পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতিবছর গোটা বিশ্বে প্রতিবছর ৮০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয় তামাকের কারণে এবং ভারতে প্রায় ১৩ লক্ষ মানুষ শুধু তামাক খেয়েই প্রাণ হারান। তামাক শুধু মৃত্যু ডেকে আনে এমন নয় শরীরে নিয়ে আসে বিভিন্ন জটিল রোগ। যেমন ক্যান্সার, ফুসফুসজনিত রোগ, সন্তানধারণে জটিলতা ইত্যাদি। তাই ‘না’ বলুন তামাককে। তামাকের কারণে জটিল রোগভোগ এবং মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাতে ১৯৮৭ সালে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা হু তামাকবিরোধী প্রচারাভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ১৯৮৮ সালের ৩১ মে থেকে গোটা বিশ্বে পালিত হয় তামাক-বিরোধী দিবস। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এটাই যে, করোনা অতিমারির আতঙ্কও তামাকের নেশাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি।
আরও পড়ুন-লিলুয়ায় লাইনচ্যুত হাওড়াগামী লোকাল, বাতিল একাধিক ট্রেন, দুর্ভোগ যাত্রীদের
চিকিৎসকেরা মনে করছেন ক্যান্সার আর তামাক সমার্থক। ফুসফুসের ক্যান্সারের অন্যতম কারণ হল ধূমপান। ওরাল ক্যান্সারের অন্যতম কারণ হল গুটখা এবং খৈনির নেশা ফুসফুসের ক্যান্সার ছাড়াও মুখ, গলা, খাদ্যনালি, স্বরযন্ত্র, মূত্রথলি ও স্তন ক্যানসারের সঙ্গেও তামাকের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক আছে। সমীক্ষা অনুযায়ী ৩৫-৬৯ বছর বয়সি মানুষদের মধ্যে ৩৫% হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান যার অন্যতম কারণ হল ধূমপান। যাঁরা ১০ থেকে ১৫টি বা তার বেশি সিগারেট খান তাঁদের হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি অধূমপায়ীদের চেয়ে ৭০% বেশি। ধূমপানে বাড়ে পেরিফেরাল ভাস্কুলার ডিজিজের আশঙ্কাও। অর্থাৎ, পা-সহ শরীরের বিভিন্ন অংশের রক্তবাহী ধমনীতে কোলেস্টেরলের প্রলেপ জমে রক্ত চলাচল কমে যায়।
২০২৪ সালে বিশ্ব তামাক-বিরোধী দিবসের থিম হল, ‘তামাক শিল্পের আধিপত্য থেকে শিশুদের সুরক্ষিত রাখা।’
তামাক চাষে শুধু মানুষ নয় এই ধরিত্রীও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারণ তামাক যেখানে চাষ করা হয় সেখানকার মাটি নষ্ট হয়। তামাক চাষে যে কীটনাশক ব্যবহার করা হয় এবং তামাক পাতা থেকে বাতাসে একধরনের নির্যাস নির্গত হয় যা পরিবেশকে দূষিত করে।
আরও পড়ুন-আজীবন এই দল ধরে রাখতে চাই : শাহরুখ
ধোঁয়াবিহীন তামাকে ক্ষতি
তামাকের ধোঁয়ায় থাকে ৭০টির বেশি রাসায়নিক যা ক্যান্সার সৃষ্টি করে। এতে রয়েছে নিকোটিন যা একটি আসক্তি সৃষ্টিকারী সাইকোঅ্যাকটিভ ড্রাগ। তাই ধূমপান করলে নিকোটিন শারীরিক এবং মানসিক নির্ভরশীলতা তৈরি করে দেয়।
ধূমপায়ী ব্যক্তির যদি আগে থেকেই ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, থাকে তবে তাঁর স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, কিডনির সমস্যা দেখা দেবার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
ধূমপানে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় হৃৎপিণ্ড এবং ফুসফুস। ধূমপানের ফলে হার্ট অ্যাটাক, ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজ যার মধ্যে রয়েছে ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস এবং এমফাইসিমা ও ক্যান্সার বিশেষ করে ল্যারিংস, মুখগহ্বর এবং অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
ধূমপানে এবং যে কোনও তামাক যেমন খৈনি, গুটখায় দাঁত এবং মাড়ির সমস্য হতে পারে। তামাকে লিউকোপ্লাকিয়ার উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে যার মধ্যে দাঁতের ও মাড়ির দ্রুত পচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এটি মুখে ক্যানসারের বড় কারণ। শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তি কমায় তামাক।
ধোঁয়াবিহীন তামাকে থাকে ২৮ ধরনের কার্সিনোজেনিক প্রকৃতির রাসায়নিক উপাদান। যার মধ্যে নাইট্রোসামিন উল্লেখযোগ্য।
আরও পড়ুন-আমেরিকায় টর্নেডো প্রাণ কাড়ল ২৩ জনের, বিদ্যুৎহীন ৩ লক্ষ মানুষ
বিপদ অন্যের ধূমপানেও
অন্যের তামাকের ধোঁয়া আপনি নিচ্ছেন, ফল মারাত্মক। এতে রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা বাড়ে, রক্তনালি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। ধূমপান না করা ব্যক্তির স্ট্রোক এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত।
পরোক্ষ ধূমপানে কেবল ফুসফুসের ক্যানসারের ঝুঁকিই বাড়ে এমন নয়, অন্যান্য ক্যানসারের ঝুঁকিও বাড়ে।
কিডনির রক্তনালিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরাসরি প্রভাব পড়ে কিডনির কার্যক্ষমতার ওপর।
গর্ভবতী নারীর পরোক্ষ ধূমপানের ফলে গর্ভের শিশুটি কম ওজন নিয়ে জন্মানোর ঝুঁকি থাকে। জন্মের পর শিশুটির রোগ প্রতিরোধশক্তি স্বাভাবিকের অনেকটা চেয়ে কম হয়।
ধূমপায়ী যখন নারী
ধূমপায়ী নারীদের ক্ষেত্রে গর্ভপাত হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি ।
গর্ভস্থ ভ্রূণেরও ক্ষতি হয় ধূমপানে। প্রি-ম্যাচিওর বার্থ হয়।
সাডেন ইনফ্যান্ট ডেথ সিনড্রোম-এর হার ১.৪-৩% বেড়ে যায়।
মেনোপজ হয়ে গেছে এবং ধূমপান করছেন তাঁদের হাড়ের ঘনত্ব অনেকটা কমে যায়। হিপ ফ্র্যাকচার হবার সম্ভাবনা থাকে।
রিউমায়টয়েড আর্থাইটিস হয়। জয়েন্টগুলোয় প্রদাহ সৃষ্টি করে।
পরোক্ষ ধূমপানে শিশুর ক্ষতি
শিশুর শ্বাসতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কাশি ও শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ দেখা দেয়। শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ এমনকী নিউমোনিয়াও হতে পারে। অ্যাজমা হতে পারে।
কানে সংক্রমণের ঝুঁকিও বাড়ে। ফুসফুসের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হতে পারে। জন্মের এক বছর বয়সের মধ্যে পরোক্ষ ধূমপানের কারণে সুস্থ শিশুর মৃত্যুও হতে পারে।
আরও পড়ুন-লিলুয়ায় লাইনচ্যুত হাওড়াগামী লোকাল, বাতিল একাধিক ট্রেন, দুর্ভোগ যাত্রীদের
ছাড়ুন তামাক
অনেক বছরের অভ্যেস অত সহজে কি ছাড়া যায়? মানসিক প্রস্তুতি দরকার। মনকে বোঝালেও এমন কিছু খাবার আছে যেগুলো খেলে ধূমপানের ইচ্ছে বা ধোঁয়া বিহীন তামাক খাবার ইচ্ছে প্রবল হয়।
ক্যাফিন আর নিকোটিন খুব বন্ধু তাই চা, কফি বেশি খেলে ধূমপানের ইচ্ছে ভীষণ বেড়ে যায়।
চিনি জাতীয় খাদ্য। তাই ধূমপান ছাড়ার কথা ভাবলেই মিষ্টি খাওয়া বন্ধ করুন।
বেশি ভাজাভুজি, তেলমশলা যুক্ত এবং মাংস জাতীয় খাবার খেলে ধূমপানের ইচ্ছে প্রবল হয়।
শুধু চা বা কফি নয় মদ্যপান, সফ্ট ড্রিঙ্ক ইত্যাদি খাওয়ার পরেও ধূমপানের ইচ্ছে প্রবল হয়।
ধূমপান করার বা খৈনি, গুটখা খাবার ইচ্ছে হলেই বা ওই সময় মুখে চকোলেট আর চুইং গাম রাখুন।
অবশ্যই নেশা অতিরিক্ত হলে চিকিৎসক এবং মনোবিদের সাহায্য নিন।