এই তীব্র গরমকে উপেক্ষা করে জেলায় জেলায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ‘দিদি’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। এবার নির্বাচনের থেকেও আমাদের মাথাব্যথার কারণ হচ্ছে এই দুঃসহ গরমের পারদ কখন কমবে? সবার প্রাণ যখন ত্রাহি মধুসূদন তখন আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এইসব গরম তুচ্ছ। তিনি সেসব ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়ে মাইলের পর মাইল চলেছেন বাংলার গ্রামেগঞ্জে, শহরে, শহরতলিতে। গরমের দুপুরে তাঁর শ্বেতশুভ্র পোশাক অনেকের মনেই শান্তি আনছে, আনছে আশাও। জেড প্লাস সিকিউরিটিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তিনি চলে যাচ্ছেন ভোটারদের মাঝে। যে রাস্তা দিয়ে হাঁটছেন, উপচে পড়া ভিড় তাঁর হাত একটু ছোঁয়ার জন্য ব্যাকুল। এই হাতগুলি অধিকাংশই মেয়েদের হাত। এই হাত বাংলার বধূদের হাত। এই হাত মা-বোনেদের লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের হাত, এই হাত কন্যাশ্রী দিদিমণিদের হাত, এই হাত স্বাস্থ্যসাথীর সাহসিনীদের হাত।
ভোটের প্রচার এখন তুঙ্গে। তার সঙ্গে তাল ঠুকেছে আবহাওয়া। যে প্রখর তাপ জ্বালিয়ে দিচ্ছে সবকিছু, যে তাপের ছোবলে মানুষ পারতপক্ষে বাইরে বেরচ্ছেন না, সেখানে ‘আমাদের দিদি’ কী সাবলীলভাবে নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন! টিভির পর্দা থেকে যতটুকু দেখছি তাতে তাঁর জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি এতটুকু। সেই চিরায়ত ছবিরই পুনরাবৃত্তি। সারা স্টেজ জুড়ে তিনি হাঁটছেন। আঙুল তুলে বিরোধীদের তুলোধোনা করছেন, প্রার্থীদের সঙ্গে ভোটারদের পরিচয় করাচ্ছেন, শেষ হচ্ছে বাংলার নাচ-গান দিয়ে। নির্বাচনী প্রচারও যে এত রঙিন হয়, তা তাঁর সভায় না গেলে বোঝা যাচ্ছে না। আর এটাই তাঁর মাস্টার-স্ট্রোক।
২০১১ সাল থেকে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর (Mamata Banerjee) পদে আসীন। কিন্তু লড়াই এখনও অব্যাহত। এখন পদ্মফুলই তাঁর প্রধান প্রতিপক্ষ।
আরও পড়ুন-ন্যায্য দামে সুফল বাংলার স্টলে পদ্মার ইলিশ
উনি বিরোধীদের খুব ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। আর তা করেন বলেই সত্যিটা ধরতে পারেন এবং বিরোধীরা জব্দ হন। এইসব কথা বলার কারণ আমি স্বচক্ষে তাঁর কার্যপদ্ধতি অত্যন্ত কাছ থেকে দেখেছি।
এইবারের লোকসভা ভোটে তাঁর দলের মাথায় বহু কলঙ্কের বোঝা। এখনও এইসব অভিযোগের কোনও সত্যতা প্রমাণিত হয়নি। অন্য কোনও ব্যক্তি হলে এই অবস্থায় কী করতেন জানি না। কিন্তু ‘দিদি’ একাই একশো। দল যাতে নিশ্চল থাকে সে ব্যাপারে তিনি যথেষ্ট সজাগ। দু’হাত দিয়ে পক্ষীমাতার মতো দলকে ধরে রেখেছেন। নির্বাচন প্রচারকে ঘিরে চমৎকার একটি পরিকল্পনা করেছেন। চতুর্থ দফার ভোটে সবচেয়ে নজরকাড়া কেন্দ্র কৃষ্ণনগর। কৃষ্ণনগরের ধুবুলিয়ায় তিনি প্রথম প্রচার শুরু করেন গত ৩১ মার্চ। কেন তিনি এই কেন্দ্রটিকেই প্রথম নির্বাচনী প্রচার কেন্দ্র রূপে বেছেছিলেন? অনুমান করি, লোকসভা থেকে এই কেন্দ্রের প্রার্থী মহুয়া মৈত্রকে যেভাবে অসংবিধানিক ভাবে বহিষ্কার করা হয় এবং তাঁর প্রার্থিপদ কেড়ে নেওয়া হয়, তার প্রতিবাদেই এই পদক্ষেপ। তাঁর কথায় আদপেই কর্ণপাত না করে তাঁর দলের উপর চাপ সৃষ্টি করার জন্যই যেন অনেকটা এই ঘটনাটা ঘটায় বিজেপি সরকার। নেত্রী যেন তারই যোগ্য জবাব দেওয়ার জন্য ওই কেন্দ্র থেকে পুনরায় মহুয়া মৈত্রকেই প্রার্থী করলেন। তিনি সম্ভবত কেন্দ্রের বিগত সরকারকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এটাই বোঝাতে চাইলেন কতটা ‘হার্ড নাট’ তিনি। একই সঙ্গে দলকে একটা বিশ্বাসযোগ্যতার জায়গাতেও নিয়ে আসতে চেয়েছিলেন!
এবারের প্রচার তিনি কৃষ্ণনগর থেকে শুরু করলেও এরপর চলে যান উত্তরবঙ্গে। তারপর টানা সেখানে প্রচার ও রোড শো করে চলে আসেন দক্ষিণবঙ্গে। দক্ষিণবঙ্গের রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনসভার পরে তিনি দীর্ঘদিন পরে কলকাতায় ফেরেন। দু’দিন বিশ্রামের পর তিনি আবার শুরু করে দেন তাঁর নির্বাচনী প্রচার।
যেভাবে তিনি তাঁর কর্মসূচি ঠিক করেছেন তাতে চতুর্থ দফা ভোটের মধ্যেই তাঁর রোড শো ও জনসভা মিলিয়ে ৬০টি কর্মসূচি হয়ে গিয়েছে। বাকি আছে এখনও তিন দফা ভোট। ঝড়ের বেগে তিনি যেভাবে নির্বাচনী প্রচারে ঘুরছেন, তাতে ৬০ থেকে ১০০ হতে কেবল সময়ের অপেক্ষা।
তাঁর পছন্দের এবং নিশ্চিন্তের যেসব কেন্দ্র আছে যেমন ডায়মন্ড হারবার, বারাসত, দমদম, যাদবপুর, উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতা সহ এরকম ১২-১৩টি কেন্দ্রে তিনি এখনও একবারও পা রাখেননি। এগুলির নির্বাচনী প্রচারে তিনি জনসভা করতে শুরু করলে তা যে সেঞ্চুরি ছাড়াবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
এই যে বিরোধীদের পাখির চোখ করে তিনি এগিয়ে চলেছেন তা যে এক অভিনব একক লড়াই, এ কথা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন বিরোধীরা।
এই বিরোধী কারা? এই বিরোধীরা হলেন জগাই মাধাই গদাইদের সমাহার। কুভেন্দু অধিকারী, অবলাকান্ত মজুমদার, অধৈর্য চৌধুরী, কমরেড হালুম হুলুম, সবাই আছেন ওই বৃত্তে। তাঁদের বিরুদ্ধে অগ্রনায়িকা এই জননেত্রী। ঈশ্বরপ্রদত্ত দুর্জয় সাহসের এক মহিলা। ভাঙবেন তবু মচকাবেন না। তাঁর এই দৃঢ় মনই মা-মাটি-মানুষকে আবার জয়যুক্ত করবে। এ-ব্যাপারে নিশ্চিত আমি। এ-ব্যাপারে নিশ্চিত গোটা বাংলা।