বাড়ছে গরম (Summer)। এই সময় সবচেয়ে জরুরি শরীরকে হাইড্রেটেড রাখা। জল মানে শুধু পানীয় জল এমন নয়, এই সময় যে কোনও লিক্যুইডই শরীরের জন্য খুব উপকারী। কিন্তু কতটা জল খাব তা নিয়ে রয়েছে অনেক কনফিউশন। কেউ বলছেন ৮ গ্লাস, কেউ ১০ গ্লাস। আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাস, মূত্র, ঘাম ইত্যাদির মাধ্যমে প্রতিনিয়ত শরীর থেকে জল বেরিয়ে যায়। গরমে যেটা আরও বাড়ে। তাই শরীরে জলের প্রয়োজন সবার এক নয়। গবেষণা বলছে মোটামুটিভাবে একজন স্বাস্থ্যকর প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি ৩.৭ লিটার ও প্রাপ্তবয়স্ক মহিলার ২.৭ লিটার জল পান করা উচিত। এর মধ্যেই কিন্তু অন্যান্য পানীয় এবং খাদ্য থেকে প্রাপ্ত তরলও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। কিন্তু এমন নিয়ম মেনে ক’জনই বা জল খান!
তাই জলের বিকল্প হিসেবে কিছু স্বাস্থ্যকর পানীয় রাখুন খাদ্যতালিকায়। যা শুধু শরীর ঠান্ডা করবে না লু লাগা, হিটস্ট্রোক, গরমে হজমের গোলমাল ইত্যাদি থেকেও রেহাই দেবে।
আখের গুড়ের শরবত
পুষ্টিগুণে ভরপুর হল আখের গুড়ের শরবত। গরমে এই শরবতে শরীর এবং পেট দুই ঠান্ডা হয়। এতে রয়েছে আয়রন, মিনারেল এবং প্রচুর ভিটামিন যা শরীরকে এনার্জি দেয়। ঘাম থেকে আসা ক্লান্তি দূর করে। হিট স্ট্রোক এবং লু লাগা প্রতিরোধ করে। বাড়িয়ে তোলে রোগ প্রতিরোধ শক্তি। গরমের ফ্লু জাতীয় ভাইরাল সংক্রমণ থেকে বাঁচায় আখের গুড়। ইলেকট্রোলাইট ব্যালান্স করতে গুড়ের শরবত অনবদ্য। হজমের সমস্যা কমায়।
কীভাবে করবেন
দুই চামচ আখের গুড় এক গ্লাস জলে ভিজিয়ে দিন। গুড় জলে মিশে গেলে অল্প লেবু আর আধ চামচ বিটনুন মিশিয়ে গুলে নিন। গরম থেকে বাড়ি ফিরেও রোজ এই শরবত খেতে পারেন।
মেথি, মৌরি, মিছরির শরবত
আয়ুর্বেদ বলছে, আগের দিন রাতে এক গ্লাস জলে মেথি, মৌরি ও মিছরি ভিজিয়ে তা পরের দিন পান করলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। মৌরি ভেজানো জল গ্যাস্ট্রো এনজাইম তৈরি করতে সাহায্য করে। এর ফলে গরমে গ্যাস, অম্বল, পেট ফাঁপার সমস্যা দূর হয়। মেথিতে কী নেই! ভিটামিন কে, থায়ামিন, ফলিক অ্যাসিড, রাইবোফ্লাভিন, নিয়াসিন, ভিটামিন এ, বি ৬। খনিজের মধ্যে আছে কপার, পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম, আয়রন, সেলেনিয়াম, জিঙ্ক, ম্যাঙ্গানিজ ও ম্যাগনেশিয়াম। এই জল শরীরকে ভেতর থেকে ঠান্ডা করে। মেথি, মৌরি, মিছরির জল এক ধরনের ডিটক্স ওয়াটার। শরীরকে টক্সিন-মুক্ত করে ফলে শরীর সুস্থ থাকে।
কীভাবে করবেন
এক চামচ করে মৌরি আর মেথি নিন জলে ভিজিয়ে রাখুন সারারাত। মিছরি দিয়ে দিন মাপ মতো। সকালে জলটা ছেঁকে খান।
বেলের পানা
বেলের পানা থেকে বিটা ক্যারোটিন, প্রোটিন, রাইবোফ্লাভিন, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি এবং বি ২, থায়ামিন, নিয়াসিন, ক্যারোটিন, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম এবং ফাইবার জাতীয় পুষ্টি পাওয়া যায়। এক গ্লাস ঠান্ডা বেলের পানা মুছিয়ে দেয় শরীরের গরম এবং ঘাম থেকে আসা সব ক্লান্তি। ইলেকট্রোলাইট ব্যালান্স। দেয় মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তি। এই শরবতে বদহজম দূর হয়। শরীরে রক্ত বাড়ায়। গরমে পেটের ব্যথা, পেটের অস্বস্তি কমায় পেট ঠান্ডা রাখে। কোষ্ঠকাঠিন্য এবং গ্যাসের সমস্যা কমে। দেহকে টক্সিন-মুক্ত করতে এর জুড়ি নেই।
কীভাবে করবেন
যেদিন বেলের শরবত বানাবেন তার আগের দিন ভিজিয়ে রাখুন বেল। ১২ ঘণ্টা বেল ভেজানোর পর তার আঁঠা ও বীজ ফেলে দিয়ে চটকে ছেঁকে নিন। এবার টকদই এক চামচ ফেটিয়ে বেলের পানায় মিশিয়ে বিট নুন দিয়ে ভাল করে ঘোল করে নন। মিক্সিতেও একবার চালিয়ে নিতে পারেন।
আরও পড়ুন- কুমারগ্রামে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ালেন মন্ত্রী অরূপ
আখের রস
আখের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন এবং ক্যালরি। এই গোটা গরমের ঋতুতে শরীরকে জলশূন্যতার হাত থেকে রেহাই দিতে আখের রস একনম্বর। শুধু তাই নয়, এই রস শরীরে শক্তির মাত্রা বাড়ায়। গরম এবং ঘামজনিত যে দুর্বলতা তার থেকে মুক্ত রাখে। শরীরকে ঠান্ডা রাখে। পাশাপাশি এটি কিডনি, হজমের জন্য বেশ উপকারী। আখের রসে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা শরীরকে ফ্রি-র্যাডিকলস থেকে মুক্ত রাখে। আখের রস খুব রিফ্রেশিং। মুহূর্তে চনমনে করে তোলে শরীর মন।
কীভাবে করবেন
আখের শক্ত খোসা ছাড়িয়ে ছোট ছোট টুকরো করে জুসার বা ব্লেন্ডারে সামন্য জল দিয়ে ভাল করে বেন্ড করুন। এবার ফাইবারগুলো ছেঁকে নিয়ে বিট নুন দিয়ে খান।
ছাতুর শরবত
ছাতুর মধ্যে রয়েছে সোডিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ফাইবার, প্রোটিন, ফ্যাট এবং কার্বোহাইড্রেটের পুষ্টিগুণ। প্রবল গরমে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায় ছাতু। গরমকালে সূর্যের আলো এবং ঘামের কারণে দুর্বল লাগে এমন অবস্থায় শক্তি বজায় রাখতে খালি পেটে এক গ্লাস ছাতুর শরবত খেলে সারাটা দিন শরীর ঠান্ডা এবং এনার্জিতে পূর্ণ থাকে। এই শরবত খেলে শরীরে ভিটামিন ও মিনারেলের ভারসাম্য বজায় থাকে। এছাড়া এটি শরীর থেকে সবরকম দূষিত পদার্থ বের করে দেয়। গরমে (Summer) হজমের সমস্যা দূর করে ছাতু।
কীভাবে করবেন
এক গ্লাস জলে দু’চামচ ছাতু, এক চামচ চিনি, আধ চামচ লেবুর রস, অল্প বিটনুন দিয়ে ভাল করে গুলে তৈরি করে নিন ছাতুর শরবত। ওপরে একটু গোলমরিচের গুঁড়ো ছড়িয়ে খান।
কাঁচা আমের শরবত
কাঁচা আমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম যা গরমে শরীরকে ঠান্ডা রাখে। শরীরের জলের পরিমাণ বাড়ায় কাঁচা আমের শরবত এবং হাইড্রেটেড রাখে। হিট স্ট্রোকের সম্ভাবনা কমায়। লু লাগার হাত থেকে রক্ষা করে। কাঁচা আমে রয়েছে ভিটামিন সি, ই-সহ একাধিক অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট। যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি করে। এছাড়া রয়েছে প্রচুর ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম ও ভিটামিন যা শরীরে রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখে। এতে থাকা ভিটামিন সি ভাইরাল সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত রাখে। রক্তের লবণের ঘাটতি পূরণ করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। বদহজম কমাতে সাহায্য করে। কাঁচা আম হজম শক্তি বাড়ায়। লিভার ভাল রাখে।
কীভাবে করবেন
কাঁচা আমের টুকরো এক কাপ, চার-পাঁচটা পুদিনা পাতা, অর্ধেক লেবুর রস, বিট নুন এক চা-চামচ, সামান্য জিরে গুঁড়ো এবং সামান্য গোলমরিচের গুঁড়ো একসঙ্গে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিন। এবার জলটা ছেঁকে ওর মধ্যে স্বাদমতো চিনি দিয়ে খান।