বিজেপির বন্ধুরা! ন্যূনতম লজ্জাও আপনাদের নেই?

সোজা কথাটা প্রথমেই সাফ সাফ বলে নেওয়া যাক। একটা ভুয়ো অভিযোগকে সামনে রেখে ভ্রষ্টাচারী জুমলাবাজদের পার্টি যে নোংরামি করল, সেটা মিথ্যাচারের চরমতম দৃষ্টান্ত। সন্দেশখালি কাণ্ডের শেষে আবার খালি সন্দেশের বাক্স হাতে বিজেপি। লিখছেন দেবলীনা মুখোপাধ্যায়

Must read

‘কী লেভেলে কাজ হয়েছে, বুঝতে পারছ দাদা! রেপ হয়নি, তাকে রেপে কনভার্ট করিয়ে দিয়েছে।’ বন্ধ ঘরে একটি চেয়ারের উপর পা তুলে সেকথা শুনছেন গঙ্গাধর কয়াল। বিজেপির সন্দেশখালি ২ মণ্ডলের সভাপতি। মাথা নাড়িয়ে বলছেন, ‘শুভেন্দুদাই সব কন্ট্রোল করত। … মহিলাদের শিখিয়ে পড়িয়ে রীতিমতো ট্রেনিং দিয়ে করানো হয়েছে ধর্ষণের অভিযোগ। … শুভেন্দুদা টাকা পাঠিয়েছিল। সবাই দু’হাজার করে নিয়েছিল। রেখাকেও দেওয়া হয়েছিল। তখন ও প্রার্থী হয়নি।’

আরও পড়ুন-বিজেপির হাত শক্ত করা বাম-কংগ্রেসকে একটিও ভোট নয়

বলার ধরন ও বাক্যের গঠন, কোনওটা দেখে-শুনে কখনও মনে হয়নি, কেউ শেখানো স্ক্রিপ্ট আওড়াচ্ছে কিংবা ভয়ের বশে সাজানো চিত্রনাট্যে অভিনয় করছে। আর তাতেই বিজেপির গ্যাস বেলুনের হাওয়া বেরিয়ে গেছে।
স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, সন্দেশখালিতে তৃণমূল নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ওঠা একের পর এক ধর্ষণের অভিযোগের গোটাটাই ‘সাজানো’। আর সেই চিত্রনাট্যের নেপথ্য নায়ক একজনই। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা কুভেন্দু মিথ্যাচারী, গদ্দার কুলের পোদ্দার স্বয়ং। বিজেপির স্থানীয় ১ নম্বর মণ্ডল সভাপতি শান্তি দোলুই ও এক মহিলা জবারানি সিংয়ের গলাতেও এসব কথারই প্রতিধ্বনি।
নির্বাচনী প্রচারে বাংলায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে এটাই বিজেপির মূল হাতিয়ার। এই ভিডিও প্রকাশ্যে আসায় তাই আঙুল উঠেছে মোদি-শাহের দিকেও। প্রশ্ন উঠছে, স্বাভাবিকভাবেই উঠছে, প্রধানমন্ত্রী মোদি কি আগে থেকেই এ-ব্যাপারে জানতেন? সেক্ষেত্রে ভোটের প্রচারে বাংলায় এসে কি তিনি জেনেশুনে অসত্য ভাষণ করছেন? আর যদি তিনি না জেনে থাকেন, তবে এই ভিডিয়ো দেখার পর কী পদক্ষেপ করবেন তিনি? ভোটে জেতার জন্য বাংলার মহিলাদের সম্মান নষ্ট করেছে বিজেপি। পদ্মের দিল্লির নেতাদের উচিত বাংলাকে কলুষিত করার জন্য ক্ষমা চাওয়া। সেই কাজটা কি মোদি-শাহ করবেন?

আরও পড়ুন-সিপিএমের মতো বিজেপিকেও উৎখাত করব, কেউ বুঝতে পেরেছিলেন, সন্দেশখালি কীভাবে টাকা দিয়ে সাজানো হয়েছিল?

সন্দেশখালির ভিডিয়োয় স্পষ্ট, মহিলাদের শেখানো হয়েছে ধর্ষণের অভিযোগ কী করে বলতে হবে। কয়েক হাজার টাকার বিনিময়ে তাঁদের বিপথে চালিত করা হয়েছে। আর দিল্লি থেকে নেতারা এসে বাংলার বদনাম করেছেন। সব দিক দেখে-শুনে মনে হচ্ছে, শুধু কুভেন্দু মিথ্যাচারী নন, এর সঙ্গে জাতীয় বিজেপি নেতারাও জড়িত। সন্দেশখালি নিয়ে গোটা দেশে শোরগোল পড়ে যায়। রোজ সেখানে কেন্দ্রীয় নানা কমিশন গিয়েছে। মানবাধিকার কমিশন থেকে শুরু করে আদিবাসীদের অধিকার রক্ষার কমিশন, জাতীয় মহিলা কমিশনও। ভোটের সময় বাংলার নানা ঘটনা নিয়ে নির্বাচন কমিশনও সক্রিয়। অথচ এই ভিডিয়ো প্রকাশিত হওয়ার ঘণ্টার ঘণ্টা কেটে গেল, কমিশন কোনও পদক্ষেপ করল না কেন? কেন? সন্দেশখালির ঘটনা কি ভোটকে প্রভাবিত করেনি? কর্নাটকে বিজেপির জোটসঙ্গী জনতা দল সেকুলারের সাংসদ প্রজ্জ্বল রেভান্নার বিরুদ্ধে যৌননিগ্রহের অজস্র অভিযোগ সত্ত্বেও তাঁর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হচ্ছে না। বিজেপির সাংসদ ব্রিজভূষণ শরণ সিংহের বিরুদ্ধে মহিলাদের নিগ্রহের পাশাপাশি পকসো ধারাতেও মামলা রয়েছে। তার পরও তাঁরই পুত্রকে লোকসভার টিকিট দিয়েছে বিজেপি। বাংলায় রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী মোদি সেদিন গিয়ে তাঁর বাসভবনে থেকে এসেছেন, অথচ শ্লীলতাহানির ঘটনা নিয়ে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। সমস্ত নারীবিরোধী নারীদের নির্যাতনকারীরা একটিই পার্টির সদস্য— বিজেপি। সেসব আড়াল করতেই প্রচার মন্ত্রী নরেন জুমলাবাজ মোদির যত কথা কেবল সন্দেশখালির মিথ্যে অভিযোগ নিয়ে, তাই না?
বিজেপি বাংলাবিরোধী। বিজেপি নারীবিরোধী। আর সেজন্যই যে বাংলায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মহিলাদের ক্ষমতায়নের কাজ করছেন, সেখানে সেই জোরের জায়গাটিতে আঘাত করতে চাইছে তারা। ভোটের জন্য সব করতে পারে বিজেপি। তার জন্য ধর্ষণের আইনকেও পরিহাস বানিয়ে রেখে দিয়েছে তারা। এমন জায়গায় নিয়ে এসেছে যে, এর পরে কোনও মহিলা থানায় ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করতে এলে তাঁকে বিশ্বাসই করবেন না কর্তব্যরত থানার অফিসারেরা।

আরও পড়ুন-রবীন্দ্রজয়ন্তী হবেই, স্পষ্ট জানালেন তৃণমূলনেত্রী

পলাতক বিজয় মালিয়া, নীরব মোদি, ললিত মোদিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল আর্থিক কেলেঙ্কারির। ব্যাঙ্ক তছরুপের। মোটা ঋণ নিয়ে ফেরত না দেওয়ার। দশ বছর আগে মোদিজির গালভরা গ্যারান্টি ছিল, সন্ত্রাসবাদী দাউদ-সহ সবাইকে দেশে ফিরিয়ে আনার। ভোটের পর ভোট গিয়েছে, সেই কথা কেউ রাখেননি। আর এবার যিনি পালিয়েছেন তিনি সন্দেশখালির শাহজাহান, বেহালার পার্থ চট্টোপাধ্যায় কিংবা পলাশিপাড়ার মানিক ভট্টাচার্য নন। তিনি নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহদেরই বিশেষ আশীর্বাদধন্য জোটসঙ্গী। এবারের নির্বাচনে হাসান লোকসভা কেন্দ্রে ‘৪০০’ জয়ের কাণ্ডারি, মায় ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’-এর উজ্জ্বল মুখ। কর্নাটকের হাইপ্রোফাইল কেন্দ্রে এনডিএ জোটের তরুণ প্রার্থী। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী দেবগৌড়ার নাতি। কর্নাটকের প্রাক্তন মন্ত্রী এইচ ডি রেভান্নার ছেলে। সন্দেশখালির ধর্ষণের অভিযোগের কোনও সারবত্তা নেই, কিন্তু কর্নাটকে রেভান্নার ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগটি তো উড়িয়ে দিতে পারবে না কেউ। একটা নয়, দু’টো নয়, তাঁর নারীনির্যাতনের সাড়ে তিন হাজার ভিডিও ক্লিপে শিকার ৪০০’র বেশি মহিলা। আর এটা ফাঁস করেছেন পলাতক প্রজ্জ্বলেরই গাড়ির চালক। এই ঘটনা সামনে আসতেই গোটা দেশে ‘অব কি বার ৪০০ পার’ স্লোগান বদলে গিয়েছে ওই চারশো মহিলার সুবিচার ও দোষীর কঠোরতম শাস্তি দাবির উচ্চকিত ঢক্কানিনাদে। কর্নাটকে বারবার প্রচারে গিয়ে নরেন্দ্র মোদির নারীসুরক্ষা, নারীশক্তির উত্থান ও উন্নয়নের বাণী ভেসে গিয়েছে কৃষ্ণা ও কাবেরীর শান্ত স্রোত বেয়ে।
তাই, আসুন, জোড়া ফুলচিহ্নে বোতাম টিপে আমরা নারীবিরোধী, বঙ্গবিরোধীর পতন নিশ্চিত করি। মা দুর্গা, মা কালীর বাংলায় ওরা যেন মাথা তুলতে না পারে, সেটা নিশ্চিত করার দায় আমার-আপনার— আমাদের সকলের।

Latest article