চলছিল ভালই। বিশ্বের সর্ববৃহৎ স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্র হওয়ার দিকে ক্রমেই এগিয়ে যাচ্ছিলাম আমরা।
স্বচ্ছ ভারত নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের গর্বিত প্রচার সত্ত্বেও দেশে এখনও ৬০ লক্ষ মানুষ পুরোনো মাটির ভাঁড়ে মাথায় করে মল বহন করছিল। ৯০ কোটি ভারতবাসীর একবেলা খাদ্য জুটছিল না। আয়ুষ্মান ভারতের সৌজন্যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় রোগীর চেয়ে চুরি বেশি হচ্ছিল। বেকারত্বের হারে আমরা সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছেছিলাম। দলিত আদিবাসী আর নারীদের ওপর অত্যাচার ক্রমশ বাড়াচ্ছিল মনুবাদীর দল। ৩৪০০র বেশি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় বলি হয়েছিল কয়েক হাজার মানুষ। ইউএসসিআইআরএফ-এর রিপোর্ট বলছিল, সম্প্রদায়িক হিংসা এদেশে বিস্ময়কর দ্রুততায় বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এসব বেশ হজম করে আমরা মেনে নিচ্ছিলাম বুলডোজার বাবার নিদান। অযোধ্যাকে রামের (Ram Lalla) জন্মস্থান হিসেবে বাল্মীকি তাঁর রামায়ণের মূল অংশে উল্লেখ না করলেও খ্রিস্ট পূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে চন্দ্রগুপ্ত বিক্রমাদিত্যের আমলে জনবসতি হিসেবে গড়ে ওঠা সাকেত-অযোধ্যাই উত্তরকাণ্ড রাম জন্মভূমি হিসেবে চিহ্নিত ভূখণ্ড, আর সেটাই মান্যতা পেয়েছিল আমাদের মনোলোকে।
আরও পড়ুন: বিদেশে গিয়ে বিপাকে দু’ভাই আবেদন মুখ্যমন্ত্রীর দরবারে
এর সঙ্গে ছিল আরও কিছু থিওরি। গণেশের হস্তীমুখ প্রাচীন ভারতে প্লাস্টিক সার্জারির নমুনা হিসেবে দেখা দিয়ে ছিল। কৌরবদের জন্ম হয়ে উঠেছিল স্টেমসেল বিজ্ঞানের অগ্রগতির নিদর্শন। কর্ণের জন্ম কৃত্রিম গর্ভধারণের উন্নত বিজ্ঞান। এরকম হরেক হাস্যকর তত্ত্ব।
এর পেছনে ছিলেন এক এবং অদ্বিতীয় নরেন্দ্র মোদি। সেই মোদিজি গত বুধবার রামনবমীর দিন শোনালেন আর এক অবৈজ্ঞানিক তত্ত্ব। সূর্যদেব রামমন্দিরের গর্ভগৃহে ঢুকে ওই পবিত্র দিনে শ্রীরামের মূর্তির কপালে সূর্যতিলক লাগিয়ে দিয়েছেন।
আসলে রামমন্দির নির্মাণ পরিকল্পনায় ব্যবহৃত বিজ্ঞানের প্রয়োগিক অভিজ্ঞান এই ঘটনা। এতে অলৌকিকতার কিছু নেই। পেরিস্কোপে যেভাবে আলোর প্রতিফলন ঘটানো হয়, এখানেও সেইভাবে ফি-বছর রামনবমীর দিন একটা সময় বাইরের সূর্যের আলোর প্রতিফলন রামের (Ram Lalla) মূর্তির কপালে ফেলার ব্যবস্থা হয়েছে। দেখানো হচ্ছে, গোটা দেশের অযুত মন্দিরে অধিষ্ঠিত দেবদেবীর মূর্তির কপালে সূর্যরশ্মি তিলক কেটে দিতে আসে না। আসে কেবল মোদির তৈরি রামমন্দিরে। ভোটের বাজারে মোদি- মাহাত্ম্য প্রচারের একটা রগরগে চেষ্টা।
ভারতবর্ষে স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠার কান্ডারি অপবিজ্ঞানের সাধনা ছড়িয়ে দিয়ে ভোট বৈতরণী পার হওয়ার মরিয়া চেষ্টা চালিয়েছেন। মানুষের ধর্মবিশ্বাসকে পুঁজি করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের এমন নিকৃষ্ট প্রয়াস এদেশ আগে কোনও দিন দেখেনি।
স্বৈরশাসনের সাধক মোদিজির এমন অপবিজ্ঞান প্রচারের পরাজয় হোক।