মঞ্চে বাবার পাশে বসে গেয়েছি
সৈকত মিত্র
আমি সংগীত জগতে এসেছি আমার বাবা শ্যামল মিত্রর হাত ধরে। তবে ছোটবেলায় কিন্তু বাবার কাছে গানবাজনা শেখার ব্যাপারে কোনও উৎসাহ পাইনি। তিনি ছিলেন প্রচণ্ড ইন্ট্রোভার্ট। নিজের কাজের মধ্যে ডুবে থাকতেন। ১৯৬৯ সাল। তখন আমার পাঁচ বছর বয়স। সেইসময় বাবার একটি বড় রকমের দুর্ঘটনা ঘটে। তারপর বেশ কিছুদিন বাবা বাড়ির বাইরে বেরতে পারতেন না। ঘরে বসেই সুর করতেন। সিনেমার গানে এবং আধুনিক গানে। সারাক্ষণই গানবাজনা নিয়ে আলোচনা হত। আমি শুনতাম। কখনও দূর থেকে, কখনও কাছে বসে। দেখতাম, গানের কথা লেখা হচ্ছে, তার উপর সুর বসানো হচ্ছে। এইভাবেই আমি গান তৈরি হওয়ার মুহূর্তগুলো দেখতে দেখতে বড় হয়েছি। বাবা আমাকে কখনও গাইতে বলতেন না। পড়াশোনার ব্যাপারে খুব চাপ দিতেন। ছোটবেলায় আমার স্বপ্ন ছিল ক্রিকেটার হওয়ার। আমরা যেখানে থাকতাম, তার আশেপাশে থাকতেন প্রথম সারির কয়েকজন ক্রিকেটার। পাশের পাড়ায় ইট সাজিয়ে ক্রিকেট খেলা হত। রবিবার রবিবার সেখানে তাঁরা খেলতেন। তাঁরা সন্ধের দিকে আমাদের বাড়িতেও আসতেন। এঁদের দেখেই ক্রিকেট খেলার প্রতি আমার আগ্রহ জন্মায়। খেলতেও শুরু করি। খেলেছি কলকাতার ক্লাব ক্রিকেটেও। ক্লাস টেনে পড়ার সময়। তবে খেলা ছেড়ে দিয়েছি একটা সময়ের পর।
ফেরা যাক গানের কথায়। বাবার গানে সুর করা দেখে ধীরে ধীরে গানের প্রতি আমার আগ্রহ জন্মায়। বাবার সঙ্গে বহুবার গিয়েছি গানের রেকর্ডিংয়েও। গান শুনতে শুনতে এইভাবেই আমার কান তৈরি হয়ে যায়। গুনগুন করে গাইতাম। গাইতাম বন্ধুদের মাঝে, পাড়ার ছোটখাটো অনুষ্ঠানে। এমন ঘটনাও ঘটেছে, বাড়িতে আপনমনে গান গাইছি, বাবা শুনে ভুল শুধরে দিয়েছেন। এইটুকুই। গান হয়ে উঠবে আমার জীবন এবং সেটা বাবার হাত ধরে, তখনও পর্যন্ত ভাবিনি।
আরও পড়ুন-উপনির্বাচনে তৃণমূলের ভরসা মুকুটমণি শুরু করে দিলেন ভোটপ্রচার
১৯৮২ সাল। টুয়েলভ পাশ করে কলেজে ভর্তি হয়েছি। একদিন বিকেলে মাঠে যাওয়ার সময় দেখলাম, বাবা দুটো গানের রিহার্সাল করছেন। সেদিন সন্ধেবেলায় রবীন্দ্রসদনে শচীন দেববর্মন স্মরণে অনুষ্ঠান। আমাকে দেখে বাবা ডাকলেন। বললেন, ‘শরীরটা ভাল লাগছে না। তুই একটু আমার সঙ্গে যাবি?’ সেই প্রথম আমি বাবার সঙ্গে কোনও অনুষ্ঠানে গেলাম। যেতে যেতে বাবা বললেন, ‘গান দুটো শুনেছিস?’ বললাম, ‘হ্যাঁ।’ বাবা বললেন, ‘অনুষ্ঠানে গেয়ে দিতে পারবি তো?’ বললাম, ‘পারব।’ সেইদিন প্রথমবার রবীন্দ্রসদনে গান গাইলাম। বাবার পাশে বসে। বাবা অনেকের সঙ্গে আমার আলাপ করিয়ে দিলেন। সুপ্রীতি ঘোষ, ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় এগিয়ে এসে বললেন, ‘শ্যামল, তোমার ছেলে যে গান করে জানতাম না তো।’ এইভাবেই আমার সংগীত জীবনে প্রবেশ ঘটে। বাবার হাত ধরেই। তারপর বাবার সঙ্গে বহু অনুষ্ঠানে গেছি। মঞ্চে বাবার পাশে বসে গান গেয়েছি। এমন ঘটনাও ঘটেছে, অসুস্থতার কারণে বাবা গ্রিন রুমে বসে রইলেন, অনুষ্ঠানে আমি একাই গান গেয়েছি। তখন মূলত বাবার গানই গাইতাম। বাবার কাছে তালিম নেওয়ার সুযোগ আমার হয়নি। তবে পরামর্শ দিতেন। বলতেন, ‘গানের কথার উপর জোর দিতে হবে। চিৎকার করে গাইবি না।’ বাবার সেই পরামর্শ ভুলিনি। তিনি আজও আমার সঙ্গে আছেন। প্রতি মুহূর্তে। এইভাবেই থেকে যাবেন।
উঠতে বসতে চলত ট্রেনিং
খেয়ালী দস্তিদার
আমার বাবা জোছন দস্তিদার। ছোটবেলা থেকেই বাবাকে নাটকের রিহার্সাল দেখতে দেখতে বড় হয়েছি। বাবার হাঁটাচলা, কথাবার্তা, পরিচালনা করার ধরন, সবকিছুই আমাকে দারুণভাবে আকৃষ্ট করত। মুগ্ধ হতাম। মনে হত, দারুণ তো। তারপর একটা সময় আমি অভিনয় জগতে এলাম। বাবার উৎসাহেই। শুধুমাত্র রিহার্সাল রুমে নয়, বাড়িতেও উঠতে বসতে চলত ট্রেনিং। আমার হাঁটাচলা, কথাবার্তা, উচ্চারণে কোনও অসঙ্গতি দেখলে বাবা সঙ্গে সঙ্গে শুধরে দিতেন।
বাবা লোকজনের সঙ্গে কথা বলতেন খুব সুন্দর। উচ্চারণ ছিল স্পষ্ট। হাসি ছিল দিল খোলা। সবাইকে সহজেই আপন করে নিতে পারতেন। তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়ে ছুটে এসেছিলেন সমাজের প্রায় সব স্তরের মানুষজন। এতটাই জনপ্রিয় ছিলেন। অভিনয়ের পাশাপাশি পরবর্তী সময়ে আমি নাটকে নির্দেশনা দিতে শুরু করি। আমার নির্দেশনায় দারুণভাবে বাবার প্রভাব রয়েছে। বাবা প্রচুর লোকজন নিয়ে কাজ করতে ভালবাসতেন। আমার চারটি নাটকেই প্রচুর লোকজন নিয়ে কাজ করেছি। আজ আমি যতটুকু হয়েছি, পুরোটাই বাবার জন্য। তিনি শুধুমাত্র আমার বাবা ছিলেন না, তিনি ছিলেন আমার গুরু। অসম্ভব স্নেহপ্রবণ। পাশাপাশি প্রচণ্ড বকুনিও দিতেন। রিহার্সালে এবং শ্যুটিংয়ে। কেঁদেও ফেলেছি কয়েকবার। ‘তেরো পার্বণ’-এর সময় অবশ্য বকুনি খাইনি। বকুনি খেয়েছি পরে। প্রয়োজনে ঠান্ডা মাথায় বোঝাতেন। বাবা আরেকটা কথা বলতেন, ‘আমার ভালটা যেমন তোমার, তেমন আমার খারাপটাও কিন্তু তোমার। মনে রেখো আমাকে যাঁরা অপছন্দ করেন, তাঁরা তোমাকেও কিন্তু অপছন্দ করবেন।’ প্রতি মুহূর্তে বাবার অভাব অনুভব করি। পাশাপাশি এটাও ভাবি— তিনি তো আমার সঙ্গেই আছেন, আমার মধ্যেই আছেন। আমার প্রতিটি কাজের মধ্যে। তাঁর আশীর্বাদ আছে বলেই তো মাথা উঁচু করে কাজ করতে পারছি।
আরও পড়ুন-ছেলের অন্নপ্রাশনে ৪০০ অতিথিকে চন্দনগাছ উপহার
দিয়েছেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ তালিম
বিক্রম ঘোষ
আমার বাবা আমার গুরু পণ্ডিত শঙ্কর ঘোষ। তবলা বাজানো বা মিউজিক কেরিয়ার গড়ার পিছনে তিনি আমার প্রধান ইনস্পিরেশন। গুরু হিসেবে ছিলেন অসামান্য এবং খুব কড়া প্রকৃতির। তবলা শিক্ষার, রিদম শিক্ষার যে জ্ঞান তিনি আমাকে দিয়ে গেছেন, সেটা অতি উচ্চমানের, দুর্দান্ত। সেটা ঘিরেই আমি আমার কেরিয়ার তৈরি করতে পেরেছি।
বাবা ছিলেন খুব আধুনিক মনের মানুষ। তখনকার দিনে তিনি ড্রাম অর্কেস্ট্রা করেছিলেন। কোলাবরেটিভ ওয়ার্ক করেছিলেন প্রচুর। এইভাবেই অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। আমার যে এক্সপেরিমেন্টাল ওয়ার্ক পরবর্তী সময়ে করেছি বা করে চলেছি, তার মধ্যেও রয়েছে বাবার প্রবল উপস্থিতি। তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে কখনও নিষেধ করেননি। বরং উৎসাহ দিয়েছেন। পরামর্শ দিয়েছেন নিজেকে আরও বৃহত্তর করে তুলতে। তবলা, তাল-লয়ের যে তালিম দিয়েছেন, সেটা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ তালিম বলে আমি মনে করি। যে কারণে আমি অনেককিছু করতে পেরেছি, যেগুলো ওই তালিম ছাড়া অসম্ভব ছিল। বাবা আমাকে শিখিয়েছেন তবলার অঙ্ক। যে কারণে আমি যে কোনও শিল্পীর সঙ্গে স্বচ্ছন্দে বাজাতে পেরেছি। তবলা নিয়ে নিজের মনের মতো করে খেলতে পেরেছি। তবলাবাদক হিসেবে এটা প্লাস পয়েন্ট হয়ে উঠেছে আমার জীবনে।
বাবা আমাকে সাউথ ইন্ডিয়ায় পণ্ডিত এস শেখরের কাছে পাঠিয়েছিলেন। আমার ১৩ বছর বয়সে। কর্নাটকী শৈলীর তালিমের জন্য। বাবার চিন্তার ব্যাপ্তি ছিল বিরাট। ব্যক্তিগতভাবে খুব ভাল মনের একজন মানুষ ছিলেন। ছোটবেলায় তবলার তালিম নেওয়ার সময় মাঝেমধ্যে খুব কঠিন লাগত। বাবা যত্ন করে দেখিয়ে দিতেন। মন দিয়ে শিখেছি সেই সময়। নাহলে আজ এই জায়গায় দাঁড়াতে পারতাম না। এতটা ব্যাপ্তির কাজ করতে পারতাম না। ডিসিপ্লিন শিখিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে আমি বাবার বন্ধু হয়ে উঠি। যেহেতু দু’জনের পেশা এক। বাবার সঙ্গে সন্ধে কাটাতে খুব মজা লাগত। একটা সময় পর্যন্ত আমরা একসঙ্গে একই বাড়িতে থাকতাম। বাবার সঙ্গে একসঙ্গে বহু কনসার্ট করেছি। বাজিয়েছি। সুন্দর সব স্মৃতি। একে অপরের কাছে নিজেদের মনের কথা জানাতাম। এই জন্মে এটা আমার বিশাল পাওনা। অমূল্য বলা যেতে পারে।
আরও পড়ুন-আসন্ন বর্ষায় দিঘার সমুদ্রে প্রমোদতরীতে সফর চালু করতে চলেছে উন্নয়ন পর্ষদ
বাবার পথ অনুসরণ করেছি
বিদীপ্তা চক্রবর্তী
অভিনেতা বিপ্লবকেতন চক্রবর্তী ছিলেন আমার বাবা। তাঁর জন্যই আজ আমি এই জায়গায় পৌঁছাতে পেরেছি, দাঁড়াতে পেরেছি। আমার জন্মের আগে থেকেই বাবা অভিনয় করতেন। আমি সেই ছোট বয়স থেকেই বাবার অভিনয় দেখছি। দেখতে দেখতে বড় হয়েছি। তখন টেলিভিশনের এত রমরমা ছিল না। বাবা অভিনয় করতেন থিয়েটারে। পরবর্তী সময়ে টেলিভিশন এবং সিনেমায় কাজ করেছেন। পাশাপাশি করেছেন সরকারি চাকরি। আমি বাবার পথ অনুসরণ করেছি। কাজ করেছি মঞ্চ, টেলিভিশন, সিনেমায়। অভিনয়ের পাশাপাশি বাবার কাছে ডিসিপ্লিন শিখেছি। তাঁর পরামর্শ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিলাম বলেই আজ হয়তো মান-সম্মান নিয়ে মাথা উঁচু করে কাজ করতে পারছি। এত বছর ধরে। এটা তো ঠিক, মহিলাদের নানারকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। আমাকে কখনও কোনও খারাপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়নি। এর পিছনেও ছিল বাবার শিক্ষা, অবদান।
থিয়েটারে আমার কাজ দেখে বাবা বিভিন্ন সময়ে মত প্রকাশ করেছেন। সিনেমার ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু বলতেন না। কাজ ভাল হলে চুপচাপ থাকতেন। তবে কোনও ত্রুটি দেখলে মুখ ফুটে বলতেন। বইপড়া, গান শোনার ব্যাপারে উৎসাহ দিতেন। সারা পৃথিবীর মিউজিকের সঙ্গে পরিচয় ঘটেছিল বাবার কারণেই। তাঁর জন্যেই পড়ার সুযোগ পেয়েছিলাম বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাহিত্য। সবমিলিয়ে আমার জীবনে বাবার অবদান অপরিসীম।
আরও পড়ুন-মির্জা গালিব স্ট্রিটের পর এবার বেলঘরিয়ায় ব্যবসায়ীর গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি
সুন্দর একটা বন্ধুত্বের চেহারা নিয়েছে
ঋদ্ধি সেন
আমি থিয়েটারের পরিবেশে বড় হয়েছি। এমন একটা পরিবেশ, যেখানে সর্বক্ষণ অভিনয়ের চর্চা হয়। আমাকে বাবা যেমন উৎসাহ দিয়েছেন, তেমন উৎসাহ দিয়েছেন আমার মা-ঠাকুমাও। স্বপ্ন সন্ধানী নাট্যগোষ্ঠীর অন্যান্য সভ্যসভ্যারাও উৎসাহিত করেছেন। ছোটবেলায় অভিনয়ের ক্লাসটা আমার খুব ভাল লাগত। সচেতনভাবেই আমি অভিনয় জগতে এসেছি তা নয়, তবে একটা বয়সের পর মনে হয়েছে এটাই হবে আমার পেশা। বেঁচে থাকার অবলম্বন। আমার অভিনয় শিক্ষা আমার বাবার কাছেই। ছোট থেকেই বাবার অভিনয় দেখছি। বাবাকে অভিনয় করাতেও দেখছি। দেখতে দেখতে মনে হয়েছে— কলকাতা শহরে এই মুহূর্তে যাঁরা যাঁরা অভিনয় শেখান, তাঁদের মধ্যে আমার বাবা কৌশিক সেনের মতো অভিনয় শেখাতে খুব কম জনই পারেন। কথাটা পনেরো বছর আগেও মনে হত, এখনও মনে হয়। এককথায়, তিনি এই মুহূর্তে আমাদের শহরের সেরা অভিনয়-শিক্ষক। অভিনেতা হতে গেলে মননটা গড়ে তুলতে হয়। কীভাবে মনন গড়ে ওঠে, সেটা কিছু মানুষকে দেখলে বোঝা যায়। আমার বাবা তেমনই একজন মানুষ। একজন অভিনেতা হিসেবে এবং মানুষ হিসেবে যেভাবে তিনি জীবনটা যাপন করেন, সেটা দেখার এবং শেখার মতো। আমাকে সাংঘাতিকভাবে অনুপ্রাণিত করেছেন। বাবাকে দেখেই বুঝেছি— একজন অভিনেতা হতে গেলে শুধুমাত্র অভিনয় নয়, তাঁকে সামাজিক মানুষ হতে হবে, সামাজের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে। তথাকথিত সেলিব্রেটি বা স্টার— এই ধরনের কথাগুলো বাবা কোনও দিনই বিশ্বাস করেননি। এই বিষয়গুলো আমাকে মুগ্ধ করেছে। প্রত্যেকটা মানুষেরই কোনও না কোনও খামতিই আছে। বাবা নিজের খামতিগুলো কোনওভাবেই আড়াল রাখার চেষ্টা করেন না। খুব সহজেই স্বীকার করে নেন। এটাও আমি বাবার কাছে শিখেছি। এইক্ষেত্রে অভিনেতা কৌশিক সেনের থেকেও মানুষ কৌশিক সেনকে আমি অনেক বেশি এগিয়ে রাখব। বাবা খুব কড়া প্রকৃতির মানুষ। নাটকের মহলাকক্ষে ব্যক্তিগত সম্পর্ককে কোনওদিন প্রাধান্য দেননি। আমাকে আর পাঁচজন অভিনেতা বা ছাত্রের মতোই দেখেন। বাড়ির কথা অবশ্য আলাদা। আমরা মঞ্চে এবং সিনেমায় একসঙ্গে কাজ করেছি। কখনও কখনও আমাদের মধ্যে হেলদি মতান্তর হয়েছে। নতুন নাটকের স্ক্রিপ্ট নিয়ে আলোচনার সময় বা নতুন প্রোডাকশন নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে। বাবা অনেক সময় আমার পরামর্শ গ্রহণ করেছেন। এইভাবেই আমাদের ক্রিয়েটিভ প্রসেস আরও গাঢ় হয়েছে। আর একটা ইন্টারেস্টিং অভিজ্ঞতার কথা বলি, আমার পরিচালনায় একটি ছোট ছবিতে অভিনয় করেছেন বাবা। আমি ছোটবেলায় বাবার কাছে অভিনয় শিখেছি। এখনও শিখছি। ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্কটা এখন সুন্দর একটা বন্ধুত্বের চেহারা নিয়েছে। এর ফলে কাজের জায়গায় আরও আনন্দময় হয়ে ওঠে।
আরও পড়ুন-কুয়েতে দুর্ঘটনায় মৃত বাঙালি শ্রমিকের দেহ ফিরছে দাঁতনে
ক্রীড়াক্ষেত্রে নিজে সাফল্য পেয়েছেন। পরবর্তী সময়ে বাবা হিসেবে এগিয়ে দিয়েছেন সন্তানকে। সাফল্য পেয়েছেন সন্তানও। ভারতীয় ক্রীড়াজগতে এমন উদাহরণ ভূরিভূরি। লিখলেন অনির্বাণ দাস
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ও চণ্ডী গঙ্গোপাধ্যায়
ভারতীয় ক্রিকেটের ‘দাদা’ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের জীবনে বাবা চণ্ডী গঙ্গোপাধ্যায় অবদান ভোলার নয়। চণ্ডীবাবু নিজেও ময়দানের ক্লাব ক্রিকেট চুটিয়ে খেলেছেন। পরে সিএবি-র অন্যতম শীর্ষকর্তা হিসাবে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। দাপুটে এই ক্রিকেট কর্তা দুই ছেলে স্নেহাশিস ও সৌরভের মধ্য দিয়ে নিজের অপূর্ণ স্বপ্ন পূরণ করতে চেয়েছিলেন। ছেলেদের জন্য বাড়িতেই ছোটখাটো একটা জিম তৈরি করেছিলেন তিনি। তৈরি করেছিলেন প্র্যাকটিস পিচও। যাতে ছেলেরা ছোট থেকেই ফিটনেস সচেতন হয়ে ওঠে এবং বিভিন্ন ধরনের পিচের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে। দুই ছেলেকে ক্রিকেটার হিসাবে গড়ে তোলার জন্য নিজের সবটুকু দিয়ে ঝাঁপিয়েছিলেন চণ্ডীবাবু। বাবার প্রেরণায় সৌরভ নিজেকে কোন উচ্চতায় তুলে নিয়ে গিয়েছেন, তা আজ আর কারও অজানা নয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাড়ে আঠারো হাজারেরও বেশি রান। ৩৮টি আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি। ভারতীয় ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা অধিনায়কদের মধ্যে একজন। সৌরভের দাদা স্নেহাশিসও অত্যন্ত প্রতিভাবান বাঁ-হাতি ব্যাটার ছিলেন। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে প্রচুর রান করেছেন।
আরও পড়ুন-গঙ্গা দশমী
সৈয়দ আব্দুল রহিম এবং এস এস হাকিম
ভারতীয় ফুটবলের প্রবাদপ্রতিম কোচ সৈয়দ আব্দুল রহিম। যাঁকে সবাই একডাকে চেনে ‘রহিম সাহেব’ নামে। তাঁর কোচিংয়ে ১৯৫১ সালে দিল্লি এশিয়ান গেমস এবং ১৯৬২ জাকার্তা এশিয়ান গেমসে সোনা জিতেছিল ভারত। এছাড়া ১৯৫৬ সালে মেলবোর্ন অলিম্পিকে চতুর্থ হয়েছিল ভারতীয় দল। রহিম সাহেবের কোচিংয়ে দাপিয়ে খেলেছেন পি কে বন্দ্যোপাধ্যায়, চুনী গোস্বামী, বলরামের মতো ভারতীয় ফুটবলের কিংবদন্তিরা। ভারতীয় ফুটবলকে এক আলাদা উচ্চতায় তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন রহিম সাহেব। তাঁর সুযোগ্য পুত্র সৈয়দ শহিদ হাকিম। অত্যন্ত কড়া ব্যক্তিত্বসম্পন্ন রহিম সাহেব কোনও দিন ছেলের জন্য কোথাও সুপারিশ করেননি। যদিও নিজের যোগ্যতাতেই জাতীয় দলে জায়গা করে নিয়েছিলেন হাকিম। ১৯৬০ সালের রোম অলিম্পিকে ভারতীয় দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। অবসরের পর সুনামের সঙ্গে কোচিংও করিয়েছেন। ১৯৮২ সালে দিল্লি এশিয়ান গেমসে ভারতীয় দলের সহকারী কোচ ছিলেন হাকিম।
ভেজ পেজ ও লিয়েন্ডার পেজ
ভারতীয় তথা বিশ্ব টেনিসের অন্যতম কিংবদন্তি কলকাতার ছেলে লিয়েন্ডার পেজের সফল ক্রীড়াবিদ হয়ে ওঠার পিছনে বড় অবদান রয়েছে বাবা ভেস পেজের। বাবা এবং ছেলে দু’জনেই অলিম্পিকে পদক জিতেছেন। ভারতীয় হকির সোনালি সময়ে জাতীয় দলে দাপিয়ে খেলেছেন ভেস। ১৯৭২ সালে মিউনিখ অলিম্পিকে ব্রোঞ্জজয়ী ভারতীয় দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। এখানেই শেষ নয়, ১৯৭১ সালে বার্সেলোনায় আয়োজিত হকি বিশ্বকাপেও ব্রোঞ্জজয়ী ভারতীয় দলের সদস্য ছিলেন তিনি। লিয়েন্ডার আবার ১৯৯৬ সালে আটলান্টা অলিম্পিকে পুরুষদের সিঙ্গলসে ব্রোঞ্জ পদক জিতেছিলেন। ডাবলস এবং মিক্সড ডাবলস মিলিয়ে তাঁর ঝুলিতে রয়েছে ১৮টির বেশি গ্র্যান্ড স্ল্যাম খেতাব। তবে ছোটবেলায় লিয়েন্ডার স্বপ্ন দেখতেন বাবার মতোই হকি খেলোয়াড় হওয়ার। ভেস যখন মোহনবাগানের হয়ে কলকাতা হকি লিগে খেলতেন, তখন সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে ছোট্ট লিয়েন্ডারও বাবার সঙ্গে হাজির থাকতেন মাঠে। পরে অবশ্য ছেলেকে নিজের প্রিয় বন্ধু তথা ভারতীয় টেনিসের নামী কোচ আখতার আলির কাছে টেনিসের পাঠ নিতেন পাঠিয়ে দেন ভেস। বাকিটা ইতিহাস। লিয়েন্ডারের মা জেনিফার পেসও নামী বাস্কেটবল খেলোয়াড় ছিলেন। ১৯৮০ সালে এশিয়ান বাস্কেটবল চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের অধিনায়ক ছিলেন জেনিফার।
যোগরাজ সিং ও যুবরাজ সিং
নিজের অধরা স্বপ্ন ছেলে যুবরাজ সিংয়ের মধ্যে দিয়ে সফল করতে চেয়েছিলেন যোগরাজ সিং। একটা সময় ভারতীয় ক্রিকেটে কপিল দেবের মতোই আলোচিত নাম ছিলেন যোগরাজ। কিন্তু ভারতের হয়ে মাত্র একটি টেস্ট ও গোটা ছয়েক ওয়ানডে খেলার পরেই হারিয়ে যান। যদিও ছেলেকে বিশ্বমানের ক্রিকেটার করে তোলার চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন। তাই চণ্ডীগড়ের সেক্টর ফাইভের বাড়িতে গড়ে তুলেছিলেন একটা মিনি অ্যাকাডেমি। নিজে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বল করে যেতেন ছেলেকে। কিশোর যুবরাজ ক্লান্ত হয়ে পড়লেও ছুটি পেতেন না। উল্টে ভুল করলে, কপালে জুটত চড়-চাপড়! এভাবেই দিনের পর দিন কঠোর পরিশ্রমে ছেলেকে গড়ে তুলেছিলেন যোগরাজ। ছেলেকে কড়া অনুশাসনে বেঁধে রাখলেও, যোগরাজের মধ্যে লুকিয়ে ছিল এক স্নেহশীল বাবার মন। যুবরাজ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের সেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার পাওয়ার পর ছেলেকে হন্ডা সিটি গাড়ি উপহার দিয়েছিলেন যোগরাজ। এরপর যুবরাজ জাতীয় দলের হয়ে চুটিয়ে খেলেছেন। দুটো বিশ্বকাপও জিতেছেন। কিন্তু তাঁর যাবতীয় সাফল্যের পিছনে রয়েছে বাবার অক্নান্ত পরিশ্রম।
আরও পড়ুন-জিতেই কথা রাখতে কাজে নেমে পড়লেন সায়নী
মিলখা সিং ও জীব মিলখা সিং
‘আপনি জীবনে যে কোনও কিছুই অর্জন করতে পারেন। তবে এটা নির্ভর করছে আপনি কতটা মরিয়া তার উপর’— এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন মিলখা সিং। যিনি ভারতীয় ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডের চিরকালীন নায়ক। চূড়ান্ত দারিদ্র থেকে উঠে মিলখার জীবন যেন এক রূপকথা। রোম অলিম্পিকে সেকেন্ডের ভগ্নাংশের কম সময়ের জন্য ব্রোঞ্জ পদক হাতছাড়া হয়েছিল মিলখার। কিন্তু ক্ষিপ্র গতির জন্য গোটা বিশ্ব তাঁর নাম দিয়েছিল ‘উড়ন্ত শিখ’! এশীয় অ্যাথলেটিক্সে মিলখার আধিপত্য কেউই ভাঙতে পারেননি। ১৯৫৮ টোকিও এবং ১৯৬২ জাকার্তা এশিয়াডে সব মিলিয়ে জিতেছিলেন চার-চারটি সোনা। মিলখার ছেলে জীব মিলখা সিং আবার প্রথম ভারতীয় গলফ খেলোয়াড় হিসাবে ইউরোপিয়ান ট্যুর টুর্নামেন্টে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন। তিনি নেই-নেই করে কুড়িটি ট্যুর খেতাব জিতেছেন।
মেজর ধ্যানচাঁদ ও অশোক কুমার
ভারতীয় ও তথা বিশ্ব হকির কিংবদন্তি মেজর ধ্যানচাঁদ। যাঁকে গোটা বিশ্ব একডাকে চিনত ‘হকির জাদুকর’ নামে। ১৯২৮, ১৯৩২ ও ১৯৩৪ সালে অলিম্পিকে সোনা জয়ের হ্যাটট্রিক করেছিল ভারতীয় হকি দল। আর এই সাফল্যের সিংহভাগ কৃতিত্ব ছিল ধ্যানচাঁদের। ১৯২৬ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক হকি চুটিয়ে খেলেছেন তিনি। ১৮৫ ম্যাচে গোল করেছেন চারশোও বেশি! শোনা যায়, ধ্যানচাঁদের হকি স্টিকে আঠার মতোই লেগে থাকত বল। অবলীলায় ড্রিবল করে টপকে যেতেন বিপক্ষের একের পর এক খেলোয়াড়কে। মাত্র ১৬ বছর বয়সে ১৯২২ সালে ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান আর্মিতে যোগ দিয়েছিলেন ধ্যানচাঁদ। সময়ের অভাবে রাতে প্র্যাকটিস করতেন বলে সতীর্থরা তাঁর নাম দিয়েছিল ‘চাঁদ’। তাঁর জন্মদিন ২৯ অগাস্ট। দেশজুড়ে এই দিনটি পালিত হয় জাতীয় ক্রীড়া দিবস নামে। তাঁর সুযোগ্য পুত্র অশোক কুমারও অলিম্পিয়ান। ১৯৭২ মিউনিখ অলিম্পিকে ব্রোঞ্জজয়ী ভারতীয় হকি দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। এছাড়া ১৯৭৫ কুয়ালালামপুর বিশ্বকাপে ভারতকে সোনা জেতাতে বড় ভূমিকা পালন করেছিলেন অশোক কুমার। ১৯৭৩ আমস্টারডাম বিশ্বকাপে ও ১৯৭১ বার্সোলান বিশ্বকাপে অশোক কুমার ভারতের হয়ে যথাক্রমে রুপো ও ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন।
আরও পড়ুন-আজ শুরু ইউরো কাপ, ঘরের মাঠে নতুন পরীক্ষা জার্মানির
পুলেল্লা গোপীচাঁদ ও গায়ত্রী গোপীচাঁদ
পুলেল্লা গোপীচাঁদ ২০০১ সালে প্রকাশ পাড়ুকোনের পর দ্বিতীয় ভারতীয় শাটলার হিসাবে অল ইংল্যান্ড ওপেন খেতাব জিতেছিলেন। এছাড়া কমনওয়েলথ গেমসে রুপো এবং ব্রোঞ্জ পদক জিতেছেন গোপী। অবসরের পর, কোচিংয়ে পা রেখেও সাফল্য পেয়েছেন। সাইনা নেহওয়াল, সিন্ধু, এইচ এস প্রণয়, কিদাম্বি শ্রীকান্তরা তাঁর অ্যাকাডেমির ফসল। গোপীর মেয়ে গায়ত্রী ডাবলস বিশেষজ্ঞ। ইতিমধ্যেই গোটা দুয়েক আন্তর্জাতিক খেতাব রয়েছে তাঁর ঝুলিতে।
রঘু নন্দী ও রাজদীপ নন্দী
রেফারির খেলা শেষের বাঁশি বাজতেই পরাজিত কোচকে জড়িয়ে ধরে হাউ হাউ করে কেঁদে ফেললেন জয়ী কোচ! কয়েক বছর আগে এমনই এক বিরল দৃশ্যের সাক্ষী থেকেছিল ময়দান। সেদিন বারাসত স্টেডিয়ামে ছেলে রাজদীপ নন্দীর দল হারিয়ে দিয়েছিল বাবা রঘু নন্দীর দলকে। খেলোয়াড় জীবনে রঘু ছিলেন ডিফেন্ডার। ময়দানে সুনাম ছিল কড়া ট্যাকলের জন্য। অবসরের পর পুরোপুরি কোচিংয়ে ঢুকে পড়েন তিনি। আর ছেলে রাজদীপ বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে কলকাতা ময়দানে চুটিয়ে কোচিং করাচ্ছেন। দু’জনে যেমন একে অপরের প্রতিপক্ষ থেকেছেন। আবার একই দলে রাজদীপ কোচ এবং রঘু টেকনিক্যাল ডিরেক্টর, এমন উদাহরণও রয়েছে। রাজদীপ নিজেও স্বীকার করেন, বাবাই তাঁর আইডল। বাবাকে দেখেই তিনি কোচিংয়ে এসেছেন।
আরও পড়ুন-বিজিবিএসের পরিবর্তে এবার শপিং ফেস্টিভ্যাল
নৌশাদ খান ও সরফরাজ খান
ভারতীয় ক্রিকেটে পিতা-পুত্র জুটির সাম্প্রতিকতম উদাহরণ নৌশাদ ও সরফরাজ খান। মুম্বইয়ের ঘরোয়া ক্রিকেটে পরিচিত নাম নৌশাদ। একটা সময় কাঙ্গা লিগের মতো নামী টুর্নামেন্টে চুটিয়ে খেলেছেন। অবসরের পর পুরোপুরি ঝুঁকেছেন কোচিংয়ে। আর নিজের হাতে গড়ে তুলেছেন পুত্র সরফরাজকে। গত কয়েক বছর ধরেই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ঝুড়ি ঝুড়ি রান করেছেন সরফরাজ। কিন্তু জাতীয় দলে কিছুতেই ডাক পাচ্ছিলেন না। অবশেষে এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট অভিষেক ঘটে তরুণ ব্যাটারের। আর অভিষেক টেস্টেই ঝোড়ো হাফ সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে সবার নজর কাড়েন সরফরাজ। পুত্রের অভিষেকের দিনে মাঠে হাজির ছিলেন নৌশাদও। সেদিন সবাই এক গর্বিত বাবার চোখে জল দেখেছিল। যা আনন্দের। ছেলে সম্পর্কে নৌশাদের বক্তব্য, ‘আমি যেটা পারিনি, সেটা সরফরাজ করুক চেয়েছিলাম। ছোটবেলা থেকেই ওকে কঠোরভাবে মানুষ করেছি। রোজ ভোরে ওকে প্র্যাকটিসে নিয়ে যেতাম। তারপর বাড়ি ফিরে বিকেলে ফের প্র্যাকটিস। এটাই ছিল সরফরাজের রুটিন। আর এই কঠোর পরিশ্রমের পুরস্কার ভারতীয় দলের টেস্ট জার্সি।’
রমানাথন কৃষ্ণান ও রমেশ কৃষ্ণান
ভারতীয় টেনিসের ইতিহাসে সবথেকে সফল পিতা-পুত্র জুটি রমানাথন ও রমেশ কৃষ্ণান। বাবা রমানাথন ছিলেন ধ্রপদী ঘরানার খেলোয়াড়। বিয়র্ন বর্গের জোড়া হাতের ব্যাকহ্যান্ড শট যেমন বিখ্যাত, তেমনই বিখ্যাত ছিল রমানাথনের এক হাতের ব্যাকহ্যান্ড। তিনি একমাত্র ভারতীয় টেনিস তারকা, যিনি দু’বার কোনও গ্র্যান্ড স্ল্যামের সিঙ্গলসের সেমিফাইনালে ওঠার কৃতিত্ব অর্জন করছেন। ১৯৬০ ও ১৯৬১ সালে পরপর দু’টি উইম্বলডনের শেষ চারে উঠেছিলেন রমানাথন। তাঁর হাতেই গড়ে ওঠা রমেশও আটের দশকে ভারতীয় টেনিসে রাজত্ব করেছেন। ১৯৮৬ সালে উইম্বলডনে ছেলেদের সিঙ্গলসের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিলেন। ইউএস ওপেনেও দু’বার (১৯৮১ ও ১৯৮৭) কোয়ার্টার ফাইনাল অবধি পৌঁছেছিলেন। এ-ছাড়া রমানাথন এবং রমেশ নিজের নিজের সময়ে ডেভিস কাপে ভারতকে বহু স্মরণীয় জয় উপহার দিয়েছেন।
আরও পড়ুন-মোদি-শাহর মদতে শেয়ার কেলেঙ্কারি!, সেবির তদন্ত দাবি তৃণমূলের
পিভি সিন্ধু ও পিভি রামান্না
শুধু পিতা-পুত্র জুটিই নয়, ভারতীয় ব্যাডমিন্টনে অন্তত দু’জন সফল মহিলা খেলোয়াড় রয়েছেন, যাঁদের উত্থানের পিছনে বাবার বড় ভূমিকা হয়েছে। পিভি সিন্ধু। একমাত্র ভারতীয় ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়, যিনি পরপর দু’টি অলিম্পিক থেকে পদক (রুপো ও ব্রোঞ্জ) জিতেছেন। বিশ্ব ব্যাডমিন্টনে ভারতের মুখ হিসাবে চিহ্নিত সিন্ধুর বাবা পিভি রামান্না ছিলেন ভলিবল খেলোয়াড়। ১৯৮৬ এশিয়াডে ব্রোঞ্জ পদকজয়ী ভারতীয় ভলিবল দলের অন্যতম সদস্য রামান্না শুরু থেকেই মেয়েকে ক্রীড়াবিদ হিসাবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। সিন্ধু নিজেও বিভিন্ন সময়ে তাঁর উত্থানের পিছনে বাবার অবদানের কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন।