প্রতিবেদন : বিজেপির প্ল্যান ‘এ’ সন্দেশখালিতে চলেছে কোটি কোটি টাকার খেলা। চক্রান্ত করার জন্য ৫০০০, আবার কাউকে দিয়ে লিখিয়ে নেওয়ার জন্য ২০০০ টাকা দিয়েছে। মঙ্গলবার উত্তর ২৪ পরগনার দুই কেন্দ্র বসিরহাট ও বারাসতের জোড়া প্রচারমঞ্চ থেকে সন্দেশখালিতে প্ল্যান এ-র পর বিজেপির প্ল্যান-বি নিয়ে সতর্ক করে দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ভোটের আগে বিজেপির প্ল্যান-এ ছিল সন্দেশখালি। মা-বোনেরাই তা বাতিল করে দিয়েছেন। এখনও প্ল্যান-বি জারি রয়েছে। সেই প্ল্যান বি-তে ধর্মস্থানে অশান্তি তৈরির চেষ্টা করছে বিজেপি। তাই এলাকা যাতে ঠান্ডা থাকে, তার জন্য প্রশাসনকে সতর্ক করলেন মুখ্যমন্ত্রী। একইসঙ্গে তিনি জানিয়ে দিলেন, বসিরহাটে নুরুল জিতলে প্রথমেই তিনি আসবেন সন্দেশখালিতে।
আরও পড়ুন-
অসম্মানের খেলা : এদিন বসিরহাটের প্রার্থী হাজি নুরুলের সমর্থনে প্রচারমঞ্চ থেকে শুরুতেই সন্দেশখালির প্রসঙ্গ টানলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, সন্দেশখালির মা-বোনেদের সঙ্গে যা ঘটেছে, মা-বোনেদের যেভাবে অসম্মান করা হয়েছে, তার জন্য হৃদয়ের অন্তস্তল থেকে আমি দুঃখিত, মর্মাহত। মা-বোনেদের নিয়ে যেন এই অসম্মানের খেলা কেউ না খেলে। এই জিনিসগুলো বাইরে না এলে মানুষ বুঝতেই পারত না বিজেপি চক্রান্তটা কীভাবে করেছিল, আরও যে কোনও জায়গায় করতে পারে। এই তো ধূপগুড়িতে তৃণমূল করত বলে বিজেপি থ্রেট করেছে, দল না ছাড়লে পেট্রোল পাম্প তুলে দেবে। তারপর রাজবংশীদের একটা মন্দিরে আঘাত হয়েছে। দেখা গেল বিজেপিতে যারা চলে গিয়েছে, ঘটনাটা তারাই ঘটিয়েছে।
চক্রান্তে ৫০০০ : তৃণমূলনেত্রী বলেন, বিজেপি ভোটের আগে চক্রান্ত করেছে। চক্রান্ত করার জন্য ৫০০০, আবার কাউকে দিয়ে লিখিয়ে নেওয়ার জন্য ২০০০ টাকা দিয়েছে। এই তো বিজেপির পার্টি অফিস থেকে কোটি কোটি টাকা বের হচ্ছে। আর যে সেটা ধরল, তাকেই নির্বাচন কমিশন সাসপেন্ড করে দিল। তাহলেই ভাবুন, কীভাবে চলছে আমাদের দেশটা!
অত্যাচার সবচেয়ে বেশি : সন্দেশখালি ইস্যুতে এদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও একহাত নেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহাশয় আপনি একজনকে ফোন করছেন সবকিছু আগেভাগে শিখিয়ে দিয়ে। আর সবাইকে শোনাচ্ছেন। ক’জনের খোঁজ নেন। আপনার আমলে ভারতবর্ষে মেয়েদের উপর অত্যাচার হয়েছে সবচেয়ে বেশি। আপনার রাজ্য উত্তরপ্রদেশ তফসিলিদের উপরে অত্যাচারে নম্বর ওয়ান। আমাদের এখানে যে দু’-একটা ঘটনা হয়, আমরা সঙ্গে সঙ্গে তার ব্যবস্থা নিই। রাম হোক বা রহিম, কেষ্ট হোক বা বিষ্টু— কাউকে ছেড়ে কথা বলি না, অ্যাকশন নিই।
আরও পড়ুন-জগন্নাথদেবকে নিয়েও এবার বিজেপির নোংরা রাজনীতি
বিজ্ঞাপন বেআইনি : তৃণমূল সুপ্রিমোর কথায়, বিজেপি চক্রান্ত করতে কোটি কোটি টাকা খরচ করে। অথচ ১০০ দিনের কাজে গরিব মানুষের টাকা দেয় না। এই যে মোদিবাবু খবরের কাগজে বড় বড় বিজ্ঞাপন দিয়েছিল মোদির গ্যারান্টি বলে। এটা বেআইনি। আমাদের আক্রমণ করেছিল। আমরা বারবার বিচার চেয়েও পাচ্ছিলাম না। অবশেষে হাইকোর্ট বলে দিয়েছে, হ্যাঁ এটা বেআইনি।
বোমা ফাটিয়ে নাচছিলেন : এদিনের সভা থেকে গদ্দার অধিকারীকেও নিশানা করেন। তৃণমূলনেত্রী বলেন, একজন বোমা ফাটিয়ে নাচছিলেন— ধিন তাক ধিন তাক তা। কী না, ২৬ হাজার চাকরি খেয়েছে! এরপর তিনি বলেন, দু’-একজনের ভুলভ্রান্তি থাকতে পারে। যদি আপনাদের মনে হয়, কারও উপরে রাগ আছে। আপনাদের বলার অধিকার আছে। আপনারা একটা চিঠি আমার বাড়িতে পৌঁছে দেবেন। আমি একদিন হোক দু’দিন হোক, ঠিক দেখে নেব। সব করতে পারি, তা তো নয়। কিন্তু ৯৯.৯ শতাংশ ক্ষেত্রে যতটা করতে পারি, করে দিই।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
সুন্দরবন ও বসিরহাট নিয়ে প্ল্যান : মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সুন্দরবন নিয়ে নতুন মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করছি, আপনাদের নতুন জেলা হবে। বসিরহাটের বেশিরভাগ অঞ্চলগুলি নিয়ে একটা জেলা হবে। ওই দিকে বকখালি, সাগরদ্বীপ নিয়ে আরও একটা জেলা হবে। বসিরহাটে অনেক মাছের ভেড়ি আছে। অনেকে অনেকের ভেড়ি দখল করে নেয়। আমরা তাই একটা পলিসি তৈরি করছি। জোর করে ভেড়ি কেড়ে নেওয়া যাবে না। যার ভেড়ি সে চাষ করুক। না হলে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলো চালাক। কিন্তু সরকারের রেকর্ডে নাম রাখতে হবে। সরকারকেও তার জন্য একটা শুল্ক দিতে হবে। তাতে ভেড়িতে অধিকার বজায় থাকবে।
সব করেছি : তিনি বলেন, ২০২১ সালের ভোটের আগে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার করে দেব বলেছিলাম, কৃষকদের সাহায্য করার কথা বলেছিলাম। যা যা বলেছিলাম সব করেছি। বিনা পয়সায় রেশন আমরা দিচ্ছি, ১০০ দিনের কাজের টাকাও আমরা দিয়ে দিয়েছি। যেটা মোদির দেওয়ার কথা ছিল। পাশাপাশি ৫০ দিনের কাজ কর্মশ্রী ও বাংলার বাড়ি দেওয়ার কথাও জানান মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, দেড় বছরের মধ্যে বাড়িতে বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছে যাবে।
আরও পড়ুন-সচেতনতাই একমাত্র প্রতিষেধক
সার্টিফিকেট নেব না : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমরা কোনও ভেদাভেদ করি না। আমাকে তো ওরা চিরকাল বলে, আমি নাকি হিন্দু ধর্মে বিশ্বাস করি না। ভাগ্যিস হিন্দু ছিলাম, নয়তো কবে বলে দিত বিদেশ থেকে এসেছে, নয়তো এনআরসিতে ফেলে দিত। আমি কখনও বিজেপির থেকে সার্টিফিকেট নিতে যাব না যে, আমি হিন্দু না মুসলমান, শিখ না খ্রিস্টান। আমার সবথেকে বড় পরিচয়, আমি মানুষ।
সঙ্গে জুটেছে সিপিএম : তাঁর কথায়, বিজেপি একটা নোংরা পার্টি, তার সঙ্গে জুটেছে সিপিএম। সেই সিপিএম, যারা হাত কেটে নিয়েছিল। ১৯ জন আনন্দমার্গীকে বালিগঞ্জের রাস্তার ওপর ফেলে জ্বালিয়ে মেরেছিল। এই সিপিএম দল আমাকে রাস্তার ওপর ফেলে আমার মাথা ফাটিয়ে চৌচির করে দিয়েছিল। হাজার হাজার লোক খুন করেছিল। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামে আজও অনেক লোকের খবর নেই। তাপসী মালিককে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছিল। যারা সিপিএম করত, তারাই এখন বিজেপিতে প্রোটেকশন পাওয়ার জন্য।