সংবাদদাতা, নন্দীগ্রাম : ২০০৭ সালের ১০ নভেম্বর নন্দীগ্রাম আওয়াজ তুলেছিল, ‘হার্মাদ হটাও, নন্দীগ্রাম বাঁচাও।’ ২০২১ সালের ১০ নভেম্বর নন্দীগ্রাম আওয়াজ তুলল, ‘শুভেন্দু হটাও, নন্দীগ্রাম বাঁচাও।’ ২০০৭-এ চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলে নন্দীগ্রামবাসীদের জীবন বিপন্ন করে দেওয়ার জন্য নন্দীগ্রামে তথাকথিত সূর্যোদয় ঘটিয়েছিল বামেদের হার্মাদ বাহিনী। সেদিন রক্তাক্ত নন্দীগ্রাম ফুঁসে উঠেছিল। আর বুধবার এইদিনে নন্দীগ্রাম ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির ডাকে গোকুলনগর করপল্লিতে শহিদ স্মরণের সভা থেকে এদিনের বক্তা প্রাক্তন সাংসদ ও তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের স্লোগানে সুর মিলিয়ে নন্দীগ্রামের মাটি থেকেই নন্দীগ্রামের বিধায়ক তথা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে গর্জে উঠলেন নন্দীগ্রামের মা-ভাই-বোনেরা। কুণাল ঘোষ এদিন বলেন, ‘শুনলাম শুভেন্দু এদিন নন্দীগ্রামের শহিদ বেদিতে মালা দিতে আসার ইচ্ছে প্রকাশ করেছে। এই শুভেন্দু মুসলিমদের জেহাদি বলেছিল। অথচ নন্দীগ্রামের আন্দোলনে ২০০৭-এর ১০ নভেম্বরে শহিদ হয়েছিলেন শ্যামলী মান্না ও রেজাউল করিমরা। সেদিন রক্ত ঝরিয়েছেন ও প্রাণ দিয়েছেন বহু মুসলিম ও হিন্দু। উভয় সম্প্রদায়ের রক্তে রাঙা সেই শহিদ বেদিতে শুভেন্দু কোন লজ্জায় মালা দেবে? আজ মঞ্চে রয়েছেন শহিদজননী ফিরোজা বিবি। তিনি মুসলিম বলে শুভেন্দু কি তাঁকে ‘জেহাদির মা’ বলে ডাকবেন? আসলে শহিদের রক্ত বেচে নিজেদের আইডেন্টিটি তৈরি করেছে গদ্দার শুভেন্দু অ্যান্ড কোং। শুভেন্দু ও তার পরিবারের অন্য সদস্যদের নানা পদের রাজনৈতিক জন্ম দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোটের মুখে সেই মায়ের পিঠে ছুরি মেরেছে শুভেন্দু। তাই শুভেন্দু তুমি বেজন্মা। নন্দীগ্রামের ভোটের পুনর্গণনা হলে লোডশেডিং অধিকারীর সব কারচুপি ধরা পড়ে যাবে।’ মন্ত্রী অখিল গিরি বলেন, ‘নন্দীগ্রামের সোনাচূড়ায় আন্দোলনকারীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিলেন মহাশ্বেতা দেবী ও ডাঃ দেবপ্রিয় মল্লিকরা।
আরও পড়ুন : পাঁচ একর জমিতেই এখন হবে শিল্পপার্ক
সেখানে একটি হাসপাতাল গড়ে তোলার কথা ছিল। হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের টাকায় সেই হাসপাতালের জায়গা কেনা হয়েছিল। কিন্তু শুভেন্দু অধিকারী সেই জায়গা নিজের নামে করে নেন। সেই জায়গায় ফের নন্দীগ্রামের স্বার্থে নন্দীগ্রামের মানুষকে নিয়ে হাসপাতাল গড়ে তোলা হবে।’ সাংসদ দোলা সেন নন্দীগ্রামের আন্দোলনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবদানের কথা নন্দীগ্রামবাসীদের স্মরণ করিয়ে দেন। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী ও বিধায়ক তাপস রায় বলেন, ‘নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলন ঐতিহাসিক। আর এখানকার স্বঘোষিত নেতা শুভেন্দুর বিশ্বাসঘাতকতাও ঐতিহাসিক। তাই পঞ্চায়েত থেকে লোকসভা, অধিকারীদের একটিও ভোট দেবেন না।’ ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি শেখ সুফিয়ানের সভাপতিত্বে স্মরণসভায় উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক ফিরোজা বিবি, জয়া দত্ত প্রমুখ। মহিলাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। উপস্থিত অতিথিরা গোকুলনগর শহিদ বেদিতে মাল্যদান করেন। নন্দীগ্রামকে সুবিচার পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে শুভেন্দু বিজেপিতে নাম লিখিয়েছেন। তাই ১৪ বছর পরেও নন্দীগ্রাম আজকের দিনে আওয়াজ তুলল, ‘শুভেন্দু হটাও, নন্দীগ্রাম বাঁচাও’।