প্রতিবেদন : মহিলাদের ভুল বুঝিয়ে ভুয়ো ধর্ষণের অভিযোগ করানোয় এবার সন্দেশখালি থানায় বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্র, গঙ্গাধর কয়াল-সহ ১১ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হল শুক্রবার। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা টাকা দিয়ে ভুল বুঝিয়ে সন্দেশখালির একাধিক মহিলাকে দিয়ে ভুয়ো অভিযোগ করিয়েছিলেন। এই প্রসঙ্গে টেনেই এদিন বিজেপিকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। তিনি বলেন, গোধরার কথা শুনেছিলাম, পুলওয়ামার কথা শুনেছিলাম। এবার সন্দেশখালি দেখলাম। কয়েকটা ভোটের জন্য বিজেপি কী করতে পারে তার প্রমাণ সন্দেশখালির এই ষড়যন্ত্র। সাদা কাগজে মহিলাদের সই করিয়ে তাঁদের দিয়ে ভুয়ো ধর্ষণের অভিযোগ করানো হল। মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে এদিন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এর জল অনেক দূর গড়াবে। সন্দেশখালির ষড়যন্ত্র নিয়ে দল আইনি পথে যত দূর যেতে হয় যাবে। বাংলাকে কালিমালিপ্ত করার বিরুদ্ধে লড়াই চলবে। এরই মধ্যে জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন রেখা শর্মার বিরুদ্ধেও নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানাতে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠকে এ কথা জানিয়ে রাজ্যের মন্ত্রী ডাঃ শশী পাঁজা বলেন, সন্দেশখালির এক মহিলা রেখা শর্মার নাম করে বলেছেন দিল্লি থেকে কেউ একজন এসে জোর করে তাঁদের দিয়ে সাদা কাগজে সই করিয়ে ভুয়ো ধর্ষণের অভিযোগ করিয়েছেন।
আরও পড়ুন- কেজরিওয়ালের অন্তর্বর্তী জামিন, স্বাগত জানালেন তৃণমূলনেত্রী
এদিন মনোয়নপত্র জমা দিয়ে সন্দেশখালি নিয়ে বিজেপিকে নিশানা করেন অভিষেক। বলেন, স্বাধীনতার পর আজ পর্যন্ত বাংলাকে বদনাম করার সবচেয়ে বড় ষড়যন্ত্র সন্দেশখালি। আমরা গোধরা শুনেছিলাম, পুলওয়ামা শুনেছিলাম, এবার সন্দেশখালি দেখলাম। সন্দেশখালি নিয়ে গোটা দেশে বাংলাকে কলঙ্কিত করা হয়েছে। বিজেপি নিজেদের স্বার্থে পুলওয়ামা করিয়েছিল। আমরা বলছি না, বিজেপির নিয়োগ করা রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক বলছেন। সন্দেশখালির মহিলাদের ভুল বুঝিয়ে টাকা দিয়ে ভুয়ো ধর্ষণের অভিযোগ করানো হয়েছে। আমরা বলছি না, বিজেপির মণ্ডল সভাপতি গঙ্গাধর কয়াল, শান্তি দোলুই বলছেন। রাষ্ট্রপতির কাছে যাঁদের নির্যাতিতা বলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তাঁরাও ভুয়ো, তাঁরা সন্দেশখালির নির্যাতিতাই নন! আমরা বলছি না, বিজেপির প্রার্থী রেখা পাত্র এ-কথা বলছেন। একের পর এক ভাইরাল ভিডিওতে এই সব ষড়যন্ত্র সামনে চলে এসেছে। এই নিয়ে দলীয়ভাবে আমরা সুপ্রিম কোর্টে যাব। সম্প্রতি আরও ভিডিও সামনে এসেছে। যেখানে এক মহিলা বলছেন, তাঁকে দিয়ে জোর করে ধর্ষণের অভিযোগ করানো হয়েছে। এরপরই প্রধানমন্ত্রীকে তোপ দেগে অভিষেক (Abhishek Banerjee) বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে শ্বেতপত্র চেয়েছিলাম। সাদা কাগজ উনি দিয়েছেন ঠিকই। কিন্তু সেই সাদা কাগজে সন্দেশখালির মহিলাদের ভুল বুঝিয়ে ধর্ষণের ভুয়ো অভিযোগ লেখানো হয়েছে।
সন্দেশখালির মহিলাদের ভয় দেখিয়ে, ভুল বুঝিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ করিয়েছিলেন জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন রেখা শর্মা। এই অভিযোগে এদিন রেখা শর্মাকে নিশানা করেছে তৃণমূল। মন্ত্রী শশী পাঁজা এদিন বলেন, জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন রেখা শর্মার বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে যাচ্ছে তৃণমূল। শুক্রবার তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠকে শশী পাঁজা বলেন, সন্দেশখালির এক মহিলা রেখা শর্মার নাম করে অভিযোগ করেছেন। রেখা শর্মা তিনি রাজনৈতিকভাবে সিগন্যাল পেয়ে এখানে এসে পালে হাওয়া দিয়েছেন। মহিলা কমিশনের এই পক্ষপাতিত্ব খুবই দুর্ভাগ্যজনক। সন্দেশখালিতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিজেপি কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোকেও ব্যবহার করেছে। বিজেপির ইশারায় বিভিন্ন কমিশন সন্দেশখালিতে এসেছিল। সন্দেশখালি-কাণ্ড প্রতিদিন নয়া মোড় নিচ্ছে। একের পর এক ভিডিও প্রকাশ্যে আসছে। যা তৃণমূলের আনা ষড়যন্ত্রের তত্ত্বকেই সিলমোহর দিচ্ছে। শশী পাঁজা বলেন, পুরোটাই বিজেপির তৈরি। সাজানো চিত্রনাট্য। ২ হাজার টাকা, ৫০০ টাকার বিনিময়ে ধর্ষণের ভুয়ো অভিযোগ করা হয়েছিল। এই ঘটনায় রাষ্ট্রপতিকেও ভুল বোঝানো হয়েছে। সবমিলিয়ে যা হয়েছে, তাতে গোটা ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলার মানুষের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত।