প্রতিবেদন : বাংলাকে নিয়ে সারাক্ষণ কুৎসা করে চলেছে মোদিবাবু। বারাণসী মিটিংয়েও বাংলাকে ছাড়ছেন না আক্রমণ করতে। আসলে বিজেপি নির্বাচনে হারবে। তাই হারাতঙ্ক রোগে ভুগতে শুরু করেছে। থরথর করে কাঁপছে বিজেপি। রবিবার সোনারপুর ও যাদবপুরের জোড়া সভা থেকে নরেন্দ্র মোদি ও বিজেপিকে চড়া সুরে আক্রমণ শানালেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। তিনি বলেন, মোদিবাবু একটু পড়াশোনা করুন। মনে রাখবেন, বাংলা না থাকলে স্বাধীনতা আন্দোলন হত না, স্বাধীন হত না দেশও। স্বাধীনতা আন্দোলনে আপনাদের কোনও ভূমিকা নেই। আপনার পার্টিরও ভূমিকা ছিল না।
গণতান্ত্রিকভাবে উপড়ে দেব : মোদিকে নিশানায় মুখ্যমন্ত্রী (Mamata Banerjee) এদিন বলেন, আমরা লাঠি-গুলির সঙ্গে লড়াই করে ৩৪ বছর পর সিপিএমকে যদি উপড়ে দিতে পারি, আপনাকেও রাজনৈতিকভাবে- গণতান্ত্রিকভাবে উপড়়ে দেব। এই শপথ নিলাম। তাই আপনাদের কাছে আবেদন, নিজেদের মধ্যে ভোট কাটাকাটি করবেন না। সিপিএমকে তো আপনারা চেনেন— ৩৪ বছর কী করে গিয়েছে। সিপিএমের হার্মাদরাই এখন বিজেপির ওস্তাদ হয়েছে। এদের কোনওদিন ক্ষমা করবেন না।
আর জ্বালিও না : কটাক্ষের তির ছুঁড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বলে কি না জগন্নাথ ঠাকুরও ওনার ভক্ত! এখন আবার বলছেন, ওনাকে ঈশ্বর পাঠিয়েছেন! ২০৪৭ সাল পর্যন্ত উনি ঈশ্বরের প্রতিনিধি হয়ে কাজ করবেন। ভাল কথা! কিন্তু ভগবান তো রাজনীতি করে না! ভগবান তো কুৎসা-হিংসা করে না। ভগবান হলে তোমার মন্দির করে দিচ্ছি, তুমি ভগবান হয়ে বসে থাক। ভারবর্ষকে আর জ্বালিও না।
বিজেপিকে বিদায় : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ভোট চাইছি। তার কারণ বিজেপিকে বিদায় দেওয়ার দরকার আছে। নরেন্দ্র মোদি দেশটার সর্বনাশ করে দিয়েছেন। নোটবন্দির নামে দেশের টাকা চলে গিয়েছে, কালো টাকা আসেনি। ১৫ লক্ষ টাকা দেয়নি। রোজ মিথ্যে বিজ্ঞাপন করছে বিজেপির গ্যারান্টির নামে। মিথ্যা কথা বলে যারা ভোট চায় আমি তাদের ঘৃণা করি।
দেশ ধ্বংস করছে : তাঁর কথায়, মোদিবাবু রোজ মিথ্যা কথা বলছেন। একশো দিনের কাজে টাকা দেয় না, সব টাকা লুঠ করছে। রেল, সেল, ডিফেন্স, দেশ, সংবিধান সব বিক্রি করে দিয়েছে। ইতিহাস-ভুগোল পরিবর্তন করে দিয়েছে। ওরা এনআরসি-সিএএ-ইউসিসি করে অধিকার কেড়ে নেবে। উনি শুধু একা থাকবেন। হিটলারি কায়দায়, গোয়েবেলসের কায়দায় দেশটাকে ধ্বংস করে দেবে। তাই আমরা চাই— দেশ থাক মোদি যাক।
আরও পড়ুন-ঘূর্ণিঝড়ের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা স্থগিত
আমি ভোটে লড়ব : তিনি বলেন, আইআইটির ছেলে-মেয়েরাও চাকরি পাচ্ছেন না। দেশে ৮০ শতাংশ বেকারি বেড়ে গিয়েছে। বাংলায় আমরা তা ৪০ শতাংশে কমিয়ে এনেছি। যেই চাকরি দিচ্ছি, অমনি ওরা আদালতে চলে যাচ্ছে। বিজেপির সঙ্গে জুটেছে দুটো হার্মাদ— সিপিএম আর কংগ্রেস। সব চাকরিখেকো বাঘ হয়ে গিয়েছে। আমার কাছে ১০ লক্ষ চাকরি রেডি আছে। যেই আমি করব, আবার কোর্টে চলে যাবে। কোর্টে গেলে যাবে, আমি দেখে নেব। ওরা কোর্টে লড়ুক, আমি ভোটে লড়ব।
দুঃসাহস ভাল নয় : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বিজেপির কোনও এক নেতা বলেছিলেন, আমরা লড়াই করছি তৃণমূলের সরকার ভেঙে দেবার জন্য। আমি বলি, সাহস থাকা ভাল, দুঃসাহস ভাল নয়। টাকার মালা নিয়ে নেমেছে। আবার মা লক্ষ্মীদের থ্রেট করে বলেছে— লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বন্ধ করে দেবে। মহিলারা দাঁতের গোড়া ভেঙে দেবে নোড়া দিয়ে। সারাজীবন চলবে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার।
সমর্থন করি না : তিনি বলেন, ভোট চলছে। তার মধ্যে ২৬ হাজার শিক্ষকপদ বাতিল। আবার ১৫ লক্ষ ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল করে দিয়েছে। যেখানে হিন্দুও আছে, মুসলমানও আছে, তফসিলি আছে, আদিবাসীও আছে। যারা বিজেপি করে আর চেয়ারে বসে রায়দান করে আমি তাদের সমর্থন করি না। এদের জন্য যা লড়াই করার দরকার আমি করব।
নাটক শেষ হবে : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, সর্বধর্ম সমন্বয় আমাদের সকলের মন্ত্র। এ-দেশ রবীন্দ্র-নজরুলের দেশ, গান্ধীজি-নেতাজির দেশ। ইলেকশনের সময় নেতাজিকে প্রণাম করে ফোটো তুলে ভোটে জেতা যায় না। অন্য সময় উল্টো রবীন্দ্রনাথ নিচ্ছো। বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙে দিচ্ছো। নেতাজির জন্মদিনে জাতীয় ছুটি দাওনি। ভোটের সময়ে নাটক। এই নাটক শেষ হবে।
অগ্রণী ভূমিকা নেব : তিনি সাফ জানান, এবার বিজেপি আসছে না ক্ষমতায়। বাংলায় কোনও জোট নেই? বিজেপির বন্ধুদের সঙ্গে জোট আমরা করি না। ইন্ডিয়ায় ইন্ডিয়াকে ক্ষমতায় এনে দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের। আমরা অগ্রণী ভূমিকা নেব। ইন্ডিয়া জোট ক্ষমতায় এলে আমরা সিএএ-এনআরসি বাতিল করে দেব। ইউনিফর্ম সিভিল কোড বাতিল করে দেব। একশো দিনের কাজ ফের শুরু করব।