শিলাস্তি রহমান। ইন্দো-বাংলাদেশের এখন সব চেয়ে আলোচিত নাম। পুরুষ বন্ধুকে ব্যারাকপুর থেকে ভালবাসার ভান করেই ডেকে আনেন নিউ টাউনের ফ্ল্যাটে। বাকিটা ইতিহাস। আনোয়ারুল আজিমর দেহ টুকরো টুকরো করে হলুদ মাখিয়ে ছড়িয়ে দেওয়া হয় নাম না-জানা কোনও ভেড়ি বা পুকুরে। শিলাস্তি-র হানি ট্র্যাপ বদলে দেয় সব ইকুয়েশন।
মরদেচাই ভানুনু ইসরাইলি টেকনিশিয়ান। কাজ করতেন দিমোনা নিউক্লিয়ার ফেসিলিটিতে। ১৯৮৬ সালে ব্রিটিশ সংবামাধ্যমকে তিনি বললেন ইজরায়েলের কাছে নাকি পারমাণবিক বোমা আছে। এই কথা শুনে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের দিশাহারা অবস্থা। যেহেতু ভানুনু নিউক্লিয়ার ফেসিলিটিতে কাজ করতেন তাই এই দাবিকে তাঁরা অগ্রাহ্য করতে পারছিল না। কিন্তু সত্যতা যাচাই না করে তো আর এই খবর প্রকাশ করা যায় না, তাই ‘সানডে টাইমস’ লন্ডনের এক গোপন ডেরায় তাঁকে লুকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করে। তারপর নিজেরাই ভানুনুর এই দাবির সত্যতা যাচাইয়ে নেমে পড়ে।
আরও পড়ুন-ওভারহেড তার ছিঁড়ে পুরীগামি নীলাচল এক্সপ্রেসে রক্তাক্ত যাত্রী
কিন্তু ভানুনুর এই বন্দিদশা কিছুতেই ভাল লাগছিল না। লন্ডনের দর্শনীয় জায়গাগুলো ঘোরার সময় এক সুন্দরীর সঙ্গে তাঁর দেখা হয়েছিল। তাঁরা একে অপরের সঙ্গে আবারও দেখা করতে চাইছিলেন। তবে সেটা লন্ডনে নয় রোমে। সানডে টাইমসের কর্তৃপক্ষ তাঁদের প্রেমে বাধা হয়ে ওঠেনি। মনের মানুষকে নিয়ে ভানুনু তাই পৌঁছে যান রোমে। এরপরই মোসাদ এজেন্টদের হাতে আটক হন তিনি। তাঁর দেহে জোর করে নেশাজাত দ্রব্য প্রয়োগ করা হয়। ইতালি থেকে জাহাজে করে সোজা নিয়ে আসা হয় ইজরায়েলে। দাঁড় করানো হয় বিচারের মুখোমুখি।
২০০৪ সালে প্রায় দেড় দশক পরে ভানুনু। তবে তাকে মুক্তি বলা নিয়ে অনেকের সংশয় আছে। জীবনযাত্রায় রয়েছে বিভিন্ন বিধিনিষেধ। বিদেশি কারওর সঙ্গে কোনওরকম কথা বলা যাবে না, কারওর সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করা যাবে না।
যে নারীর প্রেমে ভানুনু পাগল হয়ে গিয়েছিলেন— সে ছিল একজন মোসাদ এজেন্ট— চেরিল বেন টভ। ছদ্মনাম ‘সিন্ডি’। ইজরায়েলের সিকিউরিটি সার্ভিসে চাকরি করার সময়েই এই হানি ট্র্যাপের ফাঁদ পেতেছিল সে। ভানুনু ‘হানি ট্র্যাপে’ বা ভালবাসার ফাঁদের চক্রব্যূহে ঘুরপাক খাচ্ছিলেন।
আরও পড়ুন-জয়তু জোড়া ফুল
লুকিয়ে ভালবাসব তারে
‘হানি ট্র্যাপ’ এক অদ্ভুত কৌশল বা অপকৌশল। ভালবাসার এই ফাঁদ হল যৌনতার প্রলোভন— বিপক্ষ শিবির থেকে তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার পদ্ধতি। যৌনতা ও শারীরিক সম্পর্কের লোভ দেখিয়ে কাজ করে নেওয়ার নামই হল ‘হানি ট্র্যাপ’। শুধু মজা নয়, দুনিয়া জুড়ে এই ফাঁদ পাতা হয়। গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তি, ব্যবসায়ী এবং গোয়েন্দাদের কাছ থেকে তথ্য বের করে নেওয়াই এর উদ্দেশ্য।
১৯৭৪ সালে প্রকাশিত হল উপন্যাস ‘টিঙ্কার, টেইলর, সোলজার, স্পাই’। লেখক জন লে ক্যারে— ব্রিটিশ আইরিশ লেখক, তিনি প্রথম এই উপন্যাসে ‘হানি ট্র্যাপ’ শব্দটি ব্যবহার করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও তার পরবর্তী সময় হানি ট্র্যাপ সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং পশ্চিমি দেশগুলোর মধ্যে শোরগোল ফেলে দিয়েছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন পশ্চিমি দেশগুলোর কাছ থেকে গোপন তথ্য জানার চেষ্টা করেছে এই পদ্ধতিতে। একই ভাবে মস্কোর কাছ থেকেও তথ্য বের করার জন্য একই পদ্ধতি ব্যবহার করেছে পশ্চিমি দেশগুলি। এই ‘হানি ট্র্যাপ’কে নিয়ে দুনিয়ায় জোড়া নানান ঘটনা রয়েছে। তার কিছুটা রিল, কিছুটা রিয়াল।
সেলুলয়েডে হানি ট্র্যাপ
ব্রিটিশ তরুণ-তরুণী জোনাথন ও ক্যাথেরিন। তারা ভালবেসে ফেলে একে অপরকে। অল্পদিনের পরিচয়ে সেটা বাধা হয়ে ওঠেনি। ক্যাথেরিন, জোনাথনকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু বিয়ের আগেই ক্যাথেরিন জোনাথনের চরিত্র সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চায়। এই সময় লন্ডন শহরে জোনাথনের প্রতিবেশী ফ্ল্যাটের বাসিন্দা রিনির সঙ্গে পরিচয় হয় ক্যাথেরিনের। আস্তে আস্তে তারা একে অপরের বন্ধু হয়ে ওঠে। এদিকে ক্যাথেরিন জোনাথনের বিশ্বস্ততা সম্পর্কে সন্দেহ করতে থাকে। রিনির সাহায্য চায়। রিনি তাকে পরিচয় করিয়ে দেয় জেরেমির সঙ্গে। জেরেমি একজন প্রাইভেট গোয়েন্দা। জোনাথনের জন্যে ‘হানি ট্র্যাপের’ ব্যবস্থা করে জেরেমি। আয়োজন করেন অপূর্ব এক সুন্দরীর সঙ্গে নৈশভোজের। গোপনে বিষয়টি ভিডিও-ও করা হয়। কিন্তু সন্দেহ করার মতো কিছু পাওয়া যায় না। ক্যাথেরিন বিব্রত বোধ করে। ভালবাসা এবং বিশ্বাসের মানদণ্ডে বিয়ে করেন জোনাথনকে। সম্পর্ক ছেদ করে প্রাইভেট গোয়েন্দা জেরেমির সঙ্গে। এ-গল্প রিয়াল নয় থ্রিলার রিলের। ২০০২ সালে মাইকেল জি গান্থার পরিচালিত ছবি ‘হানি ট্র্যাপের।’ গল্পের শেষ কিন্তু এখানেই নয়। ক্যাথরিন জোনাথন বিয়ের পর হানিমুনে যায়। ফিরে আসার পর সব কিছু ভালই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ একটি বেনামী টেলিফোন, এবং রাতবিরেতে জেরেমির হাজির হওয়া এদের শান্তিতে থাকতে দেয় না। ক্যাথরিনের হাতে এসে পৌঁছয় সেই নৈশভোজের রাতের সুন্দরী নারীর সঙ্গে জোনাথনের অন্তরঙ্গর ছবি। এতে ক্যাথরিনের মনে ফিরে আসে পুরনো সন্দেহ। সে নিজেই বেরিয়ে পড়ে শামির গোপন সত্য সন্ধানের জন্য। সিনেমার গল্প মোড় নেয় আবার।
দুনিয়া জুড়ে বহু সিনেমা, ওয়েব সিরিজ, টিভি সিরিজ তৈরি হয়েছে হানি ট্র্যাপকে নিয়ে। জেমস্ বন্ডের সিরিজেও রয়েছে একাধিক ‘হানি ট্র্যাপের’ গল্প।
আরও পড়ুন-যৌন-কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত রেভান্নার ৬ জুন পর্যন্ত হেফাজত
ওয়েক আপ মম
কখনও কখনও ‘হানি ট্র্যাপ’ প্রয়োগ করে আইনশৃঙ্খলার রক্ষাকারীরাও। এতে নিরপরাধ লোকদেরও ফেঁসে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। র্যাচেল নিকেল হত্যাকাণ্ড ঘিরে ব্রিটিশ পুলিশ ‘হানি ট্র্যাপের’ ফাঁদ পেতেছিল। সমালোচিতও হয়েছিল। এটি ছিল দক্ষিণ-পশ্চিম লন্ডনের উইম্বলডন এলাকার ঘটনা।
১৯৯২ সালের ১৫ জুলাই। সকালবেলা। বেশ ঝকঝকে আবহাওয়া। সকালের রোদে দু’বছরের ছেলে অ্যালেক্স এবং পোষ্যকে নিয়ে হাঁটতে বেরোয় ২৬ বছর বয়সি র্যাচেল নিকেল। হাঁটতে হাঁটতে চলে আসে এক নির্জন এলাকায়। হঠাৎ ছুরি হাতে এসে ধাক্কা দিয়ে র্যাচেলকে রাস্তার ওপারে নিয়ে যায় এক ব্যক্তি। ফেলে দেয় মাটিতে। ছোট্ট অ্যালেক্সকে সরিয়ে সমানে ছুরি চালায় র্যাচেলের শরীরে। গলা চিরে যায় তার। ৩১ বার আঘাত করে তাকে। তারপর মৃত দেহের ওপর তার বিকৃত কামনা মিটিয়ে সে পালিয়ে যায়।
এক পথচারী একটু পরে র্যাচেলের দেহ খুঁজে পায়। তখন ছোট্ট অ্যালেক্স মায়ের লাশ আঁকড়ে বসে ছিল আর ‘ওয়েক আপ মম’ বলে ডাকছিল বারবার।
এই ঘটনায় প্রচণ্ড চাপে পড়ে ব্রিটিশ পুলিশ। সংবাদমাধ্যমে একের পর এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। উইম্বলডনের মতো এলাকায় দিনের আলোয় এমন হত্যাকাণ্ড। নিরাপত্তার দুর্বলতায় ক্রুদ্ধ ছিল ব্রিটিশরা। এই মামলার তদন্ত করেন জন ব্যাসেট— ডিটেকটিভ সুপারিন্টেনডেন্ট। বিভিন্ন সময়ে ৩২ জনকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় ৫৪৮ জনকে। কিন্তু কোনও কূলকিনারা করা যায়নি। ব্রিটিশ পুলিশের অবস্থা দিশেহারা। এমন সময় কলিন স্ট্যাগের দিকে চোখ পড়ে ব্রিটিশ পুলিশের। ঘটনাস্থলের পাশেই ছিল কলিন স্ট্যাগের বাড়ি। কুকুর নিয়ে হাঁটতে বের হত সে। কলিনের ভাইও ছিল ধর্ষক, জেল খাটছিল। ভাই যেহেতু অপরাধী। সেও অপরাধী হতে পারে। পুলিশ কলিনের ঘর থেকে ছুরি এবং কালো দস্তানা উদ্ধার করে। আর তার ঘরের দেওয়ালে ছিল শয়তানের উপাসনার জন্য আঁকা পেন্টাগ্রাম নামের একটি প্রতীক। তার ঘরে ছিল কলুজাদু এবং অতি প্রাকৃতিক বিষয়ক নানা বই। তবুও র্যাচেল খুনের সঙ্গে কলিনকে জড়ানো গেল না কোনওমতেই।
আরও পড়ুন-মানুষ বঞ্চনার জবাব দেবেন, ভোট দিয়ে বললেন অভিষেক
ঠিক এইসময় হঠাৎ একটি মেয়ে যোগাযোগ করল তদন্তকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে। দাবি করল কলিনের সঙ্গে তার প্রেম ছিল। কিন্তু দিনে দিনে সেই চিঠির ভাষা যৌনতা এবং হিংসার দিকে মোড় নেয়। শুধু সেই কারণেই সে কলিনের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করে। তদন্তকারীরা নতুন উদ্যমে আবার তদন্তের কাজ শেষ করে। গোয়েন্দা কর্মকর্তা কেড পেডার যোগাযোগ করে ফরেনসিক মনোবিজ্ঞানী পল ব্রিটনের সঙ্গে। সব শুনে পল ব্রিটন র্যাচেল নিকেলের হত্যাকারীর ফাইল তৈরি করে। বলে খুনি সম্ভত যৌন হিংসার তাড়নায় ভুগছে। যা হুবহু মিলে যায় কলিনের সঙ্গে। পুলিশ নিশ্চিত কলিনই হত্যাকারী। কিন্তু প্রমাণ লাগবে। ঠিক এমন সময় ব্রিটিশ পুলিশ ফাঁদ পাতে ‘হানি ট্র্যাপের’। স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের বিশেষ ইউনিট থেকে নিয়ে আসা হয় লিজি জেমসকে। কলিনের বন্ধুর বন্ধু হিসেবে লিজি তার ঘনিষ্ঠ। সে চিঠি লেখে, লন্ডনের হাইড পার্কে দেখা করে। যৌনতা নিয়ে তার ফ্যান্টাসির কথা জানায়। বলে উইম্বলডনের খুনটা যদি সে করেও থাকে তবুও তার সঙ্গে সম্পর্কে জড়াতে তার আপত্তি নেই। কলিন বলে সে খুনটি করেনি। তবুও পুলিশ সেই খুনের মামলায় কলিনকে গ্রেফতার করে। ১৩ মাস তাকে জেলে রাখা হয়। পরের বছর (১৯৯৪) মামলা আদালতে গেলে ফাঁস হয় সব জারিজুরি। পুলিশের অভিযোগপত্র দেখে আঁতকে ওঠেন বিচারক। হানি ট্র্যাপের মাধ্যমে পাওয়া সব তথ্য নাকচ করে দেন তিনি। আইনানুগ পদ্ধতির বাইরে যাওয়ায় তীব্র ভর্ৎসনা করেন পুলিশকে। বেকসুর খালাস পায় কলিন। খালাস পেলে কী হবে! গণমাধ্যম তো ততদিনে তাকে র্যাচেলের খুনি বলে রায় দিয়ে দিয়েছে। তবে কলিন ছেড়ে দেওয়ার পাত্র ছিল না। হানি ট্র্যাপের অভিযোগে ব্রিটিশ পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করে ক্ষতিপূরণ আদায় করে ৭ লাখ ৬ হাজার পাউন্ড। প্রেমের অভিনয় করতে গিয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে লিজিও। দেড় বছর ছুটি কাটাতে হয় তাকে, নিতে হয় আগেভাগে অবসর।
আরও পড়ুন-ভোটের আগে ভাঙড়ে আইএসএফের বোমাবাজি, আহত তৃণমূল নেতা-কর্মীরা
হানি ট্র্যাপে মাতাহারি
দুনিয়া জুড়েই ‘হানি ট্র্যাপের’ গল্প। এবারের গল্পটা মাতাহারির। তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলছে। মাতাহারি ছিলেন একজন ডাচ নৃত্যশিল্পী। কেরিয়ারকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য চলে যান প্যারিসে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে প্যারিসের বিখ্যাত রাজনীতিবিদদের প্রলুব্ধ করে সব গুরুত্বপুর্ণ তথ্য বের করে নিতেন তিনি। আর সেগুলো পাঠাতেন শত্রুপক্ষকে অর্থাৎ জার্মান দেশকে। একসময় তিনি ধরাও পড়ে যান। ১৯১৭ সালের ১৫ অক্টোবর ফায়ারিং স্কোয়াডে তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে ফরাসি সরকার। তাঁর বিচার চলাকালীন একজন আইনজীবী মাতাহারির এই ঘটনাকে ‘হানি ট্র্যাপ’ বলে ব্যাখ্যা করেন।
ডিজিটাল হানি ট্র্যাপ
যুগ পাল্টেছে, ‘হানি ট্র্যাপের’ ধরনও বদলেছে। ভার্চুয়াল দুনিয়ায় এখন ‘হানি ট্র্যাপের’ জাল পাতা। ডেটিং সাইটগুলো হয়ে উঠেছে ‘হানি ট্র্যাপের’ উন্মুক্ত জায়গা। বড় ব্যবসায়ী, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক কিংবা শিল্পীদের সঙ্গে অ্যাডাল্ট সাইটে প্রেমিক-প্রেমিকারা অন্তরঙ্গ কিংবা নগ্ন ভিডিও চ্যাট করে পড়ে তা ফাঁস করার ভয়ে দেখিয়ে অর্থ উপার্জন করছেন। কিংবা কখনও তারা বিরোধী পক্ষের এজেন্ট হিসেবে কাজ করে কোনও ব্যক্তিকে ফাঁসিয়ে দিচ্ছেন। ‘হানি ট্র্যাপ’ অবশ্যই প্রতারণামূলক অপরাধ। সংঘবদ্ধ অপরাধীরা এর ফাঁদ পাতে বেশি। এর পিছনে থাকে রাজনৈতিক এবং অর্থনীতিক শক্তি। যাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা নেই তারাই এ-ধরনের প্রতারণার শিকার হয়।
আজকের ডিজিটাল দুনিয়ায় ‘হানি ট্র্যাপ’ এক মোহময়ী ফাঁদ হয়ে উঠেছে। সামাজিক দুনিয়ায় প্রথমেই গড়ে উঠবে বন্ধুত্ব। তারপর অন্তরঙ্গতা। শুরু হবে ছবির আদান-প্রদান। তারপর অন্তরঙ্গ ছবির আদান-প্রদান। স্বাভাবিক ভাবেই আসবে যৌনতা। আর তার পরেই বাস্তব জীবনের গল্প হয়ে উঠবে ক্রাইম থ্রিলার। ঘন ঘন ফোন, হোয়াটসঅ্যাপ, ব্ল্যাকমেল প্রত্যেক মুহূর্তে নীরব হুংকার সামাজিক ভাবমূর্তি নষ্ট করার। শুধু ভারতবর্ষে নয়, ভারতবর্ষের বাইরেও সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে ‘হানি ট্র্যাপের’ ঘটনার রমরমা। কোনটা বাস্তব আর কোনটা সাহিত্য— সব মিলেমিশে একাকার।
আরও পড়ুন-বাড়তি আরও ৪ শতাংশ ডিএ পেলেন রাজ্য সরকারি কর্মীরা
রংবাহারি হানি ট্র্যাপ
দুনিয়া জুড়ে হেটেরো সেক্স্যুয়াল এবং হোমো সেক্সচুয়াল ‘হানি ট্র্যাপের’ কাহিনি রয়েছে। ষাটের দশকের শুরুর দিকে লন্ডনে সোভিয়েত অ্যাটাসি ইয়েভ গেনি ইভানভ তার চাকরি হারায় ‘হানি ট্র্যাপের’ ফাঁদে। ক্রিস্টিন কিলার। এই ফাঁদ তৈরি করেছিলেন। আবার ষাটের দশকের ডেইলি টেলিগ্রাফের প্রতিনিধি হিসেবে মস্কোতে কাজ করতেন জেরেমি ওলফেন্ডেন। রাশিয়ান এই সমকামীকেও ‘হানি ট্র্যাপের’ ফাঁদে ফেলেন কেবিজি। সাংবাদিকতার সঙ্গেও রয়েছে ‘হানি ট্র্যাপের’ দেশ-বিদেশের ভূরি ভূরি ঘটনা। বিবিসির ওয়ার্ল্ড অ্যাফেয়ার্স বিভাগের জনপ্রিয় সম্পাদক জন সিম্পসনের কথা। চেকোস্লোভাকিয়ান ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস থেকে আশির দশকের শুরুতে তাকেও একই ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু সে ফাঁদে পড়েননি সিম্পসন। নিজের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়কে কাজে লাগিয়ে রক্ষা পেয়েছিলেন।
মধুময় তিলোত্তমা
আমাদের শহরেও বাড়ছে অপরাধ। সাধারণ অপরাধের পাশাপাশি রয়েছে সাইবার অপরাধ। চাঙ্গা হচ্ছে অনলাইনে ‘হানি ট্র্যাপের’ ফাঁদ। এতে পা ফেললেই খোয়াতে পারেন লক্ষ লক্ষ টাকা। কলকাতা পুলিশের কয়েকটি থানায় একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। নড়েচড়ে বসেছে লালবাজার। গোয়েন্দা বিভাগ থেকে শহরবাসীদের সতর্ক করাও হচ্ছে। ফেসবুকে একাধিক ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আসছে। বিভিন্ন সুন্দরী মহিলার মুখ এবং অল্প পোশাকের ছবি দিয়ে বন্ধুত্বের অনুরোধ পাঠানো। এই অনুরোধ গ্রহণ করার সঙ্গে সঙ্গেই খেল শুরু। কলকাতার পুলিশের পরামর্শ এই ধরনের কোনও ফেসবুক ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পেলে তা যেন অবিলম্বে ডিলিট করে দেওয়া হয় বা ব্লক করা হয়। কোনওভাবেই প্রতারণার ফাঁদে মানুষ যেন নিজেকে না জড়ায়। আর ভুলবশত এই ফাঁদে পা দিয়ে ফেললেও পুলিশের কাছে যেতে যেন সংকোচবোধ না করে।