প্রতিবেদন : সন্দেশখালির (Sandeshkhali ) নির্যাতিতা পরিচয়ে যাঁরা রাষ্ট্রপতির কাছে গেলেন তাঁরাও নাকি ভুয়ো! তাঁরা আসলে নির্যাতিতাই নন, ভুয়ো অভিযোগকারিণী। তাঁদের নির্যাতিতা সাজিয়ে রাইসিনা হিলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পুরোটাই টাকার খেলা। সাজানো চিত্রনাট্য। এ-কথা কে বলছেন? স্বয়ং রেখা পাত্র! সন্দেশখালির তথাকথিত প্রতিবাদী মুখ ও বসিরহাটের বিজেপি প্রার্থী। সন্দেশখালি নিয়ে ফের ফাঁস নয়া ভিডিও। এই ভাইরাল ভিডিওর জেরে আরও বিপাকে বিজেপি। ভাইরাল ভিডিওতে রেখা পাত্রকে বলতে শোনা গিয়েছে, সন্দেশখালির নির্যাতিতা পরিচয় দিয়ে যাঁদের রাষ্ট্রপতি ভবনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তাঁরা নির্যাতিতাই নন। সন্দেশখালির ভুয়ো, সাজানো ঘটনা নিয়ে সব জেনেশুনে মিথ্যে প্রচার করার অভিযোগ নিয়ে এবার বিজেপির বিরুদ্ধে কমিশনের দ্বারস্থ হল তৃণমূল। এই অভিযোগে এবার কমিশনের কাছে গদ্দার অধিকারী-সহ বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানাল তারা। সন্দেশখালি-কাণ্ডকে (Sandeshkhali ) তৃণমূলের বিরুদ্ধে হাতিয়ার করতে চেয়েছিল বিজেপি। কিন্তু সেটাই এখন তাদের কাছে বুমেরাং। একের পর এক ভিডিও সামনে আসছে। আর প্রতিটি ভিডিও থেকে ক্রমশ পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে গোটা ঘটনাই ছিল সাজানো। প্রথমে গঙ্গাধর কয়ালের ভিডিও। তারপর স্থানীয় এক বিজেপি নেত্রীর ভিডিও। তারপর বুধবার সামনে এল খোদ রেখা পাত্রর একটি ভিডিও।
এই নতুন ভিডিও প্রকাশ্যে আসায় সাজানো ঘটনার তত্ত্ব আরও জোরদার হচ্ছে। তৃণমূল আগাগোড়াই বলছে, সন্দেশখালির ঘটনা সাজানো চিত্রনাট্য। বিজেপির মণ্ডল সভাপতি গঙ্গাধর কয়ালের ভিডিওই তার প্রমাণ। তারপর থেকে যত ভিডিও সামনে আসছে তা থেকে প্রমাণ হচ্ছে রাজ্য সরকার তথা বাংলাকে কালিমালিপ্ত করতে কীভাবে গোটা ঘটনার চিত্রনাট্য লেখা হয়েছিল। বুধবার রাতের ওই ভিডিওতে রেখা পাত্র-সহ তিন মহিলাকে দেখা গিয়েছে। এক মহিলাকে বলতে শোনা যায়, আমরা সন্দেশখালি আন্দোলনে যুক্ত। সবাই মিলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। এর মধ্যে আমাদের বাদ দিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে কারা চলে গেল? তাহলে আমরা কারা? আর এক মহিলা বলেন, শুনেছি অনুপ দাস ওদের নিয়ে গিয়েছিল। ওর সঙ্গে এক মহিলাও ছিল। তিনি কি তাহলে ভিতরে ভিতরে তৃণমূল করেন? রেখা পাত্র বলছিলেন, আমরা যারা নির্যাতিতা তারা সন্দেশখালিতে পড়ে আছি। তাহলে আমাদের হয়ে কারা গেল? আমরা আন্দোলনের মুখ, আমাদের না নিয়ে গিয়ে অন্যদের সাজিয়ে নিয়ে যাওয়ার সাহস কে দিল? এ প্রসঙ্গে সন্দেশখালির তৃণমূল বিধায়ক সুকুমার মাহাতো বলেন, আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি সন্দেশখালির ঘটনা পুরোটাই সাজানো। টাকা দিয়ে এই আন্দোলন তৈরি করা হয়েছে। সারা দেশ ও দুনিয়ায় সন্দেশখালির মহিলাদের সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হল। বিজেপির মতো একটা রাজনৈতিক দল এই ষড়যন্ত্র করেছিল। এদিকে এদিনই মিতা মাইতির অভিযোগের ভিত্তিতে স্থানীয় বিজেপি নেত্রী পিয়ালি দাসকে তলব করেছে পুলিশ।
আরও পড়ুন- গেরুয়া শিবিরের নিজেদের হিসেবেই অশনিসংকেত এসে গিয়েছে বিদায়বেলা
বৃহস্পতিবার দলের তরফে রাজ্যসভার সাংসদ সাগরিকা ঘোষ কমিশনে অভিযোগ জানিয়ে বলেন, আমরা বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী, গঙ্গাধর কয়াল ও শান্তি দলুইয়ের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ফৌজদারি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। যাঁদের প্রকাশ্যে অভিযোগ করতে দেখা গিয়েছে, তাঁদেরও হেফাজতে নিয়ে জেরা করা হোক। যেভাবে বাংলার মহিলাদের সম্মান সন্দেশখালিতে টাকার বিনিময়ে বিক্রি করা হয়েছে তার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকেও অবিলম্বে বাংলার মানুষের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। হেফাজতে থাকা শেখ শাহজাহান, শিবু হাজরা ও উত্তম সর্দারের বিরুদ্ধে ওঠা ধর্ষণের অভিযোগও মিথ্যে। তারও প্রমাণ হিসেবে এদিন কমিশনে গঙ্গাধর কয়ালের ভিডিও জমা দেন তৃণমূল সাংসদ। আরও এক অভিযোগকারিণী জবারানি সিংও এদিন স্বীকার করে নিয়েছেন, তাঁকে ভুল বুঝিয়ে ওই অভিযোগপত্রে সই করানো হয়েছিল। গদ্দার অধিকারীর নির্দেশে সন্দেশখালিতে মদ, আগ্নেয়াস্ত্র সরবরাহ করা হয়েছিল বলেও অভিযোগ করেন তিনি। মন্ত্রী ডাঃ শশী পাঁজাও এদিন সন্দেশখালি নিয়ে বিজেপিকে আক্রমণ করে বলেন, গঙ্গাধর কয়ালের ভিডিও সামনে আসার পরই মহিলারা বুঝতে পেরেছেন তাঁদের সঙ্গে কীভাবে প্রতারণা করা হয়েছে। হাজার, দু’হাজার টাকা দিয়ে কীভাবে মহিলাদের সম্মান বিক্রি করা হয়েছে। বুধবারই সন্দেশখালির আর এক মহিলা মিতা মাইতিও অভিযোগ করেছিলেন তাঁকেও ভুল বুঝিয়ে সাদা কাগজে সই করানো হয়েছিল। এখন অভিযোগ তুলতে চাওয়ায় তাঁর কাছে ২০ লক্ষ টাকা চেয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।