প্রতিবেদন: বিমানবন্দরে তখন প্রায় পিন-পতন নিস্তব্ধতা। আত্মীয়-অনাত্মীয় অনেকের চোখেই জল। কুয়েতে বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডে মৃত ভারতীয়দের মরদেহ নিয়ে দেশে ফিরল বায়ুসেনার সি-১৩০জে বিমান। শুক্রবার ভোরেই ভারতীয়দের দেহ নিয়ে বিমান কুয়েত থেকে যাত্রা শুরু করে। এরপর বেলা ১১টার কিছু আগে কেরলের কোচি বিমানবন্দরে অবতরণ করে বায়ুসেনার বিশেষ বিমান। উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন-সহ কেরল সরকারের উচ্চপদস্থ মন্ত্রী-আমলারা।
আরও পড়ুন-নিট মামলায় এনটিএকে নোটিশ সুপ্রিম কোর্টের
মৃত ৪৫ জন ভারতীয়র মধ্যে ২৩ জনই যেহেতু কেরলের তাই বিমানটি সরাসরি অবতরণ করে কোচি বিমানবন্দরেই। সেখান থেকে বাকিদের দেহ নিয়ে বিমান উড়ে যায় দিল্লি। সেখান থেকে মরদেহ নিয়ে যাওয়ার কথা বাংলা, বিহার, ওড়িশা-সহ বিভিন্ন রাজ্যে। লক্ষণীয়, এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের বাসিন্দা দ্বারিকেশ পট্টনায়ক(৫২)। তাঁর আদিবাড়ি দাঁতনে। তবে এখন তাঁর স্ত্রী অন্তরা এবং মেয়ে ঐশী রয়েছেন মেদিনীপুর শহরের শরৎপল্লিতে। ঐশী একাদশ শ্রেণির ছাত্রী বলে জানা গিয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকেই মৃতদের পরিবারের সদস্যরা অপেক্ষা করছিলেন বিমানবন্দরে। বায়ুসেনার বিশেষ বিমানে মরদেহ ফিরতেই শোকের পরিবেশ তৈরি হয় বিমানবন্দর চত্বরে। প্রিয়জনের কফিন দেখে অনেকেই ভেঙে পড়েন কান্নায়। শুক্রবার সকালে কুয়েতের ভারতীয় দূতাবাসের পক্ষ থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখা হয়, বায়ুসেনার বিশেষ বিমানে কুয়েতের অগ্নিকাণ্ডে হত ৪৫ ভারতীয়দের দেহ কোচি বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বায়ুসেনার বিশেষ বিমানে কেন্দ্রীয় বিদেশ প্রতিমন্ত্রীও এদিন দেশে ফেরেন।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
বুধবার ভোরে কুয়েতের রাজধানী শহরের দক্ষিণে মাঙ্গাফ এলাকার একটি বহুতল আবাসনে আগুন লাগে। জানা যায়, ওই আবাসনে মূলত থাকেন শ্রমিকেরা, যাঁদের অধিকাংশই ভারতীয়। প্রথমে জানা গিয়েছিল, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। পরে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয় ৪৯। হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় প্রায় ৫০ জনকে। দুর্ঘটনায় যে ভারতীয়দের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের মধ্যে অনেকেই দক্ষিণ ভারতের বাসিন্দা বলে জানা গিয়েছে। কুয়েত সরকারের তরফে যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে মোট ৪৫ জন ভারতীয় মারা গিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ২৩ জনই কেরলের বাসিন্দা। তবে এঁদের মধ্যে ৭ জন থাকতেন তামিলনাডুতে।। উত্তরপ্রদেশ এবং অন্ধ্রপ্রদেশের ৩ জন করে মানুষের মৃত্যু হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ওড়িশার দু’জনের মৃত্যু হয়। তাছাড়া পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, হরিয়ানা, ঝাড়খণ্ড, কর্নাটক, মহারাষ্ট্র এবং পাঞ্জাবের একজন করে ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এর্নাকুলাম রেঞ্জের ডিআইজি পুট্টা বিমলাদিত্য জানালেন, কেরলের ২৩টি মৃতদেহ, তামিলনাড়ুর ৭টি এবং কর্নাটকের একটি মৃতদেহ কোচি বিমানবন্দরে নামানো হয়েছে। প্রতিটি মরদেহের জন্য একটি করে গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রস্তুত অ্যাম্বুল্যান্সও।