প্রতিবেদন : আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস মিলিয়ে রবিবার রাত এগারোটা নাগাদ বাংলার উপকূলে আছড়ে পড়ল ঘূর্ণিঝড় রিমেল (Remal Cyclone)। ল্যান্ডফলের আগে গত কয়েক ঘণ্টায় শক্তি বাড়িয়ে অতি ভারী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে রিমেল। আছড়ে পড়তেই উপকূলের জেলাগুলিতে শুরু হয়ে গিয়েছে ঝড়ের তাণ্ডব। গত প্রায় ২ ঘণ্টা ধরে চলছে রিমেলের তাণ্ডব। আবহবিদরা বলছেন, আরও দু থেকে আড়াই ঘণ্টা চলবে ঝড়ের দাপট। এই সংস্করণ প্রেসে যাওয়া পর্যন্ত উপকূলের জেলাগুলি থেকে একের পর বিপর্যয়ের খবর আসছে। বিপর্যয় মোকাবিলায় তৈরি রাজ্য প্রশাসন। নবান্নের কন্ট্রোল রুমে সতর্ক প্রশাসনিক কর্তারা। রাত জেগে চলছে নজরদারি। কলকাতা পুরসভার কন্ট্রোল রুমে মেয়র ফিরহাদ হাকিম, বিধাননগর পুরসভায় মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী, বিদ্যুৎ নিগমের কন্ট্রোল রুমে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসরা রাত জেগে নজর রাখছেন। একই ছবি লালবাজারেও। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সারা রাত ধরে প্রতিটি দফতরের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন, পরামর্শ দিচ্ছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। সব মিলিয়ে রিমেলের মোকাবিলায় চূড়ান্ত তৎপর প্রশাসন।
রিমেলের (Remal Cyclone) প্রভাবে নদীতে জলস্তর বাড়তে শুরু করেছে। রাত ১১টায় সাগরদ্বীপে ছিল ভরা কটাল, তার আগে থেকেই বাড়ছে জলস্তর। জোড়া ফলায় বিপর্যয়ের আশঙ্কা আরও বেশি। ঘণ্টায় ১০০-১২০ কিমি বেগে দমকা হাওয়া বইছে উপকূলে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলি ব্লকে চাষের জমিতে বৃষ্টির জল দাঁড়িয়ে গিয়েছে। ঝড়ের তীব্রতা রয়েছে। নদীর জল বাঁধের কিনারে এসে গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত তেমন বড় কোনও ক্ষয়ক্ষতির খবর নেই। হিঙ্গলগঞ্জের সামশেরনগরে কালিন্দী নদীর বাঁধ উপচে জমিতে জল ঢুকতে শুরু করেছে। বকখালিতে বিভিন্ন জায়গায় গাছ পড়েছে। পাথরপ্রতিমা, ফ্রেজারগঞ্জ, হিঙ্গলগঞ্জ ইত্যাদি জায়গায় ঝড় আরম্ভ হয়েছে। গাছ পড়েছে বিভিন্ন জায়গায়। ইতিমধ্যে কলকাতায় পুরনো বাড়ির বাসিন্দাদের সরিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দমদম নাগেরবাজারে গাছ পড়ে গিয়েছে। বকখালিতে গাছ পড়ে গিয়েছে রাস্তার ওপর। পুলিশ গাছ সরানোর চেষ্টা করছে।
আরও পড়ুন- নির্বাচিত সরকার ভেঙে দিতে ভোট চাইছে এখন বিজেপি : অভিষেক
এর আগে আশঙ্কায় ছিল গোটা বাংলা। হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস সত্যি করে বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপ পরিণত হয়েছে ঘূর্ণিঝড় রিমেলে। ক্রমশ তা শক্তি বাড়িয়ে অতি-ভারী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়। পূর্বাভাস অনুযায়ী, রবিবার মধ্যরাতেই তা আছড়ে পড়ে ভারতের সুন্দরবন ও বাংলাদেশের খেপুপাড়ার মাঝামাঝি বাংলাদেশের মঙ্গলা অঞ্চলে। রিমেলের প্রভাবে এরই মধ্যে উত্তাল হয়েছে সমুদ্র। কলকাতা-সহ রাজ্যের ৬ জেলায় সকাল থেকে শুরু হয়েছে বৃষ্টি। বইছে দমকা হাওয়া। ঝড়-বৃষ্টির পরিমাণ ক্রমশ বাড়ছে। উপকূলবর্তী এলাকা থেকে মানুষদের সরানো হয়েছে। দিঘা-সহ উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে পর্যটকদের নিষিদ্ধ করা হয়েছে আগেই। জরুরি ভিত্তিতে তৈরি রাখা হয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ১৪টি টিম। ল্যান্ডফলের সময় রিমেলের গতি ছিল ঘণ্টায় প্রায় ১২০ কিমি। আবহাওয়া দফতর বলছে, ঘূর্ণিঝড়ের জেরে দক্ষিণবঙ্গে প্রবল ঝড়বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। পূর্বাভাস মতোই রবিবার সকাল থেকে কলকাতা, দুই ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, হাওড়া ও হুগলিতে শুরু হয়েছে ঝড়বৃষ্টি। দুই ২৪ পরগনায় ভারী থেকে অতি-ভারী বৃষ্টি হতে পারে। সঙ্গে ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হতে পারে। কলকাতায় ঝড়ের সর্বোচ্চ গতি হতে পারে ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার। হাওড়া, হুগলি এবং পূর্ব মেদিনীপুরেও হাওয়ার গতিবেগ একই থাকবে। একই সঙ্গে নদিয়া, পূর্ব বর্ধমানে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে।