প্রতিবেদন : নেতাজির জন্মদিনে জাতীয় ছুটি ঘোষণা করেননি আজও। য়ে মানুষটা না থাকলে দেশ স্বাধীন হত না, তাঁর জন্মদিনে ছুটি ঘোষণা হল না কেন? বুধবার শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড় থেকে পদযাত্রা শুরুর আগে প্রধানমন্ত্রীকে একহাত নিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee)। তিনি বলেন, নেতাজি তৈরি করেছিলেন ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি। প্ল্যানিং কমিশনও তাঁর তৈরি। মোদিবাবু সেইসব তুলে দিয়েছেন। অথচ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের সময় এলেন লোক দেখাতে, কিন্তু শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে মাল্যদান করতে আসতে পারেননি। তাঁর আরও সংযোজন, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর অন্তর্ধান রহস্যের আজও কিনারা হল না। আমি সব ফাইল ছেড়ে দিয়েছিলাম, কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার কিছু করেনি। কেন জাতীয় ছুটি ঘোষণা হল না, আমি প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। দেশনেতাকে আমি স্যালুট জানিয়ে গেলাম। মনে রাখবেন, নেতাজি না থাকলে আমরা জানতে পারতাম না ভারতবর্ষ কেমন হয়।
বাইরে থেকে লোক : সেইসঙ্গে তিনি (CM Mamata Banerjee) জানান, আমরা বাইরে থেকে লোক নিয়ে আসিনি। গতকাল কিন্তু হাওড়া, হুগলি, ঝাড়খণ্ড, বিহার থেকে লোক নিয়ে আসা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর রোড শো-তে। কারণ আমরা মনে করি, বাংলায় যা লোক আছে, শ্যামবাজারে যা লোক আছে, সেটাই যথেষ্ট নেতাজিকে স্যালুট জানানোর জন্য।
ক্যামেরা নিয়ে ধ্যান : বুধবার যাদবপুরের প্রার্থী সায়নী ঘোষের সমর্থনে বারুইপুরের প্রচার সভা থেকে প্রধানমন্ত্রীর ধ্যান নিয়ে হুঁশিয়ারি দেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর প্রশ্ন, ধ্যান করলে কেউ ক্যামেরা নিয়ে ধ্যান করে? প্রত্যেকবার শেষ দফার ভোট প্রচার শেষ হলেই কোথাও না কোথাও ঢুকে বসে থাকেন। আর দেখান যে, ধ্যান করছেন।
কমিশনে যাব : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, লোকে যখন পুজো করে, তখন ক্যামেরার সামনে করে? উনি সমুদ্রের হাওয়া খেতে খেতে প্রচার চালাবেন। নির্বাচনের পরে এ-ভাবে তিনি প্রচার করতে পারেন না। আমরা নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানাব। তাঁর কথায়, উনি ধ্যান করতেই পারেন, কিন্তু সংবাদমাধ্যমে তা দেখাতে পারেন না। কারণ তা নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করে।
ধ্যান করার প্রয়োজন : মুখ্যমন্ত্রী আক্ষেপ করে বলেন, আমার খুব দুঃখ হয়, কেন সবাই চুপচাপ থাকে। কেন কেউ প্রতিবাদ করে না। ওই জায়গাটা ঋষি অরবিন্দ তৈরি করেছিলেন। স্বামী বিবেকানন্দের খুব প্রিয় জায়গা ছিল। আরএসএস ওটা দখল করে নিল। তারপরই কটাক্ষের সুরে তিনি বলেন, উনি নাকি ঈশ্বরের দূত! দেবতার থেকেও বড় দেবতা! তাই যদি হয়, লোকে ওনার ধ্যান করবে। ওনার তো ধ্যান করার প্রয়োজন নেই।
পারলে চ্যালেঞ্জ করুক : এদিন বারুইপুরের সভা থেকে তৃণমূল সুপ্রিমো প্রথমেই জানান, আমার আজ এখানে সভা করার কথা ছিল না। তবে পরে মনে হল, বিজেপির মিথ্যাচারের জবাব দেওয়ার প্রয়োজন। তাই এসেছি বারুইপুরে। ক্ষমতা থাকলে চ্যালেঞ্জ করুক বিজেপি।
সাইক্লোন আটকেছেন : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, উনি নাকি রাজপ্রাসাদে বসে কাকদ্বীপের সাইক্লোন আটকেছেন। আমরা সারা রাত রাস্তায় থেকে দুর্যোগ মোকাবিলা করলাম, আর এখন উনি বলছেন সাইক্লোন আটকেছেন। মা কালীর কাছে প্রার্থনা করেছেন।
আরও পড়ুন-আকাশপথে ঘূর্ণিঝড় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন মুখ্যমন্ত্রীর
একটা টাকাও দেয়নি : মুখ্যমন্ত্রীর চ্যালেঞ্জ, প্রধানমন্ত্রী কাকদ্বীপ থেকে মিটিং করে বলছেন বাঁধের টাকা দিয়েছেন। তৃণমূল নাকি সেইসব টাকা খেয়ে নিয়েছে। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি, বাঁধের জন্য একটা টাকাও দেয়নি।
জাতীয় মেলা হয়নি : তিনি আরও বলেন, প্রতি বছর আমরা গঙ্গাসাগরে মেলা করি। ৫০০ কোটি টাকা করে আমাদের খরচ হয়। আমরা বারবার আবেদন করা সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত গঙ্গাসাগর মেলাকে জাতীয় মেলা হিসাবে ঘোষণা করল না কেন্দ্র। মুড়িগঙ্গা সেতু নির্মাণের কথা ছিল, কিন্তু কিছু করেনি। আমি করে দেব। মুড়িগঙ্গা সেতু আমরাই করব, পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে ইতিমধ্যেই।
ভেঙে দেখাক : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বিজেপি বলেছিল তিন মাস পর বাংলার তৃণমূল সরকার ভেঙে যাবে। তারা ক্ষমতায় এসে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বন্ধ করে দেবে। আমি বলছি, সাহস থাকলে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বন্ধ করে দেখাক। বাংলার মা-বোনেরা তার যোগ্য জবাব দিতে তৈরি রয়েছে।
আয়ু ৪ তারিখ পর্যন্ত : এদিন ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল নিয়েও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিশানা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, আপনি ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল করেছেন। আমি তা মানব না। যেমন চলছে চলবে। আপনি আর থাকবেন না, আপনার আয়ু ৪ তারিখ পর্যন্ত।
শওকতকে নোটিশ : তৃণমূলনেত্রী এদিন বিধায়ক শওকত মোল্লাকে পাশে নিয়ে কেন্দ্রীয় এজেন্সির বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন। তিনি বলেন বেচারা শওকতকে মধ্যরাতে নোটিশ পাঠিয়েছে সিবিআই। বলেছে কালকে এসে দেখা করো। জমিদারি নাকি? এখন নির্বাচন করাবে, নাকি দেখা করতে যাবে?
সিপিএমকে নিশানা : শুধু বিজেপিকেই নয়, এদিন সিপিএমকেও চড়া সুরে তোপ দাগেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, আজ সিপিএম বড় বড় কথা বলছে। চিটফান্ড বানিয়েছিল সিপিএম। চিটফান্ডের টাকা নিয়েছে। ৩৪ বছর ধরে একটা কাজও করেনি। তৃণমূল কংগ্রেস তৈরি করে এই সিপিএমকে আমরা হটিয়েছি। এবার বিজেপিকেও হটাব।
লড়াই করার মেয়ে : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আপনারা মিমিকে ভোট দিয়ে জিতিয়েছিলেন। কিন্তু মিমি চলচ্চিত্র জগতে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় এবার সায়নীকে টিকিট দিয়েছি। সায়নী কোমরে কাপড় কষে লড়াই করার মেয়ে। ওকে টক্কর দেওয়ার ক্ষমতা বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেসের কারও নেই।
পেয়ারায় জিআই ট্যাগ : মুখ্যমন্ত্রী বলেন, জয়নগরের মোয়া জিআই ট্যাগ পেয়েছে। বর্ধমানের সীতাভোগও তাই। আমরা এখন চেষ্টা করছি বারুইপুরের পেয়ারাটা যাতে জিআই ট্যাগ পায়। তার প্রক্রিয়া চলছে। এটাও হবে।