প্রতিবেদন: ভোটারদের মুখোমুখি হতেই ইতস্তত করছেন অনেক প্রার্থী কিংবা তাঁদের দলের নেতারা। নির্বাচনী প্রচারে বেরিয়ে সেই একই প্রশ্নে বিব্রত হচ্ছে তাঁদের, বেঙ্গালুরুতে জলসঙ্কটের কবে স্থায়ী সমাধান হবে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে কর্নাটকের শাসকদল কংগ্রেসের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে কিন্তু পার পাচ্ছে না বিজেপি। সাধারণ মানুষ সরাসরি জিজ্ঞাসা করছেন, রাজ্যে দীর্ঘদিন সরকার চালিয়েছে বিজেপি। তখন কি নাকে সর্ষের তেল দিয়ে ঘুমোচ্ছিলেন?
আরও পড়ুন-পর্যাপ্ত ওআরএস মজুতের নির্দেশ দিল স্বাস্থ্য দফতর
আসলে বিজেপির শাসনকালেই যে নগরায়ণের নামে একের পর এক লেক, জলাভূমি ভরাট হয়েছে, নেমে গিয়েছে জলস্তর, একথা অজানা নয় বেশিরভাগ নাগরিকেরই। কাবেরী প্রকল্পের জল যে এখনও প্রতিটি বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়নি, তারজন্য এখনকার কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ উঠলেও এটা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট, এবারে বেঙ্গালুরুতে অভূতপূর্ব এবং ভয়াবহ জলসঙ্কটের নেপথ্যের কারণটার কিন্তু সূত্রপাত গেরুয়া জমানাতেই। তাই এই অভূতপূর্ব জলসঙ্কটকে কিন্তু কোনওভাবে প্রচারের ইস্যু করতে পারছে না বিজেপি। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়, ২০১৯-এর তুলনায় এবারে বিজেপির আসন-সংখ্যা যে অনেকটাই কমে যেতে পারে তা প্রকাশ্যে স্বীকার করছেন এই দক্ষিণীরাজ্যের গেরুয়া নেতারাও। কর্নাটকে এবারে সরাসরি লড়াই হচ্ছে কংগ্রেস আর বিজেপি-জেডি (এস) জোটের মধ্যে। নির্বাচন ২৬ এপ্রিল ও ৭ মে— দুদফায়।
আরও পড়ুন-এনআইএ-র হাতে ধৃতদের বাড়ি গিয়ে পাশে থাকার বার্তা প্রার্থীর
আসলে এবারে দলের ভেতরে কোন্দল সামলাতেই বেসামাল গেরুয়া শিবির। শুধু তাই নয়, কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার অনগ্রসর শ্রেণি এবং সংখ্যালঘু ভোটারদের মধ্যে প্রশ্নাতীত প্রভাব দুশ্চিন্তায় ফেলেছে বিজেপিকে। উপমুখ্যমন্ত্রী ডি শিবকুমারের ভোক্কালিগা সমাজে গ্রহণযোগ্যতাও এখনও পর্যন্ত অনেকটাই এগিয়ে রেখেছে কংগ্রেসকে। দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গেও নিজের রাজ্য কর্ণাটকে বিজেপির বিরুদ্ধে দলিত ভোটব্যাঙ্ককে সংগঠিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছেন। তাৎপর্যপূর্ণভাবে ভোক্কালিগা এবং লিঙ্গায়েত ভোটাররা এবারেও কর্ণাটকের ভোটভাগ্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে একটা গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর।
গেরুয়া শিবিরের এবারে সবচেয়ে মাথাব্যথার কারণ হচ্ছে প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী ঈশ্বরাপ্পার সঙ্গে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ইয়েদুরাপ্পা এবং তাঁর ছেলে প্রদেশ বিজেপি সভাপতি বি ওয়াই বিজয়েন্দ্রর মধ্যে তীব্র সংঘাত। কিন্তু লিঙ্গায়েত ভোট টানতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের আশীর্বাদের হাত ইয়েদুরাপ্পা এবং বিজয়েন্দ্রর মাথাতেই। ফলে কোনঠাসা হয়ে পড়েছিলেন ঈশ্বরাপ্পা। তার উপরে তিনি বায়না ধরেন তাঁর ছেলেকে দিতে হবে দলের টিকিট। শীর্ষনেতৃত্ব তা মেনে না নেওয়ায় গোঁসা হয় ঈশ্বরাপ্পার। শিমাগো কেন্দ্রে ইয়েদুরাপ্পার আর এক ছেলে পদ্মপ্রার্থী রাঘবেন্দ্রর বিরুদ্ধে নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে পড়েছেন তিনি।ক্ষুব্ধ কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ৬ বছরের জন্য দল থেকে বহিষ্কার করেছে তাঁকে। কিন্তু এরফলে লোকসভা নির্বাচনের মুখে গেরুয়া দলের সাংগঠনিক ভিতে জোরালো কম্পন অনুভূত হচ্ছে। কারণ, কর্ণাটকে বিজেপি্র সংগঠন গড়তে একসময় বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন ঈশ্বরাপ্পা। ওবিসি ভোটব্যাঙ্কেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা প্রবল। শুধু তাই নয়, ভোক্কালিগা ভোট টানতে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়া এবং তাঁর ছেলে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কুমারস্বামীকে বিজেপি সঙ্গে নিলেও তাঁদের বিশ্বাসযোগ্যতা ক্রমশই তলানিতে। এরওপর কেন্দ্রীয় বঞ্চনা নিয়ে কংগ্রেসের প্রচারও রীতিমতো অস্বস্তিতে ফেলে দিচ্ছে গেরুয়া প্রার্থীদের। সবমিলিয়ে কর্ণাটকে বেশ বিপাকে গেরুয়া শিবির।