প্রতিবেদন : জঙ্গলমহলের মানুষের কাছ থেকে বিজেপি ভোট নিয়েছে কিন্তু কোনও কাজ করেনি। এখানকার মানুষদের ভোটে জিতে তাদেরই ১০০ দিনের কাজের টাকা, আবাসের বাড়ির টাকা আটকেছে। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস না জিতলেও সারা বছর দুঃখে-বিপদে মানুষের পাশে থেকেছে। আগামী দিনেও থাকবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার জঙ্গলমহলের ঘরে ঘরে উন্নয়ন পৌঁছে দিয়েছে। মঙ্গলবার তিন দলীয় প্রার্থী বাঁকুড়ার অরূপ চক্রবর্তী, পুরুলিয়ার শান্তিরাম মাহাতো ও বিষ্ণুপুরের সুজাতা মণ্ডলের সমর্থনে জনসভায় এভাবেই বিজেপিকে চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, শান্তি ফিরিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উন্নয়নও তৃণমূল সরকারই করেছে। গত পাঁচ বছরে বিজেপি জঙ্গলমহলের জন্য কী করেছে তার জবাব দিক। বিজেপির প্রার্থী ও নেতারা ভোট চাইতে গেলে গাছে বেঁধে রেখে জিজ্ঞেস করবেন, গত পাঁচ বছর কোথায় ছিলেন? কী কাজ করেছেন? মঙ্গলবার বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও সোনামুখীর পরের পর সভা থেকে বিজেপিকে তুলোধোনা করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন বাঁকুড়ার শালতোড়া, সোনামুখী ও পুরুলিয়ার বলরামপুরে তিন দলীয় প্রার্থী অরূপ চক্রবর্তী, শান্তিরাম মাহাতো এবং সুজাতা মণ্ডলের সমর্থনে জনসভা করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। দুপুরের প্রখর রোদেও তিনটি সভাতেই ছিল জনপ্লাবন।
আরও পড়ুন-গদ্দারের অফিসে অসামাজিক কাজ, পুলিশ যেতেই শুরু সপার্ষদ গুন্ডামি
এদিন বাম আমলে জঙ্গলমহলের খুন, সন্ত্রাস, মাওবাদী হানার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে অভিষেক বলেন, ১৫ বছর আগে বাঁকুড়ার অবস্থা কী ছিল! বাঁকুড়ার অবস্থা ছেড়ে দিন, পুরো জঙ্গলমহলের মাওবাদী হামলা, সন্ত্রাস, খুনের রাজনীতি চলত। সারা বছর গুন্ডামি-অশান্তি লেগেই ছিল। মানুষ জল পেত না। ২০১১ তে পরিবর্তনের সরকার আসার পর জলের প্রকল্প হয়েছে। হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে এখনও পর্যন্ত তিন লক্ষ পরিবারের কাছে জলের লাইন পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। আরও কাজ চলছে।
আগামী দু’বছরের মধ্যে বাকি কাজ সম্পন্ন করে বাঁকুড়ার মানুষকে পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছে দেব। অভিষেকের সংযোজন, একটা সময় পুরুলিয়াতে সন্ত্রাসের বলি হত মানুষ। তারা ঘর থেকে বেরোতে পারত না ভয়ে। ২০১১ সালের শান্তিরাম মাহাতো জেতার পর আর আমাদের সরকার প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর উন্নয়নের ডালি নিয়ে পুরুলিয়ার ঘরে ঘরে পৌঁছেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু ২০১৮ সালে কী এমন ঘটল যে কোন জাদুবলে বিজেপি জিতল আর অশান্ত হয়ে উঠল পুরুলিয়া! ত্রিলোচন মাহাতো, দুলাল কর্মকার খুন হল। পুরুলিয়ার বিজেপি সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং এখানে কোথায় সময় দিয়েছেন? তিনি তো রাঁচিতে পড়ে থাকেন। বাঁকুড়ার বিজেপি সাংসদ সুভাষ সরকার গত পাঁচ বছরে পাঁচ মিনিট সময় দিয়েছেন? দেননি।
এদিন সোনামুখীর সভায় বিজেপিকে তুলোধোনা করে অভিষেক বলেন, গত বছর এই সময় বজ্রপাতে ৫০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছিলেন। একজন মারাও গিয়েছিলেন। তখন কিন্তু বিজেপির কোনও নেতাকে এখানে দেখা যায়নি। আহতদের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছিল শুধু তৃণমূল। করোনার সময়েও বিজেপির কাউকে রাস্তায় দেখা যায়নি। মানুষের পাশে ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। ছিলেন তৃণমূলের নেতারা। আমাদের সরকার আপনাদের ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা করে দিতে চায়। কিন্তু মোদি সরকার আটকে দিয়েছে। অথচ দিল্লিতে ২০ হাজার কোটি টাকা খরচ করে প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি সেন্ট্রাল ভিস্তা হচ্ছে। আগামী দিনে সেটা বিক্রি করে বাংলার ২০ লক্ষ মানুষের হাতে টাকা তুলে দেব। সাফ কথা অভিষেকের।
আরও পড়ুন-প্ল্যান-এ ব্যর্থ, ষড়যন্ত্র প্ল্যান-বি’র, জিতে প্রথম আসব সন্দেশখালিতে
প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে অভিষেক বলেন, চার দিন আগে উনি এখানে সভা করতে এসেছিলেন।কিন্তু তার ১০ বছরের সরকারের কোনোও রিপোর্ট কার্ড পেশ করতে পারেননি। এমনকী আমি যে শেতপত্র প্রকাশের দাবি জানিয়েছিলাম তাও দিতে পারেননি। অভিন্ন দেওয়ানি বিধির কথা তুলে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বলেন, জিতলে বিজেপি সরকার আপনার জীবনের জঙ্গলের জমির অধিকার কেড়ে নেবে। আদিবাসীদের জীবনের অধিকার তারা পাবে না। সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে তপশিলি জাতী- উপজাতিভুক্ত মানুষেরা।