অলোক সরকার: মধ্যরাত। ভিড়ে ঠাসা গ্যালারি অবশ্য বুঝতে দিচ্ছে না। ক্লাব হাউসের দুটো তলাতেই সিট উপচে সিঁড়িতে মানুষ। এত ভিড় বিরাট ম্যাচে ছিল? মনে হয় না। জনতার রায়ে কে জানে, হয়তো জিতেই গেল মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। কিন্তু এটা ভিড়ের হিসেব। ম্যাচের হিসেব অন্য। সেখানে কেকেআর। তুড়ি মেরে মুম্বইকে উড়িয়ে শেষ চারে গেল নাইটরা। ১৮ রানে জয়। ১২ ম্যাচে ১৮ পয়েন্ট হয়ে গেল কেকেআরের।
একটু আগেও কয়েক হাজার চোখ ছিল তাঁর উপর। তিনি রোহিত শর্মা। জনতা তাঁকে ছেড়ে যায় কী করে। শহরে আসা ইস্তক রোহিত আলোচনায়। অভিষেক নায়ারের সঙ্গে তাঁর কথাবার্তা ফাঁস হয়েছে। নাইট ক্রিকেটারদের সঙ্গে আড্ডার ছবি টিভিতে ধরা পড়েছে। রোহিত (১৯) যখন বরুণকে উইকেট দিয়ে গেলেন, ইডেন দ্বিধাবিভক্ত। এটা আনন্দের ছবি নাকি দুঃখের! এই দোটানার মধ্যেই ভেসে এল রো হিট … রো হিট…।
আরও পড়ুন-সন্দেশখালি : তৃণমূল যাচ্ছে রাষ্ট্রপতির কাছে
ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার নিয়ে সবথেকে আপত্তি এসেছিল রোহিতের কাছ থেকে। বলেছিলেন ক্রিকেট এগারোজনের খেলা। বারোজনের সঙ্গে খেলব কেন! কিন্তু আইপিএল এক বিচিত্র ধাঁধা। রোহিতকে এখানে ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হয়ে নামতে হল। জনতার তাতেই আনন্দ। রোহিত আর ইডেন অটুট সম্পর্ক। শোনা যাচ্ছে পরের আইপিএলে আমচি মুম্বই ছেড়ে কেকেআরে আসতে পারেন তিনি।
মুম্বইয়ের সামনে ১৫৮ রানের টার্গেট দিয়েছিল কেকেআর। যেটা ঈশান আর রোহিতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ছিল না। লো স্কোরিং ম্যাচে জেতার বড় শর্ত শুরুতেই ঝটকা দাও। বৈভব আর স্টার্ক সেটা পারেননি। ফলে পাঁচ ওভারের মধ্যে দুই প্রান্তে দেখা গেল নারিন ও বরুণকে। তবু পাওয়ার প্লে-র শেষে মুম্বই ছিল ৬২/০। কিন্তু ঈশান (৪০) ফিরতেই ছবিটা ঘুরে গেল। সূর্য করলেন ১১ রান। হার্দিক ২। মুম্বই যে জিতবে না, সেটা তখনই পরিষ্কার। তারা থেমে গেল ১৩৯-এ। হর্ষিত, রাসেলের ২ উইকেট।
দিনভর বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি। বিকেলের পর একটানা ঝিরঝিরে বৃষ্টি। কলকাতার চোখ তখন আকাশের দিকে। খেলা হবে? হাওয়া অফিসের খবর ছিল, আটটার পর বৃষ্টি থামবে। বোধহয় তাই, প্রকৃতির রোষানলকে পাত্তা না দিয়ে সন্ধ্যা থেকেই জনতার ঢল নামল ইডেনের দিকে। মাথার উপর অঝোর বর্ষণ। কারও হাতে ছাতা, কারও হাতে সেটাও নেই। তাতে পরোয়াও নেই! কারণ যেতেই হবে মাঠে।
আরও পড়ুন-আজ আন্তর্জাতিক মাতৃদিবস
শুক্রবার থেকে সাদা প্লাস্টিক চাদরের নিচে ছিল ইডেন। ফোর লেয়ার কভার। সৌরভ জমানায় এই প্লাস্টিক কেনা হয়েছিল লন্ডন থেকে। বৃষ্টি থামার পর প্রথমে এই প্লাস্টিক তোলা। সেটাও জল মুছে নিয়ে। তারপর গোটা চারেক সুপার সপার চালিয়ে ঘাসের উপরের জল শুষে নেওয়া হল বেশ কিছুক্ষণ। অতঃপর ৮টা ৪৫ মিনিটে মাঠ পরিদর্শন করে দুই আম্পায়ার জানিয়ে দিলেন, ন’টায় টস হবে। খেলা শুরু ৯টা ১৫-তে। এটা ১৬ ওভারের ম্যাচ।
দু’দিন ধরে ঢাকা পড়ে থাকা উইকেটে আগে ব্যাট করা যে ঝুঁকির, সেটা যে কেউ বলবে। সুতরাং হার্দিক পান্ডিয়ার টসে জিতে কেকেআরকে ব্যাট করতে পাঠানোয় অবাকের কিছু নেই। হার্দিকদের জন্য এটা নিয়মরক্ষার ম্যাচ। জেতা-হারা কোনওটাতেই তাঁদের জন্য প্লে অফের দরজা খুলত না। তবু আইপিএলে কলকাতা-মুম্বই গোলাপের যুদ্ধ। হিসেবটা ২৩-১০ মুম্বইয়ের অনুকূলে। কিন্তু অন্তত এই ম্যাচে সেটা নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার হয়নি নাইটদের। পরের ধাপে যেতে দরকার ছিল স্রেফ এক পয়েন্টের।
আগেরদিন জেরাল্ড কোয়েতজে বলছিলেন, সল্ট আর নারিনের জন্য কী পরিকল্পনা আছে সেটা বলব না। খেলা হোক, দেখবেন। এমন নয় যে দুটো উইকেট নিতে সাংঘাতিক কিছু পরিকল্পনা করতে হল মুম্বইকে। কিন্তু সাত বলে মধ্যে ১০ রানে কেকেআরের দুই ওপেনার ড্রেসিংরুমে ফেরত গেলেন। সল্ট (৬) তুষারাকে তুলে মারতে গিয়ে ধরা পড়লেন। নারিন(০) বুমরার প্রথম বলের শিকার। বাইরে যাবে বলে ছেড়ে দিয়েছিলেন। বাঁহাতি ব্যাটারের জন্য ইনসুইং। বল অফ স্ট্যাম্প ফেলে দিল।
আরও পড়ুন-এবার সন্দেশখালি ষড়যন্ত্রের দ্বিতীয় পর্বের পর্দাফাঁস
কেকেআরের আসল জোর দুই ওপেনার। পাওয়ার প্লে-তে নারিন আর সল্ট নাইটদের এমন জায়গায় পৌঁছে দিচ্ছিলেন যে, পরের দিকে ব্যাটারদের কাজ সহজ হয়ে যাচ্ছিল। এদিন শ্রেয়সও (৭) খুব তাড়াতাড়ি ফিরে যান। ফলে পাওয়ার প্লে-র শেষে নাইটদের রান ছিল ৫২/৩। বলা হয়নি, নীতীশ রানা এই ম্যাচে দলে ফিরেছেন। আঙুলে চোট ছিল। প্লে অফের আগে তাঁকে খেলিয়ে নিল দল।
নাইটরা যে শেষপর্যন্ত ১৬ ওভারে ১৫৭/৭ তুলতে পারল, সেটা মিডল ওভারে ভেঙ্কটেশ (৪২), রাসেল (২৪) ও নীতীশের জন্য (৩৩)। মিডল অর্ডার নিয়ে নাইট ড্রেসিংরুমে চাপ তৈরি হচ্ছিল, সেটা প্লে অফের আগে কেটে গেল। নীতীশের ফেরাটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। সানরাইজার্স ম্যাচে চোট পেয়েছিলেন। এদিন ফিরলেন। টিম ম্যানেজমেন্ট প্লে অফের আগে নীতীশকে মাঠে ফেরাতে চেয়েছিল। এছাড়া রিঙ্কু সিং করেন ২০ রান।