রবীন্দ্রনাথ। নিভৃত প্রাণের দেবতা। আমাদের গৌরব। আমাদের অহংকার। তিনি তাপিত প্রাণে তৃষ্ণার জল। আছেন শয়নে স্বপনে জাগরণে। সুখে দুঃখে, হাসি কান্নায়। আছেন পরানসখা হয়ে। বন্ধু হয়ে। পরম আশ্রয় হয়ে। তিনি অন্তত একশো বছর এগিয়ে থাকা একজন মানুষ। মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিকতার। তাঁর জন্যই আজ সারা বিশ্ব চিনেছে বাঙালিকে।
আরও পড়ুন-আজ ঠিক হবে প্লে-অফের চতুর্থ দল
বাঙালির অন্দরমহলে সারা বছরই চলে রবীন্দ্র-চর্চা। নানাভাবে। তবে বৈশাখ মাসে উৎসাহ বহুগুণ বেড়ে যায়। মূলত পঁচিশে বৈশাখ, রবীন্দ্রনাথের জন্মদিনকে সামনে রেখে। জেগে ওঠে এক আকাশ আবেগ। কৃষ্ণচূড়া ফোটে। বাড়ে গরমের তীব্রতা। তার মধ্যেই আয়োজিত হয় রবীন্দ্রজয়ন্তী। পাড়ায় পাড়ায়, ক্লাবে ক্লাবে, অফিসে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। মহোল্লাসে নাচ, গান, আবৃত্তি, নাটক, নৃত্যনাট্যে মেতে ওঠেন বিভিন্ন বয়সিরা। পৃথিবীর অন্য কোনও কবিকে ঘিরে এতটা উন্মাদনা হয় কি? প্রশ্ন জাগে।
প্রতি বছর পঁচিশে বৈশাখ উপলক্ষে মুক্তি পায় বিভিন্ন শিল্পীর গাওয়া রবীন্দ্রসঙ্গীত। নবরূপে, নবসাজে। আগে প্রকাশ পেত ক্যাসেটে, সিডিতে, এখন ডিজিটাল মাধ্যমে।
গত বছর থেকে এসভিএফ মিউজিক নিয়েছে একটি বিশেষ উদ্যোগ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে স্মরণ করে তাঁর জন্মদিনে শ্রোতাদের উপহার দিচ্ছে বিভিন্ন শিল্পীর গাওয়া রবিঠাকুরের গান। আগেরবার ‘দ্য আরএনটি প্রোজেক্ট চ্যাপ্টার ওয়ান’ উদ্যোগটি দারুণ সাফল্য পেয়েছিল। শুনেছিলেন বহু মানুষ। উৎসাহিত হয়ে এসভিএফ মিউজিক এবারও প্রকাশ করেছে বিভিন্ন শিল্পীর গাওয়া রবীন্দ্রনাথের গানের অডিও অ্যালবাম ‘দ্য আরএনটি প্রোজেক্ট চ্যাপ্টার টু’। গত ৮ মে, পঁচিশে বৈশাখ ডিজিটাল অ্যালবামটি মুক্তি পেয়েছে এসভিএফ মিউজিক ইউটিউব চ্যানেলে। ইতিমধ্যেই শুনেছেন দেশ-বিদেশের অগণিত শ্রোতা। এতে আছে কবিগুরুর ১১টি গান। গেয়েছেন এই সময়ের বিশিষ্ট সংগীত শিল্পীরা।
আরও পড়ুন-অভিনেত্রীর আয়ু
শুরুতেই ‘ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে’। গানটি গেয়েছেন অমৃতা সিং। তিনি গায়ক অরিজিৎ সিংয়ের বোন। তাঁর সঙ্গে গলা মিলিয়েছে ছোট্ট তানি ও মুনি। অদ্ভুত মায়া লেগে রয়েছে পরিবেশনার মধ্যে। শিল্পীদের আন্তরিকতার ছোঁয়া বেশ স্পষ্ট।
এই সময়ের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী জয়তী চক্রবর্তী। রবীন্দ্রনাথের গানে এই শিল্পীর পারদর্শিতা নিয়ে কোনও সংশয় নেই। তাঁর কণ্ঠে শোনা গেল ‘আজ জোৎস্না রাতে সবাই গেছে বনে’। গানটি বিশেষভাবে মনকে ছুঁয়ে যায়। বারবার শুনতে ইচ্ছে করে।
অরিন্দম গেয়েছেন ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে’। এ ছাড়াও, ‘আমার মন মানে না’ গানটিতেও তিনি কণ্ঠ দিয়েছেন। দুটি পরিবেশনাই বেশ অন্যরকমের।
‘মম চিত্তে নিতি নৃত্যে’ শোনা গেল অন্তরা ভট্টাচার্যের কণ্ঠে। গানটি সাধারণত দ্রুত লয়ে শুনতেই শ্রোতারা অভ্যস্ত। এখানে গীত হয়েছে ধীর লয়ে। ‘রক্তকরবী’ নাটকের গান ‘ভালোবাসি ভালেবাসি’। মনে করায় নন্দিনী ও বিশু পাগলের কথা। রঞ্জনের কথাও। গানটি শোনা গেল সোমলতা আচার্য চৌধুরীর কণ্ঠে। এ-ছাড়াও তিনি গেয়েছেন ‘ছিন্ন পাতার সাজাই তরণী’। দুটি গানেই শিল্পী নিজের নামের প্রতি সুবিচার করেছেন।
‘সেদিন দুজনে দুলেছিনু বনে’ গানটি কণ্ঠে নিয়েছেন শ্যামশ্রী সাহা। এই শিল্পী নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন। মুগ্ধ করেছেন। শুনতে শুনতে মন চলে যায় অন্য জগতে। দীপান্বিতা আচার্য ও সূচনা শেলির পরিবেশনা ‘তুমি খুশি থাকো’। চর্চিতকণ্ঠে দুই শিল্পী গেয়েছেন গানটি। বসন্তের গান, দোল উৎসবের গান ‘ওরে গৃহবাসী’। এই গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন সঞ্জীতা ভট্টাচার্য। আবেগ আছে। তবে নিয়ন্ত্রিত। শুনতে ভাল লাগে। আছে শীর্ষা চক্রবর্তীর কণ্ঠে একটি গান ‘আজি নাহি নাহি নিদ্রা’। বাকি গানগুলোর মতো ততটা বহুশ্রুত নয় এই গানটি। শিল্পীর পরিবেশনা এককথায় অসাধারণ।
আরও পড়ুন-পুষ্টি, অপুষ্টি ও মেয়েরা
‘দ্য আরএনটি প্রোজেক্ট চ্যাপ্টার টু’-এর সংগীত পরিকল্পনা করেছেন অরিন্দম। তাঁর আয়োজন প্রশংসার দাবি রাখে। মিউজিক কখনওই মূল গানকে ছাপিয়ে যায়নি। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বয়ে গেছে নিচু স্রোতে। দিয়েছে কানের আরাম, প্রাণের আরাম। গানের ভিতর দিয়ে যেন ভেসে আসে জুঁইফুল, বেলফুলের সুগন্ধ। পাওয়া যায় অন্যরকম স্বাদ। যা এককথায় ইউনিক। সোশ্যাল মিডিয়ায় আন্তর্জাতিক মানের এই কাজটির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন অনেকেই। বর্তমান সময়ের দুই বিশিষ্ট অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় এবং অনির্বাণ ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, ‘দ্য আরএনটি প্রোজেক্ট চ্যাপ্টার ওয়ান’ ভাল লেগেছিল। ‘দ্য আরএনটি প্রোজেক্ট চ্যাপ্টার টু’ও ভাল লাগছে। এর ফলে রবীন্দ্রনাথের গান সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে।
কাজটি সম্পর্কে অরিন্দম জানিয়েছেন, ‘দ্য আরএনটি প্রোজেক্ট চ্যাপ্টার ওয়ান’ ছিল বৈচিত্র্যপূর্ণ। ‘দ্য আরএনটি প্রোজেক্ট চ্যাপ্টার টু’ও একই রকমের বৈচিত্র্যপূর্ণ। সাউন্ড ডিজাইনে আধুনিকতা এবং কোমলতাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। শুরুতে আমরা তালিকায় প্রায় ৩০টি গান রেখেছিলাম। সেখান থেকে এই ১১টি গান নির্বাচন করা হয়েছে। শ্রোতাদের ভাল লেগেছে, এটাই আমাদের পরম প্রাপ্তি।