মাঝে প্রায় দেড় দশকের গ্যাপ। সেইসময় একসঙ্গে কাজ করেননি দু’জন। বন্ধ ছিল মুখ-দেখাদেখি। হিট জুটি বড়পর্দায় কামব্যাক করেছিল ২০১৬ সালে। ‘প্রাক্তন’ ছবির মাধ্যমে। নন্দিতা রায় ও শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরে। আটপৌরে অথচ আধুনিক গল্প। ছবিটি মন ছুঁয়েছিল দর্শকদের। তারপর আবার ঠিক দু’বছর পর। ২০১৮ সালে। ‘দৃষ্টিকোণ’ ছবিতে। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের পরিচালনায়। এবার তাঁরা, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ও ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, ফিরছেন তাঁদের জুটির ৫০তম ছবি নিয়ে। ছবিটি কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘অযোগ্য’ (Ajogyo)। পরিসংখ্যান বলছে, এর আগে কোনও জুটি একসঙ্গে এতগুলো ছবিতে অভিনয় করেনি। উত্তমকুমার এবং সুচিত্রা সেনও না। বাংলা ছবি তো বটেই, ভারতীয় ছবির ক্ষেত্রেও এটা একটা রেকর্ড। বিশ্বচলচ্চিত্র ইতিহাসেও যা রীতিমতো বিরল। এমন উদাহরণ সত্যিই খুঁজে পাওয়া ভার। ফলে একটি নতুন মাইলস্টোন ছুঁতে চলেছে প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা জুটি।
আগে তাঁদের রোমান্টিক বাণিজ্যিক ছবিতে দেখা যেত। পর্দায় নাচতেন, গাইতেন। মূলত গ্রামবাংলার দর্শকদের কথা ভেবেই তৈরি হত ছবিগুলো। ওই পর্বে একে একে তাঁরা উপহার দিয়েছেন ‘নাগপঞ্চমী’, ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’, ‘মনের মানুষ’, ‘স্ত্রীর মর্যাদা’, ‘মধুর মিলন’, ‘সুন্দরী’, ‘তুমি এলে তাই’, ‘মধু মালতী’-সহ বহু হিট ছবি। যা বাঙালি দর্শকদের ফের হলমুখী করেছিল। পাশাপাশি তাঁদের দেখা গিয়েছে প্রভাত রায়ের ‘খেলাঘর’, ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘উৎসব’-এর মতো ছবিতেও। সেখানেও তাঁরা দারুণভাবে সফল।
তারপর হঠাৎ মান-অভিমান। দীর্ঘ বিরতি।
তাঁদের বিচ্ছেদ নিয়ে কম কানাঘুষো, জলঘোলা হয়নি। বহু মুখরোচক গল্প ছড়িয়েছে হাওয়ায়। কভার স্টোরি হয়েছে বিখ্যাত সিনে পত্রিকায়। তবে এই বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন দু’জনেই। কেউই কারও সম্পর্কে একটি শব্দও খরচ করেননি। কাজ করে গিয়েছেন নিজেদের মতো করে। অন্য নায়ক বা নায়িকার সঙ্গে।
মাঝে ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন জুটি তৈরি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে। জিৎ-কোয়েল, দেব-শুভশ্রীদের দর্শকরা পছন্দ করেছেন। তবে কোনও জুটিই প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণার বিকল্প হয়ে উঠতে পারেনি। দর্শকরা তাঁদের অভাব অনুভব করেছেন প্রতি মুহূর্তে। পরিচালকদের কেউ কেউ চেষ্টা করেছেন দু’জনকে মুখোমুখি বসানোর। কিন্তু সফল হননি। কঠিন বরফ শেষমেশ গলেছে নন্দিতা-শিবপ্রসাদের উদ্যোগে। বিরাট চমক দিয়ে তাঁরা সাইন করান প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণাকে। ‘প্রাক্তন’-এর জন্য।
আরও পড়ুন- সুনীলকে প্রস্তাব মুখ্যমন্ত্রীর, বাংলার ফুটবলের জন্য তোমাকে চাই
ঘটনা হল, ততদিনে অনেকটাই বদলে গিয়েছে বাংলা ছবির ভাষা। প্রসেনজিৎ এবং ঋতুপর্ণাও নিজেদের সময়োপযোগী করে তুলেছেন। দু’জনেই হয়েছেন যথেষ্ট পরিণত। মন ডুবিয়েছেন নাগরিক ছবিতে। শহুরে দর্শকদের কথা ভেবে। সিঙ্গল স্ক্রিনের পাশাপাশি চিনেছেন মাল্টিপ্লেক্স।
কামব্যাক ছবি ‘প্রাক্তন’-এর কাহিনি এবং চিত্রনাট্য তাঁদের ভেবেই লেখা হয়েছিল। ফলে কোনও সমস্যা হয়নি। দু’জনেই নিজেদের উজাড় করে দিয়েছিলেন। কোথাও চোখে পড়েনি জড়তা। একবারও মনে হয়নি দীর্ঘ বিরতির পর ফিরেছেন। ‘দৃষ্টিকোণ’ ছবিতেও তাই। পরিণত প্রেমের টানটান গল্পে তাঁরা আরও একবার নিজেদের দারুণভাবে মেলে ধরেছিলেন প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা। হলমুখী হতে বাধ্য করেছিলেন রুচিশীল দর্শকদের।
‘দৃষ্টিকোণ’-এর ছয় বছর পর আসতে চলেছে ‘অযোগ্য’ (Ajogyo)। হিট জুটির ৫০তম ছবি। নামকরণেই আগ্রহ দানা বেঁধেছে। কে অযোগ্য, কেন অযোগ্য, জানার জন্য কৌতূহলী দর্শকরা। তাঁরা অপেক্ষায় বড়পর্দায় আবারও এই জুটির অনস্ক্রিন ম্যাজিক দেখার জন্য। জোর চর্চা চলছে টলিপাড়ায়। ছবি ঘোষণার পর থেকেই। ফার্স্ট লুক সামনে আসার পর আগ্রহ বহুগুণ বেড়েছে। ট্রেলার ভাইরাল হতে বিন্দুমাত্র সময় লাগেনি।
‘অযোগ্য’ আসলে নির্ভেজাল সম্পর্কের গল্প। এক অসমাপ্ত গল্পও বলা যেতে পারে। প্রেম তো আছেই। তবে পরিণতিহীন। সেইসঙ্গে আছে এক গোপন খেলা। সেই খেলা ঘিরে ঘনীভূত হয়েছে রহস্য।
কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় আঁটসাঁট ভাবেই বেঁধেছেন ছবিটি। এই মুহূর্তে তিনি টলিউডের অন্যতম সেরা পরিচালক। বড়পর্দায় বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেছেন। ইতিহাস সৃষ্টির সুহানা সফরে প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা কৌশিকের চওড়া কাঁধের উপরেই ভরসা করেছেন। চোখ বন্ধ করে। আরও একবার। দুজনেই জানেন, তাঁদের দিয়ে যথাযথভাবে কাজ করিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে এই পরিচালকের। সেইসঙ্গে তিনি গল্প বলেন সহজভাবে। ছুঁয়ে যায় মানুষের মন। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না।
প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণার পাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন গায়ক শিলাজিৎ মজুমদার। নায়ক-নায়িকার সঙ্গে তাঁর লুক নিয়েও চলছে জোর চর্চা। এছাড়াও বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন লিলি চক্রবর্তী, সুদীপ মুখোপাধ্যায়, অম্বরীশ ভট্টাচার্য প্রমুখ। সংগীত পরিচালনা করেছেন অনুপম রায়, ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত ও রণজয় ভট্টাচার্য। গেয়েছেন শ্রেয়া ঘোষাল-সহ কয়েকজন। গানগুলো ইতিমধ্যেই হিট। প্রযোজনায় রয়েছেন সুরিন্দর ফিল্মস-এর নিসপাল সিং। তিনি আশাবাদী ‘অযোগ্য’র (Ajogyo) সাফল্য নিয়ে।
ছবিটি বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে আজ। প্রসেনজিৎ এবং ঋতুপর্ণার মধ্যে কে যোগ্য আর কে অযোগ্য, জানার জন্য অবশ্যই দেখতে হবে ছবিটা। তবেই খোলা যাবে রহস্যের জট।