প্রতিবেদন : বিজেপির সবচেয়ে বড় সাপোর্টার এখানকার কংগ্রেস প্রার্থী। বুধবার মুর্শিদাবাদের বড়ঞার নির্বাচনী জনসভা থেকে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) বলেন, আমি বহরমপুরে ইফসুফ পাঠানকে নিয়ে এসেছি অনেক বড় মুখ করে। আপনারা পাঠানকে জেতান, না জেতালে বিজেপির আর একটা গদ্দার তৈরি করবেন। আর কি বিজেপির গদ্দার চান? বদলাতে চান তো? এবার বদলান, এবার পাল্টান।
সিপিএম-বিজেপির দোসর : তাঁর কথায়, বিজেপির যত হিংসুটেপনা এই বাংলায়। জ্বালিয়ে পুড়িয়ে খেল বিজেপি দলটা। আর এখানে সাথে আছে সিপিএম আর বিজেপির দোসর। সকাল থেকে সন্ধ্যা তৃণমূলকে গালি দেওয়া ছাড়া একটাও কাজ করেনি, যাকে আপনারা বলতেন ঘরের ছেলে। তার নাম বলতে আমার ভাল লাগে না। আমি যেমন গদ্দারেরও নাম বলি না। মনে রাখবেন সে দিল্লিতে জোটেরও একটা বড় গদ্দার।
নেতা না ছাতা : কংগ্রেসের টিকিটে জিতে লোকসভায় গিয়ে বিরোধী দলনেতা হয়ে তিনি সকালবেলায় বিজেপির পা ধরেন, বিকেলবেলায় সিপিএমের পা ধরেন। নেতা না আতা আমি জানি না। নেতা হয় মানুষের ছাতা। আপনি নেতা না ছাতা? বলতে পারেন কোন কাজটা করেছেন? মুর্শিদাবাদ জেলায় মেডিক্যাল কলেজ, আইটিআই থেকে সবটা আমরাই করে দিয়েছি। রেলমন্ত্রী থাকাকালীন অনেক ট্রেনও দিয়েছিলাম, রেললাইনও করে দিয়েছিলাম। আপনিও তো কিছুদিন রেলমন্ত্রী ছিলেন, কোন কাজটা করেছেন?
বিজেপির সবচেয়ে বড় সাপোর্টার : তৃণমূলনেত্রী (Mamata Banerjee) বলেন, মুর্শিদাবাদের এই কেন্দ্রে ও মালদহের দু’টি কেন্দ্রে বিজেপি ও সিপিএমের সমর্থন নিয়ে কংগ্রেস জিতে গিয়েছে বারবার। পরশু দিন বিজেপির সভাপতি এখানে এসে মিটিং করে গেলেন। কিন্তু উনি একবার মুখেও আনলেন না তাঁর নাম। বিজেপির সবচেয়ে বড় সাপোর্টার যে, সে আজকে আপনাদের এখানকার ক্যান্ডিডেট, কংগ্রেসের।
ওকে ভোট দেবেন না : এবার আর দয়া করে ওকে ভোট দেবেন না। কে কত বড় গুন্ডামি করে জেতে, কে কত কী করেছে জীবনে, সব আমি জানি। আমিও তো একদিন কংগ্রেস করতাম। কংগ্রেস-সিপিএম জোট দেখে ছেড়ে এসেছিলাম। আর তৃণমূল কংগ্রেস তৈরি করেছিলাম। তৃণমূল কংগ্রেস তৈরি করেছিলাম বলেই সিপিএম বিদায় নিয়েছে।
শপথ নিতে হবে : এবার মুর্শিদাবাদে দাঁড়িয়েছেন এখানকার কংগ্রেস প্রার্থীর বন্ধু সেলিম। কখনও দাঁড়ান উত্তর দিনাজপুরে, কখনও হাওয়ায়, কখনও বাতাসে। এবার মুসলিম গন্ধ পেয়েছে। ভাবছে, যদি সংখ্যালঘু ভোট ভাগ করে দিতে পারি হিন্দু মুসলিম করে, আমি জিতে যাব, অধীরও জিতে যাবে। আপনারা শপথ নিন, এদের কাউকেই জেতাবেন না। বিজেপি যা করে, সিপিএমও তাই করে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন স্পষ্ট করে দেন, বাংলায় কোনও জোট নেই। আছে কংগ্রেস-সিপিএমের ঘোঁট। বাংলায় একটাই জোট, সেটা মানুষের জোট।
বিজেপি ভাঁওতাবাজ দল : তৃণমূলনেত্রীর সাফ কথা, মোদিকে বিদায় দিতে গেলে তৃণমুলকে জেতাতে হবে। তৃণমূলকে যত আসন দেবেন, ততই মোদি বিদায়ের পথ প্রশস্ত হবে। সংসদে লড়াই করি আমরা। আমরা যা পারি, অন্যরা তা করতে পারে না। বিজেপি একটা পচা রাজনৈতিক দল। ভাঁওতাবাজ দল। মোদিবাবু, তুমি ভারতবর্ষকে জেল বানিয়ে দিয়েছো। তোমাকে আমরা ভয় পাই না।
আরও পড়ুন- মালদহে বিজেপি নেতার গাড়িতে ৭.৫ লক্ষ টাকা
মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গিয়েছে : বেকারদের চাকরি নেই। ভারতবর্ষ জ্বলছে আর বিজেপি হাসছে। জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, ভাজপা পকেট কাটছে। লুট করছে লুটেরা বাহিনী। মানুষ কী খাবে বিশ্বগুরু? ভয়েতে বুকটা করছে দুরু দুরু। দুটো ফেজ হওয়ার পরে মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গিয়েছে। তাই হারের ভয়ে ভোট মেশিন নিয়ে কারচুপি করছে।
মোদিবাবুর গ্যারান্টি : মোদিবাবু বলছেন, পাইপলাইনে সবার ঘরে ঘরে গ্যাস পৌঁছে যাবে। এখনও জল পৌঁছল না, বলছে গ্যাস পৌঁছে যাবে। জল তো আমরা দিচ্ছি। ৭৫ শতাংশ টাকা রাজ্য সরকারের। আগামী দেড় বছরের মধ্যে নলবাহিত জল সবার ঘরে পৌঁছে যাবে। এটা মোদিবাবুর কাজ নয়, এটা বিজেপির কাজ নয়। এটা আমরা করেছি, মনে রাখবেন।
মিথ্যা কথা বলার বিজ্ঞাপন : বিনা পয়সায় রেশন আমরা দিই, মোদিবাবু দেয় না। মিথ্যা কথা বলার বিজ্ঞাপন করছে। সবার বাড়িতে পাইপলাইন দিয়ে গ্যাস পৌঁছে যাবে। সেই পাইপলাইন কোথায়? আমি জানি, আম্বানিদের দিয়ে ইন্দো-বাংলাদেশ গ্যাস লাইনের একটা কাজ করানো হচ্ছে। কিন্তু বাংলায় সেটা হচ্ছে না। বাংলায় যদি না হয়, তাহলে অন্য রাজ্যে কী করে হয়, এত মিথ্যা কথা কী করে বলছেন?
বাংলা ওদের কাছে দুয়োরানি : গরিব মানুষ সারাদিন কাজ করেও একশো দিনের কাজের টাকা পায় না, একটা পাকাবাড়ি পায় না। রাস্তা তৈরি আমরা করছি। আমাদের টাকা কেন্দ্রের সরকার দেয় না। বাংলা ওদের কাছে দুয়োরানি। কারণ বাংলায় সংখ্যালঘুরা বেশি থাকে, ওবিসি, তফসিলি, আদিবাসীরা বেশি থাকে। বাংলার সঙ্গে ওরা জেলাসি করে।
দূরদর্শন এখন গেরুয়া-দর্শন : তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, দূরদর্শনটাকে পর্যন্ত গেরুয়া বানিয়ে দিয়েছে। বেচারা সাধুরা কোথায় যাবে। কতদিন ত্যাগ করার পরে সাধুরা ওই ড়্রেসটা পরতে পারেন। আর বিজেপির চোর-ডাকাত-মাফিয়া-লুটেরারা গেরুয়া পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। গেরুয়া পরার অধিকার ওদের আছে? কতদিনের দূরদর্শন, তাকে গেরুয়া দর্শন করে দিয়েছে! ট্রেনলাইন, দেওয়ালগুলোও গেরুয়া। নতুন বাড়ি তৈরি করলেও গেরুয়া, আর্মি কোয়ার্টারগুলোও গেরুয়া।
তোমাদের দরজা বন্ধ করে দেবে : তাঁর কথায়, দেশটাকে যদি বাঁচাতে হয় এবারের লোকসভা ভোটে মোদিকে বিদায় দিতে হবে। যদি বিদায় না দেন, তবে ওরা গায়ের জোরে সিএএ-এনআরসি করবে। অভিন্ন দেওয়ানি বিধি করার নামে আপনাদের অধিকার কেড়ে নেবে, অস্তিত্ব কেড়ে নেবে। দেশটাকে বিক্রি করে দিচ্ছে। জাতি, সংবিধান, মনুষত্ব বিক্রি করে দিচ্ছে। থাকবে তাহলে কী! বলেছে, তিন মাস বাদে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বন্ধ করে দেবে। আর আমি বলি, এবার ইলেকশনে মানুষ তোমাদের দরজা বন্ধ করে দেবে, ভোট বন্ধ করে দেবে।