমাদের প্রাণের স্পদন। সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে বাদ দিয়ে বাংলার ছাত্র রাজনীতির ইতিহাস লেখা যাবে না। ছাত্র আন্দোলনকে এক অন্য মাত্রা দিয়েছেন। সফল মন্ত্রী। যেখানেই তিনি কাজ করেছেন সফল হয়েছেন।”