বিশ্ব জুড়ে যথেচ্ছ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার, দমছে না প্রাণঘাতী ব্যাকটেরিয়া

মাত্রাতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ফলে ভবিষ্যতে ব্যাকটিরিয়ার সংক্রমণ প্রতিরোধে শরীর সাড়া দেবে না এমন আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে।

Must read

প্রতিবেদন: সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বব্যাপী বিবর্তন হচ্ছে ব্যাকটিরিয়া-কুলের। শরীরে নানা ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ বাড়ছে। জনস্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে নয়া তালিকার কথা জানাল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। প্রায় সাত বছর পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) মানব সভ্যতার পক্ষে বিপজ্জনক প্রাণঘাতী ব্যাকটেরিয়ার এক তালিকা প্রকাশ করেছে। যা দেখে চিন্তা বাড়ছে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে যেভাবে আকছার অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারের প্রবণতা বেড়েছে তাতে মানবদেহে ‘অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স’ বেশি মাত্রায় তৈরি হচ্ছে। এই কারণে ব্যাকটেরিয়া প্রতিহত করার ক্ষমতা ক্রমাগত কমে যাচ্ছে। মাত্রাতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ফলে ভবিষ্যতে ব্যাকটিরিয়ার সংক্রমণ প্রতিরোধে শরীর সাড়া দেবে না এমন আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে।

আরও পড়ুন-দুর্গাপুরে অবৈধ মদের ব্যবসা, আটক বিজেপি নেতার বোন

সাধারণভাবে দেহে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক ও অন্যান্য পরজীবীর সংক্রমণ দেখা দিলে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিক যদি এই সংক্রমণ আটকাতে না পারে তখন বুঝতে হবে শরীরে রেজিট্যান্স তৈরি হয়েছে। সাধারণ ভাষায় বলতে গেলে ওষুধ তখন কাজ করে না। এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির কথা বিবেচনায় রেখে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের চিন্তা বাড়ছে। এরকম পরিস্থিতি থেকে বাঁচার উপায় খুঁজতে পরামর্শ দিয়েছে হু। সেইসঙ্গে বলছে, এর জন্য অবিলম্বে নতুন ও বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির সন্ধান শুরু করা প্রয়োজন। চলতি বছরে হু-র প্রকাশিত ‘ব্যাকটিরিয়াল প্রায়োরিটি প্যাথোজেনস লিস্ট’-এ ১৫ ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক-রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়াকে তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথমে রাখা হয়েছে সবচেয়ে বিপজ্জনক তালিকাভুক্তদের, তারপর যথাক্রমে খুব বিপজ্জনক ও মাঝারি বিপজ্জনক ব্যাকটেরিয়ার নাম।
প্রাণঘাতী ব্যাকটেরিয়ার তালিকা :
সবচেয়ে বিপজ্জনক
অ্যাসিনেটোব্যাকটর বাউমানি (কারবাপেনেম- রেজিস্ট্যান্ট)
এনটেরোব্যাকটেরালিস (থার্ড জেনারেশন সেফালোস্পোরিন- রেজিস্ট্যান্ট)
এনটেরোব্যাকটেরালিস
(কারবাপেনেম- রেজিস্ট্যান্ট)
মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস
(রাইফ্যামপিসিন- রেজিস্ট্যান্ট)
খুব বিপজ্জন

সালমোনেল্লা টাইফি (ফ্লুরোকুইনোলোন- রেজিস্ট্যান্ট)
শিগেলা এসপিপি (ফ্লুরোকুইনোলোন- রেজিস্ট্যান্ট)
এনটেরোকক্কাস ফেসিয়াম (ভ্যানকোমাইসিন- রেজিস্ট্যান্ট)
সিউডোমোনাস এরুজিনোসা (কারবাপেনেম- রেজিস্ট্যান্ট)
নন-টাইফয়ডাল সালমোনেল্লা
(ফ্লুরোকুইনোলোন- রেজিস্ট্যান্ট)
নেসেরিয়া গনোরিয়া (থার্ড জেনারেশন সেফালোস্পোরিন এবং ফ্লুরোকুইনোলোন- রেজিস্ট্যান্ট)
স্ট্যাফাইলোকক্কাস অরিয়াস (মেথিসিলিন-রেজিস্ট্যান্ট)
মাঝারি বিপজ্জনক
গ্রুপ এ স্ট্রেপটোকক্কাই (ম্যাক্রোলাইড-রেজিস্ট্যান্ট)
স্ট্রেপটোকক্কাস নিউমোনিয়া (ম্যাক্রোলাইড- রেজিস্ট্যান্ট)
হিমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা (অ্যাম্পিসিলিন-রেজিস্ট্যান্ট)
গ্রুপ বি স্ট্রেপটোকক্কাই (পেনিসিলিন-রেজিস্ট্যান্ট)
এর আগে ২০১৭ সালে এরকমই সতর্কবার্তা প্রকাশ করেছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। হু-র অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স বিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর-জেনারেল ইউকিকো নাকাতানি বলেছেন, বিশ্বে কী পরিমাণ ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স ব্যাকটিরিয়া রয়েছে, তার মানচিত্র তৈরি করা হয়েছে। জনস্বাস্থ্য ক্ষেত্রে এর প্রভাব বিশ্লেষণ করাও হচ্ছে। এই সব বিপজ্জনক ব্যাকটেরিয়া চিহ্নিত করার পাশাপাশি সমাধানের পথও উল্লেখ করা হয়েছে তালিকায়।

Latest article