প্রতিবেদন : গোকুলনগর (নন্দীগ্রাম) শহিদ দিবসকে কেন্দ্র করে সমাবেশে বিজেপিকে ধুয়ে দিল তৃণমূল কংগ্রেস। বুধবার নন্দীগ্রামের গোকুলনগরে শহিদ বেদিতে মালা দেওয়ার পরে সভায় যেভাবে শুভেন্দু অধিকারী-সহ তাঁর দলের বিরুদ্ধে কামান দাগলেন তাপস রায়, কুণাল ঘোষ, দোলা সেন, জয়া দত্ত, শেখ সুফিয়ানরা, যেসব প্রশ্ন তুলে দিলেন তাঁরা, বিকেলে সেখানেই বিব্রত শুভেন্দুকে বলতে শোনা যায়, ‘তৃণমূলের প্রশ্নের জবাব আমি দেব না।’ বস্তুত গোটা নন্দীগ্রাম জুড়ে এদিন স্লোগান ছিল, ‘গদ্দার হটাও, নন্দীগ্রাম বাঁচাও।’
আরও পড়ুন-পুরীর আদলে লন্ডনে হবে জগন্নাথ মন্দির
২০০৭ সালের ১০ নভেম্বর অপারেশন সূর্যোদয়ের নামে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে নন্দীগ্রাম দখল নিতে নামে সিপিএম। হতাহতের সংখ্যা অনেক। নিখোঁজ বহু। সেই থেকে প্রতিবছর এই দিনটি শহিদ দিবস হিসেবে পালন করে ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি ও তৃণমূল কংগ্রেস।
বুধবার সকালে শহিদ বেদিতে মালা দেন নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় মানুষ। তারপর জনসভা হয়। বিপুল সংখ্যক মানুষ উপস্থিত ছিলেন সভায়।
আরও পড়ুন-ত্রিপুরায় তৃণমূলকে থামাতে গেরুয়া সন্ত্রাস চলছেই, তবু অবিচল প্রার্থীরা
নীরবতা পালন দিয়ে সভা শুরু হয়। ছিলেন মন্ত্রী অখিল গিরি, বিধায়ক তাপস রায়, ফিরোজা বিবি, সাংসদ দোলা সেন, কুণাল ঘোষ, ডাঃ দেবপ্রিয় মল্লিক, শেখ সুফিয়ান, জয়া দত্ত প্রমুখ। বক্তারা সেদিনের সন্ত্রাসের ভয়াবহতার কথা বলেন। তারপর মানুষের লড়াই এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বৃহত্তর আন্দোলন তুলে ধরেন। তুলোধনা করা হয় শুভেন্দু অধিকারীকে। আসল আন্দোলনে তিনি এখানকার মানুষের পাশে ছিলেন না।
পরে এসে প্রচারের ফায়দা নিয়েছেন। শহিদের রক্তকে বিক্রি করে তিনি রাজনৈতিক কেরিয়ার গড়েছেন। তাঁর পরিবার যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দয়ায় বিভিন্ন পদে গিয়েছেন, সেই মায়ের মতো দিদির সঙ্গে বেইমানি করেছেন। এখন তিনি বিজেপির আশ্রয়ে হিন্দু-মুসলমান ভেদাভেদের রাজনীতি করছেন। যে শহিদ বেদিতে তিনি মালা দিতে চাইছেন, সেখানে সব ধর্মের মানুষের রক্ত রয়েছে। শুভেন্দু ক্ষমা চান। ভোটগণনায় কারচুপি করে কোনওরকমে বিধায়ক হয়েছেন তিনি। এখন কোর্ট এড়ানোর চেষ্টা করছেন। ফের গণনা হলে হেরে যাবেন শুভেন্দু।
আরও পড়ুন-বিজেপি থেকে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ গোয়ায়
নন্দীগ্রামে উপনির্বাচন হবে। তৃণমূল জিতবে। এদিনের সভায় বক্তারা একের পর এক প্রশ্ন রাখেন শুভেন্দুর উদ্দেশে। শেখ সুফিয়ান বলেন, ‘আন্দোলন কমিটির সব জমি, সম্পদ নিজের নামে করে নিয়েছেন। কমিটির হাসপাতাল তৈরির জমি নিজের নামে করেছেন। এইসব উদ্ধার করা হবে।’ সিপিএমের হামলার সময় কেন অধিকারীদের দেখা যায়নি, সেই প্রসঙ্গও ওঠে। গোটা মাঠ ছিল শুভেন্দু-বিরোধিতায় মুখর। সবাই এককাট্টা, পরের সব নির্বাচনে অধিকারীদের মুছে দিয়ে তৃণমূলকে জেতাতে হবে।
এরপর উদ্যোক্তারা শহিদ বেদিতে পোস্টার দেন, হিন্দু-মুসলমান সব শহিদের রক্তে রাঙা এই শহিদবেদি।
বিকেলে এখানে মালা দিতে এসে বিপাকে পড়েন শুভেন্দু। কারণ তিনি এখন জেহাদি ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করছেন। বিব্রত শুভেন্দু অসংলগ্ন বক্তৃতা করেন। ছোট মঞ্চ। লোকজন হয়নি। তিনি ভাষা খুঁজে না পেয়ে বলেন, ‘তৃণমূলের কথার উত্তর দেব না।’ নন্দীগ্রামবাসী বুঝে যান উত্তর দেবার ক্ষমতা নেই শুভেন্দুর।