ওটিটি প্ল্যাটফর্মের রমরমার যুগে ছোটপর্দার মেগা ধারাবাহিকগুলো যথেষ্ট চাপে। চ্যানেলগুলো কিন্তু দর্শক টানতে পারছে না বড় একটা। খুব বলিষ্ঠ কনটেন্ট ছাড়া টিকে থাকা দায় হয়ে যাচ্ছে ফলে নিজের জায়গা ধরে রাখতে মরিয়া তারা। আসলে ‘কাহানিমে ট্যুইস্ট’টাই হল দর্শক টানার আসল দাওয়াই। দুশো, তিনশো বা পাঁচশো এপিসোডের একটা ধারাবাহিককে একই রকমভাবে টেনে নিয়ে যাওয়া মুখের কথা নয়। কারণ দর্শক চান প্রতিমুহূর্তে চমক। চান পিঠের শিরদাঁড়া সোজা করে টানটান উত্তেজনা নিয়ে গল্পের ভিতরে ঢুকে পড়তে। তাই তাঁদের মনের আবেগের পারদের সঙ্গে সিরিয়ালের টিআরপি-র পারদও ওঠা-নামা করে। সেই টিআরপি মুখ থুবড়ে পড়লে সিরিয়ালও পড়ে যায়। ভোটবাজার হোক বা সিরিয়ালের জনতাই জনার্দন।
ফলে এহেন প্রতিযোগিতার যুগে মেগা বাঁচাতে টাইম ল্যাপসই সহজতম পন্থা বলে মনে করছেন নির্মাতারা এবং সেই পথে গিয়ে সফলও হচ্ছে বর্তমানে সম্প্রচারিত জনপ্রিয় মেগাগুলি তার উদারহরণও ভূরি ভূরি।
যেমন সম্প্রতিই বড়সড় লিপ আসতে চলেছে স্টার জলসার জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘হরগৌরী পাইস হোটেল’এ।
আরও পড়ুন-গঙ্গা আমার মা
এক ঝটকায় ১৫ বছর এগোচ্ছে এই ধারাবাহিকের গল্প। একসঙ্গে বিদায় নেবে শঙ্কর এবং-ঐশানীর চরিত্র। ২০২২-এর শেষের দিকে শুরু হয়েছিল এই ধারাবাহিকটি। শুরুর দিন থেকেই টিআরপির দৌড়ে ছিল একনম্বরে। দুই ভিন্ন গোত্রের মানুষের একসঙ্গে পথচলার গল্প এই ‘হরগৌরী পাইস হোটেল’। একদিকে বিত্তশালী পরিবারের মেয়ে ঐশানী। পড়াশোনাই যার ধ্যান জ্ঞান। আরও বেশি করে পড়তে চায় সে। অন্যদিকে সাধারণ পরিবারের ছেলে শঙ্কর। যে থাকে কালীঘাটের পুরনো এক গলিতে। ‘হরগৌরী পাইস হোটেল’কে কেন্দ্র করেই শঙ্করের জীবন আবর্তিত। আজকের আধুনিক জীবনযাত্রা থেকে অনেকটাই পিছিয়ে তারা। শিক্ষিত হওয়ার সেখানে বিশেষ দাম নেই। বিধির বিধানেই শঙ্কর আর ঐশানীর বিয়ে হয়। শঙ্করের চরিত্রে রয়েছেন অভিনেতা রাহুল মজুমদার এবং ঐশানীর চরিত্রে শুভস্মিতা মুখোপাধ্যায়। প্রযোজক যিশু এবং নীলাঞ্জনার ‘ব্লু ওয়াটার মোশন পিকচার্স’। চলতি মাসের শুরুতেই ৫০০ পর্ব ছুঁয়েছে এই মেগা। হঠাৎ করে শোনা গেল শঙ্কর আর ঐশানীকে আর দেখা যাবে না এই ধারাবাহিকে। কাহিনিতে আসছে বড় ট্যুইস্ট। বড় হয়ে যাচ্ছে তাঁদের মেয়ে ধৃতি। সেই সঙ্গে সিরিয়াল থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন অভিনেতা রাহুল মজুমদার। কারণ হিসেবে অভিনেতা জানান, ‘বয়স্ক বাবার চরিত্রে এখনই নাকি অভিনয় করতে চান না তিনি’। এবার শঙ্কর-ঐশানীর মেয়ে ধৃতিকে কেন্দ্রে রেখে এগোবে গল্প। ধৃতির চরিত্রে পুনরায় ফিরবেন শুভস্মিতা। আর ফিরবেন নতুন নায়ক। কাহিনির এই নতুন সব চমক কতটা দর্শক টানে সেটাই দেখার।
আরও পড়ুন-যোদ্ধা মায়ের অভিযান
এমনভাবেই কয়েকদিন আগেই লিপ হয়েছিল কালারসের ‘সোহাগ চাঁদ’ ধারাবাহিকেও। দুরন্ত গতিতে এগিয়ে চলা গল্প ‘সোহাগ চাঁদ’। সোহাগ প্লাস সাইজের একটি মেয়ে। সোহাগের ঘনিষ্ঠ বন্ধু চাঁদ সুন্দরী কোনও মেয়েকে বিয়ে করার স্বপ্ন দেখত সবসময় কিন্তু ঘটনাক্রমে সোহাগের সঙ্গেই বিয়ে হয় তাঁর। এরপর নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয় সোহাগ। বেশ এগোচ্ছিল গল্প। কয়েক মাস আগেই হঠাৎ এক লাফে ছ-বছর এগিয়ে গেল ধারাবাহিকটি। সোহাগের সন্তান হল এবং ঘটনাচক্রে সোহাগ আর চাঁদ বিচ্ছেদের পথ বেছে নিল। আর এর মাঝেই কেটে গেল ছ-বছর। বর্তমানে কোনও যোগাযোগ নেই সোহাগ এবং চাঁদের। হঠাৎ ভাগ্যের বশে মেয়ের চরকি আর বাবা চাঁদ একদিন মুখোমুখি হয়। কেউ কাউকে চেনে না। ছ-বছর পেরিয়েই এই নতুন টুইস্টে এনে আবার দর্শকমন কিন্তু জয় করে নিয়েছে নতুন করে ধারাবাহিকটি।
স্টার জলসার আরও এক অন্যতম জনপ্রিয় এবং চর্চিত ধারাবাহিক ‘অনুরাগের ছোঁয়া’তেও এমনটাই দেখা গেছে। দুই যমজ কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছিল দীপা। তারপরে ধারাবাহিকটি একলাফে এগিয়ে গেছে ৫ থেকে ছ-বছর। সূর্য, দীপা এখন আলাদা। কিন্তু সব ভুল বোঝাবুঝির অবসান কি হবে? সন্তানেরা কি মিলিয়ে দিতে পারবে তাদের বাবা-মাকে? এমন হাজার কৌতূহল তৈরি করেছে দর্শকমনে ‘অনুরাগের ছোঁয়া’। ঘটে গেছে নতুন নায়কের এন্ট্রিও। কিন্তু সূর্য কোথায়? কাহিনির এই ট্যুইস্টে বাজিমাত করেছে ধারাবাহিকটি উঠছে টিআরপি।
আরও পড়ুন-গঙ্গা দশমী
এই ধরনের লিপের তালিকাতে রয়েছে জি বাংলাও। সেখানকার জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘নিম ফুলের মধু’ গল্পে দত্তবাড়ির পুত্রবধূ পর্ণা ক্রমাগত শাশুড়ির কটাক্ষ, দুরভিসন্ধি সহ্য করে এবং প্রত্যেক মুহূর্তে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে এবং দ্বিগুণ বুদ্ধি দিয়ে সেই কঠিন পরিস্থিতি সামালও দিচ্ছে। সেই গল্পের ট্যুইস্ট আনতে পর্ণাও এক কন্যার মা হয়েছে সম্প্রতি। সৃজন-পর্ণার জীবন ঝপ করে এগিয়ে গেছে ছ-বছর। এখানেই শেষ হয়নি সম্প্রতি আরও বড়সড় চমক দিল এই ধারাবাহিক। এক দুর্ঘটনায় স্মৃতি হারিয়ে ফেলেছে পর্ণা। ১০ বছর পিছিয়ে গেছে সে। বিগত দশ বছরের সব স্মৃতি মুছে গেছে তার জীবন থেকে। সে এখন কলেজ পড়ুয়া। এবার কী হবে? এমন ট্যুইস্টে টিআরপি রেটিং-এ চড়চড়িয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসছে ‘নিম ফুলের মধু’।
অনেক দিন ধরে মেগা চলতে থাকলে একটা গতানুগতিকতা চলে আসে, নামতে থাকে টিআরপি আর তখনই হয় সিরিয়ালের টাইম স্লট বদলে যায় বা না হয় হঠাৎ করেই তা বন্ধ করে দেবার সিদ্ধান্ত নেয় চ্যানেল কর্তৃপক্ষ। তাই মেগা বাঁচাতে টাইম ল্যাপসই এই মুহূর্তে সহজতম পন্থা। পথ যেমনই হোক মূল হল দর্শক-আকর্ষণ। তাই অতীত, ভবিষ্যৎ কোথাও যেতেই অসুবিধে নেই মেগাগুলির। টাইম ল্যাপসে সহজেই গল্পের মোড় ঘুরছে। বাড়ছে দেখার আগ্রহ। বাড়ছে টিআরপি।