প্রতিবেদন : শেষ দফায় এখনও ৯ কেন্দ্রে নির্বাচন বাকি রাজ্যে। তার আগে ৩৩টি আসনে ভোটপর্বের শেষে তৃণমূলের সম্ভাব্য ফল বলে দিলেন আত্মবিশ্বাসী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার ডায়মন্ড হারবারে রোড-শো শেষে বক্তব্য রাখতে গিয়ে জোরের সঙ্গেই অভিষেক বলেন, ভোট শুরুর সময় থেকে আমাকে অনেকেই ফোন করে মেসেজ করে জিজ্ঞেস করছে, ক’টা আসন পাবে তৃণমূল? আমি বলেছিলাম, ঠিক ভোটের সময় বলে দেব। আজকে বলছি, মিলিয়ে নেবেন। ষষ্ঠ দফায় ৩৩টি আসনে ভোট হয়েছে। আরও এক দফায় ৯টি আসনে ভোট বাকি। আমি বলেছিলাম, ২০১৯ সালে তৃণমূলের যে আসনসংখ্যা ছিল, তার থেকে একটা হলেও বাড়বে। খুব খারাপ হলে, পৃথিবী রসাতলে গেলেও ২৩ হবে। এখনও পর্যন্ত ৯টি আসনে ভোট বাকি আছে, ৩৩টি আসনে ভোট হয়েছে। আমি বলছি, ৩৩টির মধ্যে তৃণমূল ২৩ পার করে দিয়েছে। তাঁর সংযোজন, আমি চ্যালেঞ্জ করছি আমার নাম দিয়ে সংবাদমাধ্যমে দেখালে দেখান। ৪ তারিখ ভোটবাক্স খুললে মিলিয়ে নেবেন। একইসঙ্গে এদিন ইনকাম ট্যাক্স রেইডের চক্রান্তের কথা ফাঁস করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। তাঁর কথায়, আমাকে গতকাল রাতে আয়কর দফতরের এক অফিসার ফোন করেছিলেন। তিনি বলছেন, স্যার আমাদের বলা হয়েছে ৩১ তারিখ এবং ১ তারিখ ৫টি জায়গায় রেইড করতে। আমি জানিয়ে রাখলাম। এখন ওরা যা বলছে, আমাদের জানিয়ে দিচ্ছে। কোথায় কার বাড়িতে রেইড করবে, সেটাও জানিয়ে দেবে বলেছেন। কিন্তু আমি বলেছি, আমার ওসব জানার দরকার নেই। আপনারা ৩৬৫ দিনই রেইড করেন। আপনারা হচ্ছেন, গভর্নমেন্ট অফ দ্য এজেন্সি, ফর দ্য এজেন্সি, বাই দ্য এজেন্সি। আর আমাদের সরকার হল মানুষের সরকার। অফ দ্য পিউপল, ফর দ্য পিউপল, বাই দ্য পিউপল। আমরা মানুষের জন্য কাজ করি। আপনাদের যত ক্ষমতা আছে প্রয়োগ করুন। আপনি যদি ৩৬৫ দিনও এখানে ঘাঁটি গেড়ে বসে থাকেন, তাও ভোটের ব্যবধান ৩ লক্ষ ৯৯ হাজার ৯৯৯ হবে না, ৪ লক্ষ হবে।
আরও পড়ুন-প্রধানমন্ত্রীর মিথ্যাচারের পাল্টা পাঁচ প্রশ্ন তৃণমূলের
মঙ্গলবার ডায়মন্ড হারবারে রোড-শোয়ের আগে বিষ্ণুপুরে জনসভা করেন অভিষেক। দুটি ক্ষেত্রেই জনজোয়ারে ভেসে গিয়েছেন তিনি। বিষ্ণুপুরের সভা থেকেও বিজেপি ও প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে একের পর এক তোপ দেগেছেন। স্পষ্ট বলেছেন, সারাবছর মানুষের বিপদে-আপদে তৃণমূল কংগ্রেসই পাশে থাকে। ঘূর্ণিঝড় রিমেলের কথা উল্লেখ করে অভিষেক বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে এই জেলায় একাধিক জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাছ পড়েছে, চাষের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এক জায়গাতেও বিজেপির কোনও নেতা এসেছে? কোনও নেতাকে মানুষের পাশে দাঁড়াতে দেখেছেন? দেখবেন না। এটা পরিষ্কার আপনার আনন্দে-আপনার সুসময়ে তৃণমূল কংগ্রেস থাকবে না কিন্তু আপনার দুঃখে-বিপদে পাশে পাবেন। অভিষেকের সংযোজন, আমি সোমবার এই অঞ্চলের কয়েকটি ত্রাণশিবিরে এসেছিলাম। মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। করোনার সময়ও টানা তিন সপ্তাহ দুবেলা ডায়মন্ড হারবারের মানুষের কাছে খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এই সভার শেষে কামারপোল পালের মোড় থেকে সরিষা ২৪৬ মোড় পর্যন্ত রোড-শোয়ে জনপ্লাবন, উচ্ছ্বাস, আবেগে ভাসলেন অভিষেক।
আরও পড়ুন-মহানগরে জননেত্রীর মহামিছিল
অভিষেক বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করব আগামী কাল আপনি কাকদ্বীপে সভা করতে আসবেন। গত বছর আপনার দলের নেতারা মিছিলের সময় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙেছিলেন, তোপ অভিষেকের। এরপরই দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে অভিষেকের বার্তা, তৃণমূল কর্মীদের বলব উত্তর কলকাতায় স্বামী বিবেকানন্দের মূর্তিকে বুকে আগলে রক্ষা করতে হবে। অভিষেকের কটাক্ষ, আজকে লোক দেখাতে সারদা মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাচ্ছে। এই দ্বিচারিতা চলবে না। শুধু ভোটের সময় আসবে। ভোট চলে গেলে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। বিজেপি নেতৃত্বকে একহাত নিয়ে তিনি বলেন, আমাকে তো সারাবছর গালাগাল করেন। আমার বাপ-বাপান্ত করেন। তবে বিজেপির এত বড় বড় নেতা-সিপিএমের এত বড় বড় নেতা আমার বিরুদ্ধে দাঁড়াল না কেন? বিজেপির সর্বভারতীয় নেতৃত্ব আমার বিরুদ্ধে দাঁড়ালেন না কেন? এখানে বিজেপির প্রার্থী ঘোষণা হওয়ার পর ১০০ জন পদাধিকারী ইস্তফা দিয়েছে। বিজেপির নেতারাই এই প্রার্থীকে মানে না!