কলকাতা শহর তখন এতটা বিস্তৃত ছিল না। ছিল না আজকের মতো লোক সমাগম, বহুতল বাড়ি। চোখে পড়ত না তুমুল ব্যস্ততা। শহর ছিল নদীর মতো শান্ত। দিন থেকে রাত, সময়টা মনে হত দীর্ঘ। আশেপাশের এলাকায় ছিল ছোট ছোট গ্রাম। অজ পাড়াগাঁ বলতে যা বোঝায়, মোটামুটি তাই। রাস্তায় দেখা যেত গরুর গাড়ি, ঘোড়ায় টানা গাড়ি, পালকি। পালকিতে সওয়ার হতেন মূলত উচ্চবর্গীয় অথব বিত্তশালীরা। সেই সময় চলছিল ইংরেজ শাসন। আঞ্চলিক রাজা বা জমিদারদের প্রভাব কম ছিল না। ইংরেজদের তুষ্ট করে বহু বিত্তশালী পেয়েছেন রায় বাহাদুর উপাধি।
আরও পড়ুন-আজ কালীঘাটে বৈঠক সাংসদ ও জেলা সভাপতিদের নিয়ে, নবান্নে মঙ্গলবার
তখনকার দিনে শহর কলকাতায় জানবাজার রাজবাড়ির ছিল দারুণ প্রভাব। রাজা বলা হলেও, তাঁরা ছিলেন মূলত জমিদার। অত্যন্ত সাধারণ পরিবার থেকে তাঁদের উত্তরণ হয়েছিল জমিদারির স্তরে। এই পরিবারের কৃষ্ণরাম ছিলেন বাঁশের ব্যবসায়ী। তাঁর উপাধি হয়েছিল ‘মাড়’। তাঁর ছেলে প্রীতিরাম চাকরি করতেন কাস্টমস হাউসে। পাশাপাশি শুরু করেছিলেন চালের ব্যবসাও।
এই দাস পরিবার কিন্তু প্রথম থেকেই কলকাতার বাসিন্দা নন। তাঁদের আদি বাস ছিল হাওড়ার খোসালপুর গ্রামে। কৃষ্ণরাম দাসের বোন বিন্দুবালা দাসীর বিয়ে হয়েছিল কলকাতার জানবাজারের জমিদার মান্না পরিবারে। পিসির বিয়ের পরে সম্পর্কের সূত্রে তাঁর শ্বশুরবাড়িতে দুই ভাইকে নিয়ে থাকতে আসেন প্রীতিরাম। ক্রমে জমিদার মান্না পরিবারের সঙ্গে আরও দৃঢ় হয় দাস পরিবারের সম্পর্ক। যুগল মান্নার মেয়েকে বিয়ে করেন প্রীতিরাম। সেই বিয়েতে তিনি যৌতুক পান জানবাজারের কয়েকটি বাড়ি এবং ১৬ বিঘে জমি।
আরও পড়ুন-শনিবারের পরিস্থিতি আরও খারাপ শিয়ালদহ স্টেশনে! ঢুকছে না বহু ট্রেন
প্রীতিরামের মেজ ছেলে ছিলেন রাজচন্দ্র দাস। তিনি বিয়ে করেন রাসমণিকে। ১৮০৪ সালে। স্বামীর মৃত্যুর পরে রাসমণির হাতে চলে আসে জমিদারির রাশ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ‘জমিদারগিন্নি’ থেকে তাঁর উত্তরণ হয় ‘রানি’র উচ্চতায়। জনহিতৈষী কাজের জন্য তিনি খ্যাতি অর্জন করেন।
রানি রাসমণির জীবনের আরেকটি উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দির প্রতিষ্ঠা। কথিত আছে, ১৮৪৭ সালে অন্নপূর্ণা পুজোর জন্য কাশীতে তীর্থযাত্রার পূর্বরাত্রে তিনি মা কালীর স্বপ্নদর্শন পান। তারপর গঙ্গার তীরে সমস্ত জমি বিক্রি করে মন্দির নির্মাণের কাজ শুরু করেন।
মন্দির স্থাপনের জন্য জন হেস্টি নামের একজন ইংরেজদের কাছ থেকে হুগলি নদীর তীরে প্রায় ২০ একর জমি কেনা হয়, যা বর্তমানে সাহেবান বাগিচা নামে পরিচিত। কলকাতা শহর থেকে অনেকটাই দূরে। ১৮৫৫ সালের ৩১ মে জগন্নাথদেবের স্নানযাত্রার দিন মহাসমারোহে মন্দিরে মাতৃমূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়। সেই দেবীর নাম শ্রীশ্রী জগদীশ্বরী কালীমাতা ঠাকুরানী। লোকমুখে প্রচারিত ভবতারিণী নামে। মন্দিরের প্রথম এবং প্রধান পুরোহিত ছিলেন কামারপুকুর গ্রামের রামকুমার চট্টোপাধ্যায়। তাঁর ভাই গদাধর চট্টোপাধ্যায় ও ভাগনে হৃদয়রাম পুরোহিতের সহকারী হিসাবে গ্রহণ করেন প্রতিমার সাজসজ্জার দায়িত্ব। ১৮৫৬ সালে রামকুমারের মৃত্যু হলে গদাধর তার স্থলাভিষিক্ত হন। অল্প সময়ের মধ্যেই গদাধর ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব নামে পরিচয় লাভ করেন। দক্ষিণেশ্বর হয়ে ওঠে তাঁর লীলাভূমি। তিনি কালীকে মা ও বিশ্বজননী রূপে দেখতে শুরু করেন। দেবীর প্রত্যক্ষ রূপ দর্শনের জন্য হয়ে ওঠেন ব্যাকুল। তাঁর বিশ্বাস, পাষাণপ্রতিমা জীবন্ত হয়ে অন্নগ্রহণ করতে শুরু করেন। পূজা করতে করতে দেবীর দর্শন না পেয়ে তিনি চিৎকার করে কেঁদে উঠতেন। কেউ কেউ বলতে থাকেন, তিনি পাগল হয়ে গেছেন, আবার কেউ বলেন, তিনি ঈশ্বরের প্রেমে আকুল। ১৮৫৯ সালে পঞ্চমবর্ষীয়া বালিকা সারদামণি মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর শাস্ত্রমতে বিবাহ সম্পন্ন হয়। শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের বয়স তখন তেইশ। ১৮৬০ সালের ডিসেম্বরে তিনি সারদা দেবীকে ছেড়ে দক্ষিণেশ্বরে ফিরে আসেন। তার প্রায় একযুগ পর, ১৯৭২ সালে সারদা দেবী দক্ষিণেশ্বরে যান। নহবতখানার ঘরে তাঁর থাকার ব্যবস্থা হয়। সেই সময় সারদা দেবী শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসের সাধনাসঙ্গিনী হয়ে ওঠেন। উপলব্ধি করেন, তাঁর স্বামী পাগল নন, একজন ভক্তিবাদী সাধক।
১৮৮১ সালের শেষদিকে অথবা ১৮৮২ সালের প্রথম দিকে দু’জন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে কলকাতার শিক্ষিত যুবক নরেন্দ্রনাথ দত্ত দক্ষিণেশ্বরে আসেন। শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে। ঘটনাক্রমে একটা সময় নরেন্দ্রনাথ হয়ে ওঠেন শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের প্রিয় শিষ্য, স্বামী বিবেকানন্দ। অস্থির মন নিয়ে দক্ষিণেশ্বরে ছুটে এসেছিলেন নট ও নাট্যকার গিরিশচন্দ্র ঘোষও। পেয়েছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের আশীর্বাদ।
আরও পড়ুন-নিশীথ হেরে যেতেই তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ ৯ বিজেপি নেতার
ফেরা যাক দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের কথায়। ১৮৫৫ সালে এলাকাটি ছিল গ্রাম। গঙ্গা তীরবর্তী অঞ্চলে ছিল জঙ্গল। যাতায়াতের তেমন সুব্যবস্থা ছিল না। এমনিই একটি জায়গায় প্রতিষ্ঠিত হয় মা কালীর মন্দির। মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করতে আট বছরে প্রায় ৯ লক্ষ টাকা ব্যয় করা হয়েছিল। নির্মিত হয়েছিল বঙ্গীয় স্থাপত্যশৈলীর নবরত্ন স্থাপত্যধারায়, টালিগঞ্জের রামনাথ মণ্ডলের নবরত্ন মন্দিরের আদলে। পূর্বদিকের মন্দিরে অবস্থিত বিগ্রহটি মাতা ভবতারিণী কালিকা নামে পরিচিত। তিনতলা দক্ষিণমুখী এই মন্দিরের উপরের দুটি তলে নয়টি চূড়া দেখতে পাওয়া যায়। উত্তোলিত দালানের উপর মন্দিরের গর্ভগৃহটি স্থাপিত হয়েছে।
মন্দিরে দালানটির উচ্চতা ১০০ ফুট এবং ৪৬ বর্গফুট প্রসারিত। গর্ভগৃহে রুপোর সহস্রদল পদ্মের উপরে কালী শিবের বক্ষের উপর অবস্থান করছেন। দক্ষিণেশ্বর চত্বরে কালীমন্দির ছাড়াও একাধিক দেবদেবীর মন্দির ও অন্যান্য ধর্মস্থল অবস্থিত। রয়েছে নাটমন্দির। মূল মন্দিরের কাছে রয়েছে বারোটি একই প্রকার দেখতে পূর্বমুখী শিবমন্দির। মন্দির চত্বরের উত্তর-পূর্বে রয়েছে রাধাকান্ত মন্দির। এই মন্দিরে একটি রুপোর সিংহাসনে সাড়ে একুশ ইঞ্চির কৃষ্ণ ও ষোলো ইঞ্চির রাধামূর্তি প্রতিষ্ঠিত। রানি রাসমণির গৃহদেবতাও দক্ষিণেশ্বরে অধিষ্ঠান করছেন। এই মন্দিরে শাক্ত, বৈষ্ণব ও শৈব, তিন ধারার পুজো হয়। কারণ ব্যবহার নিষিদ্ধ। অতীতের নিয়ম মেনে নারকেলের জল ঢেলে পুজো হয়। শুধুমাত্র ধর্মীয় স্থান হিসেবে বিখ্যাত নয়, দক্ষিণেশ্বর মন্দিরকে ঘিরে জড়িয়ে রয়েছে অতীব গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক বহু ঘটনা। স্বাধীনতা আন্দোলন, বিদেশি শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো বহু ঘটনার সাক্ষী এই মন্দির।
প্রায় ১৭০ বছরের পুরনো মন্দির, পুণ্যভূমি দক্ষিণেশ্বর। মন্দিরটি যখন প্রতিষ্ঠিত হয় তখন দক্ষিণেশ্বর ছিল গ্রাম। বর্তমানে বৃহত্তর কলকাতার অংশ। সময়ের বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে অনেককিছুই। আগের তুলনায় অনেক উন্নত হয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। গঙ্গার উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিবেকানন্দ সেতু। সড়ক পথে ছুটছে বিভিন্ন রুটের বাস, ট্যাক্সি, ব্যক্তিগত গাড়ি। আছে রেলপথ। দ্রুত গতিতে ছুটছে ট্রেন। জলপথে চলে লঞ্চ। যাওয়া যায় বেলুড় মঠ। কয়েক বছর আগে চালু হয়েছে মেট্রো রেল। এছাড়াও স্থানীয় অঞ্চলে পাওয়া যায় টোটো, রিকশা ইত্যাদি। যাওয়া যায় আদ্যাপীঠ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে চলাচলের সুবিধার জন্য দক্ষিণেশ্বরে তৈরি হয়েছে স্কাই ওয়াক। ফলে দূরদূরান্তের মানুষজন বাস, ট্রেন, মেট্রো থেকে নেমে সহজেই পৌঁছতে পারেন দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে। একদিন সকাল সকাল পৌঁছে গেলাম আমিও। দেখলাম, দক্ষিণেশ্বর মন্দির চত্বরটি যথেষ্ট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। ঘটেছে ঐতিহ্য এবং আধুনিকতার মেলবন্ধন। সবদিকেই চোখে পড়ছে পরিকল্পনার ছাপ। প্রতিদিন অগণিত মানুষ আসেন। পুজো দেন। স্কাইওয়াক এবং মন্দির চত্বরের ডালা আর্কেডে আছে অনেকগুলো ছোট ছোট স্টল। সেখানে পাওয়া যায় পুজোর ডালা, মা কালীর ছবি, মিষ্টি ইত্যাদি। বিক্রেতারা হাসিমুখে করজোড়ে সবাইকে স্বাগত জানান। অমায়িক তাঁদের ব্যবহার। দক্ষিণেশ্বর ডালা আর্কেডে একটি স্টলে কথা হল বিক্রেতা সুমিত চক্রবর্তীর সঙ্গে। তিনি জানালেন, আমাদের এখানে বিভিন্ন দামের ডালা পাওয়া যায়। ভক্তরা পছন্দমতো কেনেন। কাউকে কোনওরকম জোর করা হয় না। বিশেষ বিশেষ দিনে বেশি ভিড় হয়। গমগম করে ডালা আর্কেড। আমরা যতটা সম্ভব দর্শনার্থীদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করি।
আরও পড়ুন-বৃক্ষরোপণের প্রক্রিয়া শুরু করলেন দেব
মন্দির এবং ভক্তবৃন্দের নিরাপত্তার কারণে আঁটসাঁট করা হয়েছে সুরক্ষা ব্যবস্থা। কামারহাটি মিউনিসিপ্যালিটির ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিতট্র দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দির। এই ওয়ার্ডের পুর প্রতিনিধি অরিন্দম ভৌমিকের সঙ্গে কথা হল। তিনি জানালেন, আগে সুরক্ষা নিয়ে এতটা কড়াকড়ি ছিল না। তখন কয়েকজন দারোয়ান ছিলেন। তাঁরাই সবদিক দেখাশোনা করতেন। এখন পেশাদার এজেন্সি সংস্থাকে সুরক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি রাজ্য সরকারের পুলিশ ক্যাম্প তো আছেই। বছরে এক কোটির বেশি মানুষ দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে আসেন। এত পরিমাণ মানুষের ভিড় সামলানোর জন্যই মূলত এই ব্যবস্থা। সবচেয়ে বেশি ভিড় হয় কল্পতরু উৎসবে, শ্যামা কালীপুজোর দিনে। দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে পাণ্ডাদের উপস্থিতি নেই। নেই পুরোহিতদের চাহিদা। ডালা বিক্রেতারা হাত ধরে টানাটানি করে না। সমস্তকিছু সুন্দরভাবে হয়ে যায়। মন্দির কমিটির সদস্যরা পুরোটা দেখাশোনা করেন। সহযোগিতা করে কামারহাটি মিউনিসিপ্যালিটি, স্থানীয় প্রশাসন। এই ওয়ার্ডের পুর প্রতিনিধি হিসেবে আমারও কিছু দায়িত্ব আছে। সেটা যতটা সম্ভব পালন করার চেষ্টা করি।
মন্দির প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে হয় ক্যামেরা এবং মোবাইল ফোন ছাড়াই। সেগুলো জমা রাখার বিশেষ ব্যবস্থা আছে। আছে বাইরে চটিজুতো রাখার ব্যবস্থাও। মূল মন্দির প্রাঙ্গণে সুশৃঙ্খল ভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে পুজো দিতে হয়। অনেকগুলো লাইন। ডালা হাতে দাঁড়িয়ে পড়লাম পুজোর লাইনে। কোথাও কোনওরকম অস্থিরতা বা অব্যবস্থা চোখে পড়ল না। পুরোহিতরা নিষ্ঠার সঙ্গে পুজো করছেন। ভক্তেরা সামর্থ্যমতো দক্ষিণা দিচ্ছেন। নাটমন্দিরে বিতরণ করা হচ্ছে চরণামৃত। মাতৃদর্শনের পর ঘুরে দেখলাম মন্দির প্রাঙ্গণ। দ্বাদশ শিব মন্দির সহ অনেকগুলো মন্দির। তৃষ্ণা নিবারণের জন্য আছে পানীয় জলের ব্যবস্থা। পুরো চত্বরটা পাথরে মোড়া। গরমে খালিপায়ে যাতে হাঁটাচলার অসুবিধা না হয়, তার জন্য আঁকা হয়েছে সাদা রঙের পথ। পাশাপাশি নিয়ম করে ছড়ানো হয় জল। এতটাই সুব্যবস্থা। মন্দির চত্বরে রয়েছে শৌচাগার, গাড়ি রাখার সুব্যবস্থা, ভোজনালয় ইত্যাদি। লোকমাতা রানি রাসমণি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে গড়ে উঠেছে পাঠাগার প্রজ্ঞাতীর্থ।
মূল মন্দির ছাড়াও আছে আরও কিছু দর্শনীয় স্থান। মন্দির চত্বরের উত্তর-পশ্চিম কোণে রয়েছে শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসের বাসগৃহ, কুঠিবাড়ি। মন্দির চত্বরের বাইরে রয়েছে সারদা দেবী বাড়ি। সেই বাড়ির নামকরণ করা হয়েছে সারদা দেবীর মন্দির। কাছেই রয়েছে পঞ্চবটি। অশ্বথ, বট, বিল্ব, অশোক ও আমলকী গাছের বন। এখানে নিয়মিত সাধনায় বসতেন শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব। মূল মন্দির চত্বরের বাইরে রামকৃষ্ণ পরমহংস ও তাঁর পরিবারবর্গের স্মৃতিবিজড়িত আরও কয়েকটি স্থান রয়েছে। আজও পুণ্যার্থীদের আকর্ষণ করে। মূল মন্দির প্রাঙ্গণে ঢোকার আগে রয়েছে রানি রাসমণির মন্দির। এছাড়াও আছে গঙ্গার ঘাট। সবগুলো ঘুরে দেখা যায়। যদিও বর্তমানে কিছু জায়গায় প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন-বৈঠক শেষে এক নজরে তৃণমূলের সংসদীয় কমিটি
দক্ষিণেশ্বর মন্দির কমিটির সম্পাদক ও ট্রাস্টি কুশল চৌধুরীর সঙ্গে কথা হল। তিনি জানালেন, বর্তমানে মন্দির খোলা থাকে ভোর ছ’টা থেকে বেলা সাড়ে বারোটা পর্যন্ত, বিকেলে সাড়ে তিনটে থেকে সন্ধে সাড়ে সাতটা পর্যন্ত। সারা বছরই ভিড় থাকে। তবে বিশেষ পুজোর দিনে ভিড় উপচে পড়ে। তখন মন্দির বেশি সময়ের জন্য খোলা রাখা হয়। সেটা নির্ধারিত হয় তার কয়েকদিন আগে। যেমন, শ্যামা কালীপুজোর দিন, কল্পতরু উৎসবে। তবে ফলহারিণী কালীপুজোয় দিন অতিরিক্ত সময় মন্দির খোলা থাকে না।
আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে দক্ষিণেশ্বর মন্দির চত্বরে। ঘটেছে বাহ্যিক পরিবর্তন। সংস্কৃত মন্ত্রোচ্চারণের পাশাপাশি এখন উচ্চারিত হয় তার সাদামাঠা বাংলা অনুবাদ। তবে মা কালীর পুজোর নিয়মে বিন্দুমাত্র বদল আসেনি। শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব যে ভাবে চার প্রহরে নিত্য মহাপুজো করতেন, সবটাই একই ভাবে হয়ে আসছে। বছরের পর বছর ধরে। ভবিষ্যতেও এর অন্যথা হবে না। এই পবিত্র পীঠ আজও সগৌরবে দাঁড়িয়ে রয়েছে বহমান সময়ের সাক্ষী হয়ে। আগামী দিনেও এইভাবেই দাঁড়িয়ে থাকবে। কয়েক বছর পর, ঐতিহাসিক এই মন্দির ছুঁয়ে ফেলবে দুই শতাব্দী। অগণিত উদারমনা ভক্তিপ্রাণ মানুষ এখন সেই দিকেই তাকিয়ে।