প্রতিবেদন : পাঞ্জাব কি শেষপর্যন্ত খালি হাতেই ফেরাবে বিজেপিকে? ভয়ে দুরুদুরু গেরুয়া নেতাদের বুক। পোড় খাওয়া নেতৃত্ব সম্ভবত বুঝেই গিয়েছে, পাঞ্জাবে বিজেপির বিপর্যয় শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা। কংগ্রেসের ২ প্রাক্তন হেভিওয়েট অমরিন্দার সিং এবং সুনীল জাখরকে ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামিয়েও হালে পানি পাচ্ছে না নরেন্দ্র মোদির দল। সামনের ১ জুন সপ্তম তথা শেষ পর্বের নির্বাচনেই পাঞ্জাবের ১৩ লোকসভা আসনে ভোটগ্রহণ।
আরও পড়ুন-প্রচারে কর্মসংস্থানের মিথ্যা গল্প হিমন্তর, ১৭ মাসে বেকারত্ব বেড়ে ১৮ লক্ষ
২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে এনডিএ জোট জিতেছিল ৪টি আসনে। কিন্তু এবারে যা অবস্থা, খুব অঘটন না ঘটলে ওই ৪টি আসনও ধরে রাখা কঠিন কাজ বিজেপির পক্ষে। কেন? মূল কারণটাই হল, রাজ্যের কৃষক সমাজ এবারে পুরোপুরি মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে গেরুয়া শিবিরের দিক থেকে। শিরোমণি আকালি দলের সঙ্গেও বন্ধুত্ব-বিচ্ছেদ হয়েছে বিজেপির। নির্বাচনের আগে কাছাকাছি এসেও দর কষাকষির জেরে শেষপর্যন্ত সম্ভব হয়নি দু’দলে আসন সমঝোতা। ফলে নির্বাচনী ময়দানে এক্কেবারে একা হয়ে গিয়েছে বিজেপি। আর অস্তিত্বসঙ্কটে ভুগছে আকালি দল। অবস্থাটা এতটাই করুণ হয়েছে বিজেপি শিবিরের যে প্রধানমন্ত্রীর সভার আগেও দলের নেতাদের কৃষকদের কাছে গিয়ে করজোড়ে বলতে হয়েছে, দয়া করে বিক্ষোভ দেখাবেন না। আসলে ১৫ দিনে বিজেপি প্রার্থীরা অন্তত ৪৫ জায়গায় বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন। আওয়াজ উঠেছিল, বিজেপি কৃষি-আন্দোলনকারীদের দিল্লিতে ঢুকতে দেয়নি, আমরাও বিজেপিকে পাঞ্জাবে ঢুকতে দেব না। কৃষি আন্দোলনে দমন-পীড়নের কথা মনে করিয়ে দিয়ে কৃষক সংগঠনগুলিও বিজেপিকে হারানোর ডাক দিয়েছে। বিজেপির সবচেয়ে দুশ্চিন্তার কারণ, আপ-সুপ্রিমো অরবিন্দ কেজরিওয়াল পুরোদমে প্রচারপর্ব সেরে ফেলেছেন পাঞ্জাবে। ফলে রীতিমতো চাঙ্গা হয়ে উঠেছে রাজ্যের ক্ষমতাসীন আম আদমি পার্টি। অনেক চেষ্টা করেও আপের জনপ্রিয়তায় কিছুতেই ভাটা ফেলতে পারছে না গেরুয়া শিবির। সবমিলিয়ে এই রাজ্যে রীতিমতো দিশাহারা বিজেপি।
আরও পড়ুন-নীতীশের বিহারে পড়ুয়াকে পিটিয়ে মারল দুষ্কৃতীরা, ছাত্র-বিক্ষোভে উত্তাল পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়
শুধু পাঞ্জাব নয়, হরিয়ানার ১০ আসনে এবং দিল্লির ৭ আসনেও ষষ্ঠপর্বে নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পরে ঘোর অনিশ্চয়তায় মোদি-শাহর দল। হরিয়ানায় গেরুয়া শিবিরে কোন্দল এবং সবচেয়ে বড় কথা কৃষক আন্দোলনের প্রভাব এবং জাঠদের বৈরিতায় পুরোপুরি ব্যাকফুটে বিজেপি। দিল্লিতে বিজেপির সবচেয়ে বড় মাইনাস পয়েন্ট আপ-মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়ালের প্রতি আমজনতার সহানুভূতি। ২০১৯এ পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং দিল্লি মিলিয়ে ৩০টির মধ্যে ২১ টি আসন পেয়েছিল বিজেপি। এবারে অবস্থাটা এমন দাঁড়িয়েছে যে সবমিলিয়ে তারা ৯-১০টি আসন পাবে কিনা সন্দেহ।
শুধু এই ৩ রাজ্যে নয়, ষষ্ঠপর্বের নির্বাচনের শেষে যা অবস্থা দাঁড়িয়েছে তা বিজেপির স্বপ্নের ফানুস চুপসে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। উত্তরপ্রদেশে দলের মধ্যেই অন্তর্ঘাত, বিহারে নীতীশ কুমারের তলানিতে এসে ঠেকে যাওয়া বিশ্বাসযোগ্যতা এখন দলীয় নেতৃত্বের দীর্ঘশ্বাসের কারণ। দক্ষিণের কর্নাটকেও ব্যাকফুটে পদ্ম। স্বাভাবিকভাবেই অস্থিরতার ছাপ স্পষ্ট বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের চোখেমুখে।