প্রতিবেদন: নির্বাচন কমিশনের স্বাধীন অস্তিত্বকেই বারবার প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী (Narendra Modi)। নির্বাচনী বিধি ও কমিশনের নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে লোকসভা ভোটের প্রচারে হিন্দু-মুসলিম নিয়ে বিভাজনের রাজনীতির পর এবার সংখ্যালঘু খ্রিস্টান ও মুসলিমদের মধ্যেও বিভেদ তৈরিতে নেমে পড়লেন প্রধানমন্ত্রী। ধর্ম ও জাতিভিত্তিক প্রচারে যে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে ভোটপ্রচারে তা সচেতনভাবে লঙ্ঘন করছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। ঝাড়খণ্ডের দুমকার প্রচারে মোদি খ্রিস্টান ও মুসলিমদের মধ্যে সংঘাতের আবহ তৈরির চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। দুমকার নির্বাচনী সভায় প্রধানমন্ত্রীর দাবি, ঝাড়খণ্ডের একটি জেলায় চিরাচরিত ছুটির দিন রবিবারের পরিবর্তে শুক্রবার ঘোষণা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে মুসলিমদের দিকে ইঙ্গিত ছিল তাঁর। পাশাপাশি ‘লাভ জেহাদে’র প্রসঙ্গও টেনে আনেন মোদি। ঝাড়খণ্ডে ‘সংখ্যাবৃদ্ধির’ জন্য শাসক ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চাকে দায়ী করে মোদি বলেন, অনুপ্রবেশকারীদের (মুসলিম) কারণে জনজাতি সমাজের মেয়েরা ‘লাভ জেহাদে’র শিকার হচ্ছেন। মোদির (Narendra Modi) বক্তব্যের কড়া বিরোধিতা করেছেন বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারা। তাঁদের মতে, চলতি ভোটে হার নিশ্চিত জেনেই মরিয়া হয়ে ধর্মীয় বিভাজন আরও উসকে দিতে সক্রিয় হয়েছেন নরেন্দ্র মোদি।
বিরোধীদের মতে, এটি মেরুকরণের নির্লজ্জ উদাহরণ। এতদিন হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে মেরুকরণ করার চেষ্টা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু যেহেতু ঝাড়খণ্ডের জনজাতি সমাজের বড় অংশ খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী, সেই কারণে সেই সমাজের ভোট পেতে এবার খ্রিস্টান-মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজন তৈরির কৌশল নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডাকে চিঠি দিয়ে সতর্ক করে জানিয়েছিল, তাঁর দলের তারকা প্রচারকেরা যেন ধর্মভিত্তিক প্রচার না চালান। কিন্তু মোদি বারবার বুঝিয়ে দিয়েছেন শেষ দফা ভোটেও ধর্মভিত্তিক প্রচারই তাঁর শেষ ভরসা।
আরও পড়ুন- শ্যামবাজার থেকে স্বামীজির বাড়ি জনস্রোত শহরে
প্রসঙ্গত দুমকার প্রচারে গিয়ে মোদি বলেন, রবিবার কোনওদিন হিন্দুদের ছুটির দিন ছিল না। বরং রবিবার দিনটিকে ছুটির দিন হিসেবে পালন করা খ্রিস্টান প্রথা। খ্রিস্টানরা যখন এ দেশে শাসন করত, তখন থেকে ওই প্রথা শুরু হয়। যা প্রায় দু’শো-তিনশো বছর ধরে চলে আসছে। কিন্তু এখন হঠাৎ এ-রাজ্যের একটি জেলায় রবিবারের পরিবর্তে ছুটির দিন শুক্রবার করার কথা বলা হয়েছে। এখন খ্রিস্টানদের সঙ্গেও লড়াই শুরু হয়েছে। এ সব কী হচ্ছে?
ঘটনাচক্রে ঝাড়খণ্ডের জেলা প্রশাসন স্থানীয়দের চাপে প্রায় ৪৩টি সরকারি স্কুলে রবিবারের পরিবর্তে শুক্রবার হবে বলে ঘোষণা করেছিল। রাজ্য জুড়ে সমালোচনার মুখে প্রশাসন সেই আদেশ প্রত্যাহার করে নেয়। ভোটের মুখে এবার মোদি সেই পুরনো ঘটনার কথা মনে করিয়ে বিভাজন উসকে দিতে চেয়েছেন। পাশাপাশি তিনি সরব হয়েছেন তথাকথিত ‘লাভ জেহাদ’ নিয়েও। বিজেপির অভিযোগ, হিন্দু মেয়েদের পরে এখন জনজাতি সমাজের মেয়েদের ভুলিয়ে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করছেন মুসলিম যুবকেরা। তারপরে তাঁদের ধর্ম পরিবর্তন করা হচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এধরনের ঘটনায় অত্যাচারের শিকার হচ্ছেন ওই জনজাতি মেয়েরা এবং একাধিক মৃত্যুর ঘটনাও সামনে এসেছে বলে বিজেপির দাবি। প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস নেতৃত্বের মতে, বার্তা স্পষ্ট। হিন্দু-মুসলমানের পরে এবারে খ্রিস্টান-মুসলমানে বিভাজন তৈরিতে নেমে পড়েছেন মোদি। কিন্তু সাধারণ মানুষ বোকা নয়। মেরুকরণের ফাঁদে পা দেবেন না তাঁরা।