প্রতিবেদন : ভোট আসতেই ডেলি প্যাসেঞ্জারি শুরু হয়ে গিয়েছে। বৃহস্পতিবার বাংলায় এসে প্রধানমন্ত্রী ফের একটা মিথ্যাচার আর জুমলার ভাষণ উপহার দিয়ে গেলেন। উত্তরের ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় নিয়ে একটা শব্দও উচ্চারণ করলেন না। অমানবিকতার চূড়ান্ত নিদর্শন রাখলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর সেই মিথ্যাচার ও ভাঁওতার ভাষণবাজি একটা একটা করে তথ্য তুলে ধরে ফাঁস করলেন মন্ত্রী ব্রাত্য বসু ও তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তৃণমূলের সাফ কথা, প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতি ও তাঁর যে ভাষণ আজ আমরা শুনলাম, তা হল অমানবিক, দ্বিচারিতা, ভিত্তিহীন কুৎসা, মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা ও অসৎ উদ্দেশ্যে মিথ্যাচারের মিশ্রণ। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, যখন আসবেন শ্বেতপত্র হাতে নিয়ে আসবেন। উনি তা আনেননি। ২১ দিন, ৫০০ ঘণ্টা পেরিয়ে গিয়েছে। এদিকে উনি বলছেন রাজ্যের মানুষ ৪০ হাজার বাড়ি পেয়েছে। কদিন আগেই কেন্দ্রীয় সরকারের বিজ্ঞাপনে লেখা ছিল ৪ লক্ষ ৬৯ হাজার বাড়ি। তাহলে কোনটা ঠিক? ৪ লক্ষ ৬৯ হাজার বাড়ির শুধুমাত্র অনুমোদন দিয়েছে, টাকাও দেয়নি। কিন্তু বক্তৃতায় বলছেন ৪০ হাজার বাড়ি দিয়েছি। কী করে হতে পারে এটা?
আরও পড়ুন-যাঁরা ভোট দেননি, বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাঁদেরও বোঝাতে হবে : অভিষেক
প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ অমানবিক। কারণ, উত্তরে ঝড়, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, মানুষের প্রাণহানি নিয়ে একটা শব্দও তিনি উচ্চারণ করেননি। আমাদের প্রার্থীরা প্রচার থামিয়ে দিয়ে উদ্ধার কাজে ছুটলেন। মুখ্যমন্ত্রী মাঝ রাতে ঘটনাস্থলে গেলেন, অভিষেক গেলেন। কিন্তু কই ট্রেনি সভাপতি বা গদ্দার অধিকারীরা তো রাজনৈতিক কর্মসূচি ছেড়ে গেলেন না। গদ্দার রাজনীতি করতে গিয়ে মানুষের বিক্ষোভের মুখে পড়েছেন। কিন্তু এতবড় প্রাকৃতিক বিপর্যয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখে কোনও কথা নেই। উত্তরের জন্য মেকি দরদ দেখাচ্ছে বিজেপি। সত্যি দরদ থাকলে প্রথমেই জলপাইগুড়ির দুর্গতদের নিয়ে কথা বলতেন।
আরও পড়ুন-মুখ্যমন্ত্রিত্ব থেকে সরানোর আর্জি খারিজ, বিধায়কদের এলাকায় পৌঁছতে ভিডিও-বার্তা দিলেন আপ সুপ্রিমো
তৃণমূলের কথায়, প্রধানমন্ত্রী দ্বিচারিতা করছেন। বলছেন, দুর্নীতি-পরিবারবাদ। হেমন্ত বিশ্বশর্মা, নারায়ণ রানে, গদ্দার অধিকারী, অজিত পাওয়ার এবং সর্বশেষ প্রফুল্ল প্যাটেল। যাদেরকে একসময় বিজেপি চোর তকমা দিয়ে ইডি-সিবিআই লাগিয়েছে, যেই বিজেপি বা এনডিএতে গিয়েছেন, তাঁরা সাধু হয়ে গিয়েছেন। মোদির পরিবার এই অসাধুদের পরিবার। এজেন্সির ভয়ে বিজেপির পায়ে পড়েছে এঁরা। মানুষকে বোকা বানাচ্ছে বিজেপি।
আর মহিলাদের উন্নয়ন? উত্তরপ্রদেশ, উন্নাও, হাথরস, প্রয়াগরাজ, গুজরাট, বিলকিস বানো, সোনার মেয়ে সাক্ষী মালিকের ঘটনা ভোলেনি মানুষ। অপরাধীদের ছেড়ে দিল সরকার। বিজেপির সাংসদ ব্রিজভূষণের কোনও শাস্তি হল না। আর প্রধানমন্ত্রী মহিলাদের জন্য দরদ দেখাচ্ছেন। বাংলায় মহিলাদের আর্থিক, সামাজিক ও রাজনৈতির অধিকার যিনি দিয়েছেন, তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নারী নিরাপত্তায় প্রথম কলকাতা। আর নারীদের উপর নির্যাতনে এগিয়ে উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ।
তৃণমূল সাফ জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী সিএএ নিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন। এমন কোন কাগজ নরেন্দ্র মোদির কাছে আছে, অথচ এই মানুষগুলোর কাছে নেই যে, নরেন্দ্র মোদি নাগরিক, এঁরা নাগরিক নন। যাঁদের নাম ভোটের তালিকায় রয়েছে, ভোট দিয়েছেন, নথি আছে তাঁরা সবাই নাগরিক। কারও নাগরিকত্ব কাড়ার অধিকার বিজেপির নেই। আপনার দলের কোনও নেতা সিএএ ফর্ম ফিলাপ করলে, তার প্রাথমিক শর্ত নাগরিক নয় বলে ঘোষণা করা। তাঁরা ভোটে দাঁড়াবেন না, তাঁদের বিধায়ক পদ থেকে সরিয়ে দিতে হবে। কারও জনপ্রতিনিধি থাকার অধিকার নেই।
আরও পড়ুন-আচার্যের বেআইনি প্রস্তাব, কড়া ভাষায় শিক্ষামন্ত্রীর তোপ
আসলে মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি। আগাগোড়া তিনি বলে গেলেন মোদি গ্যারান্টির কথা। বললেন, মোদি টাকা দিচ্ছে, তিনি কি পৈতৃক টাকা দিচ্ছেন? বাংলার হকের টাকা তিনি দিতে বাধ্য। প্রতিটি ক্ষেত্রে মোদির গ্যারান্টি মানে ভাঁওতা। আর দিদির গ্যারান্টি মানে রাজ্য সরকার মানুষের পাশে আছে। প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে শুধু কুৎসা করে গেলেন। জোশ নেই তাঁর বক্তৃতায়। তিনি জানেন, বাংলায় বিজেপির ভরাডুবি হতে চলেছে। দিল্লিতে আর ক্ষমতায় ফিরছেন না। ২০০-ও ক্রস করবে না বিজেপি। বিকল্প সরকার আসছে। বাংলার মাটিতে ৪২টি কেন্দ্রে তৃণমূলের কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে গিয়েছে তারা। বিজেপি জানে বাংলা থেকে তৃণমূল ৩০ থেকে ৩৫টি আসন পেতে চলেছে। তাই তারা বাংলায় কংগ্রেস ও সিপিএমকে ব্যবহার করছে। তারা যাতে ভোট কাটে। প্রধানমন্ত্রীকে দেখে মনে হচ্ছে বিজেপি-সিপিএম-কংগ্রেসের যে ফ্রন্ট হয়েছে বাংলায়, তার চেয়ারম্যান।
প্রধানমন্ত্রী আজ বুঝে গেলেন তার দলকে বাংলার মানুষ প্রত্যাখ্যান করতে চলেছে। গদ্দার অধিকারীদের মতো দুর্নীতিবাজদের দলে নিয়ে দুর্নীতি বিরুদ্ধে কথা, অধিকারী প্রাইভেট লিমিটেডের সদস্যদের দলে নিয়ে পরিবারবাদের বিরুদ্ধে কথা মানুষ বিশ্বাস করবে না। বাংলাকে একটা পয়সা না দিয়ে মিথ্যাচার করে গেলেন তিনি। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তো চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলেন। শ্বেতপত্রের নথিটা পর্যন্ত আনেননি। তিনি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের নথিটা তুলে ধরলেন না কেন? কোন অ্যাকাউন্ট থেকে কোন অ্যাকাউন্টে টাকা গেছে। প্রথম সভাতেই ব্যাকফুটে বিজেপি। হার মেনে নেওয়ার সুর প্রধানমন্ত্রীর গলায়। প্রধানমন্ত্রীর উৎসাহ চলে গেছে তালিকা ঘোষণার পর প্রথম দিন বাংলায় পা রেখে।
আরও পড়ুন-আচার্যের বেআইনি প্রস্তাব, কড়া ভাষায় শিক্ষামন্ত্রীর তোপ
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ১০ বছরের ট্রেলার দেখবেন পিকচার আভি বাকি হে। হে প্রসঙ্গে ব্রাত্য বসু বলেন, দশ বছর ধরে শুধু তিনি ট্রেলারই বানিয়ে গিয়েছেন, সিনেমাটা আর বানাতে যাবেন না। ভারতবর্ষের মানুষ সেই সুযোগ আর তাঁকে দেবে না কুণাল ঘোষ বলেন, নরেন্দ্র মোদি যে ট্রেলারের কথা বলছেন, সেই সিনেমা আর দিনের আলো দেখবে না।