প্রতিবেদন: প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বিধ্বস্ত সিকিম। একদিকে একের পর এক ধস, অন্যদিকে প্রবল জলস্ফীতি তিস্তায়। এককথায় ভয়াবহ অবস্থা। আকাশভাঙা বৃষ্টির দাপটে ধস নেমেছে উত্তর সিকিমের লাচুং এলাকায়৷ ঠিক কতজন হতাহত হয়েছে সুনির্দিষ্টভাবে জানা না গেলেও বৃহস্পতিবার লাচুংয়ের পার্কসাঙ্গ থেকে উদ্ধার হয়েছে ৩টি মৃতদেহ৷ নিখোঁজ ২ জন। এর আগে সোমবার ভোররাতে দক্ষিণ সিকিমের মাজুয়া বস্তিতে পাথর চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছিল ৩ জনের। পাহাড়ি রাস্তায় আটকে পড়েছেন প্রায় ৮০০ পর্যটক।
আরও পড়ুন-জলসেচের উন্নয়নে চারটি গভীর নলকূপের সংস্কারের কাজ শুরু
ঘটনার পরই জরুরি বৈঠক ডাকেন উত্তর সিকিমের জেলাশাসক। তবে এখনও মৃতদের নাম জানা যায়নি। টানা বৃষ্টির কারণে জলস্ফীতি হয়েছে তিস্তা নদীতে। বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে লাচুংয়ে৷ নদী-লাগোয়া বেশকিছু ঘরবাড়ি জলের স্রোতে ভেসে গিয়েছে ৷ বেশ কয়েক জায়গায় রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সিংথাম ও রংপোতে তিস্তা লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে। যোগাযোগ রাখা হয়েছে কালিম্পং প্রশাসনের সঙ্গে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জেরে বৃহস্পতিবার যোগাযোগ প্রায় বন্ধ কালিম্পংয়ের সঙ্গে। প্রশাসনের আশঙ্কা, যে কোনও সময় বন্ধ হতে পারে বাংলা-সিকিম লাইফলাইন ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক। কারণ উত্তর সিকিমে টানা বৃষ্টির জেরে ফের ভয়াল রূপ ধারণ করেছে তিস্তা। কালিম্পং যেমন বিচ্ছিন্ন, ঠিক তেমনই জোড়বাংলো হয়ে ঘুম যাওয়ার রাস্তাটিও জলের তলায় চলে যাওয়ায় যোগাযোগ-ব্যবস্থা কার্যত বিপর্যস্ত। বুধবার রাত থেকেই টানা বৃষ্টি চলছে পাহাড়ি রাজ্যে। স্বাভাবিকভাবেই জলস্তর বেড়েছে তিস্তার। কোথাও কোথাও তো জাতীয় সড়কের কাছে উঠে গিয়েছে তিস্তার জল। আর তিস্তার জল বাড়তেই ফের একবার আতঙ্কে পাহাড়বাসী। এর জেরে জাতীয় সড়ক বন্ধ হলে প্রভাব পড়বে পর্যটনেও৷ তিস্তার জল বাড়ায় জল ঢুকে পড়েছে তিস্তা বাজারের একাংশে। গত অক্টোবর মাসে তিস্তায় হড়পা বানের জেরে প্লাবিত হয় তিস্তা বাজার এলাকা। এখনও সেই ক্ষত পূরণ হয়নি। সবে শুরু হয়েছে পুনর্বাসনের কাজ। আর এর মধ্যেই ফের একবার বন্যার মুখে তিস্তা বাজার৷ অন্যদিকে, তিস্তার জলের স্রোতে মাল্লির এক জায়গায় জাতীয় সড়কের একাংশ ধসে গিয়েছে। তিস্তায় রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে প্রশাসনের তরফে। ইতিমধ্যে ময়দানে নেমেছে পুলিশ ও প্রশাসনের আধিকারিকরা। গোটা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন তাঁরা। তবে তিস্তার জল বাড়ায় আতঙ্কে তিস্তা বাজার, মাল্লি এলাকার বাসিন্দারা। সিকিমে যতক্ষণ পর্যন্ত বৃষ্টি না-থামবে ততক্ষণ জলস্তর নামার কোনও সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। ইতিমধ্যই সিকিমের মাঙ্গনে জেলার প্রশাসনিক আধিকারিকরা ডিএম-এর নির্দেশে ত্রাণ কাজ শুরু করেছেন৷ সর্বক্ষণ পরিস্থিতি নজর রাখছেন তাঁরা৷ লক্ষণীয়, সোমবার ভোররাতে দক্ষিণ সিকিমের ইয়াংগামের মাজুয়া বস্তিতে পাহাড়ের উপর থেকে ক্রমাগত গড়িয়ে পড়া পাথর চাপা পড়ে ঘুমের মধ্যেই প্রাণ হারিয়েছিলেন ৩ জন।