প্রতিবেদন: অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি। কিশোরের পেটে ব্লেডের টুকরো, পেরেক, ব্যাটারি, আরও কত কী। সবমিলিয়ে ৫৬ টি ধাতব টুকরো। দুর্ভাগ্য, অপারেশন করেও শেষপর্যন্ত বাঁচানো সম্ভব হয়নি তাকে। ঘটনাটি ঘটেছে যোগীরাজ্যের হাথরসে। প্রশ্ন উঠেছে, এত ধাতব টুকরো কিশোরটির পেটে এল কীভাবে? তার সংখ্যাই বা এত দ্রুত বেড়ে গেল কীভাবে? তবে রিপোর্ট বলছে, অন্ত্রে সংক্রমণই কিশোরের মৃত্যুর কারণ। এখনও অবশ্য সঠিক ব্যখ্যার খোঁজে চিকিৎসকুরা এবং অভিভাবকরা।
ঠিক কী হয়েছিল ঘটনাটা? নবম শ্রেণির এক পড়ুয়া দীর্ঘদিন ধরেই পেটে ব্যথা ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিল। হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে বছর পনেরোর আদিত্যর আল্ট্রাসাউন্ড করতেই চিকিৎসকদের চোখ কপালে ওঠে ! কারণ, চিকিৎসকরা দেখেন, ওই কিশোরের পেটে ঘড়ির বেল্টের টুকরো, ব্লেডের টুকরো, পেরেক মিলিয়ে প্রায় ৫৬ টি ধাতব টুকরো রয়েছে। কিন্তু, দুর্ভাগ্যবশত অস্ত্রোপচারের পরের দিন আদিত্যর মৃত্যু হয়। ৪টি হাসপাতালে ঘুরেও বাঁচানো যায়নি তাকে।
আরও পড়ুন-রহস্যে ঘেরা ডুয়ার্সে রোমাঞ্চকর সময়যাত্রা
জানা গিয়েছে, হাথরস শহরের রত্নগর্ভা কলোনির বাসিন্দ সংকেত শর্মার ছেলের সম্প্রতি পেটে ব্যথা এবং শ্বাস নিতে অসুবিধা হয়েছিল। পরিবারের সদস্যরা জানান, চিকিৎসার জন্য প্রথমে তাকে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু এখানে কিশোরের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে জয়পুরের এসডিএমএইচ হাসপাতালে নিয়ে যান অভিভাবকরা। যেখানে কয়েকদিন চিকিৎসার পর তাকে বাড়িতে পাঠানো হয়।
কিন্তু, ২৫ অক্টোবর ওই কিশোরের ফের সমস্যা শুরু হয়। তাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। নাকের সিটি স্ক্যান করে একটি পিণ্ড খুঁজে পান চিকিৎসকরা৷ ওই পিণ্ডটি অপারেশন করে বের করা হয়। কিন্তু, এর পরেও পেটের সমস্যা একই রয়ে গেল। কিন্তু বিস্ময়ের এখানেই শেষ নয়, কিশোরের পরিবারের সদস্যরা জানান, ২৬ অক্টোবর একটি বেসরকারি আল্ট্রাসাউন্ড সেন্টারে আদিত্যর পেটের আল্ট্রাসাউন্ড করা হয় এবং তাতে ১৯টি জিনিস দেখতে পাওয়া যায়। এর পরই এখানকার চিকিৎসক আদিত্যকে রেফার করেন নয়ডার একটি বেসরকারি হাসপাতালে। এরপর তাকে সেখানে নিয়েও যাওয়া হয়।
আরও পড়ুন-চিকনগুনিয়ায় আক্রান্ত ২৪ মোকাবিলায় প্রশাসন
এখানে আল্ট্রাসাউন্ড রিপোর্টে তার পেটে প্রায় ৫৬টি জিনিস দেখা যায় ৷ এরপর আদিত্যকে তার পরিবার দিল্লির সফদরগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে যায়, যেখানে আল্ট্রাসাউন্ড করার পরেও একই রিপোর্ট মেলে। অগত্যা ছাত্রটির জীবন বাঁচাতে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা। ২৭ অক্টোবর তার অস্ত্রোপচার হয়। সমস্ত জিনিস সরিয়ে তার পেট পুরোপুরি পরিষ্কার করে দেওয়া হয়। কিন্তু, দুর্ভাগ্যবশত অস্ত্রোপচারের পরের দিন, চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৮ অক্টোবর রাতে আদিত্যর মৃত্যু হয়। আদিত্যর পরিবারের দাবি, ১৯ অক্টোবর আলিগড়ে করা আল্ট্রাসাউন্ডে তার পেটে ১৯টি জিনিস পাওয়া যায়। এরপর দিল্লির একটি বেসরকারি হাসপাতালে যখন তার পেটের আল্ট্রাসাউন্ড করা হয়, তখন ৪২টি জিনিস দেখা যায় এবং এর ঠিক কয়েক ঘণ্টা পর যখন আবার দিল্লির সফদরগঞ্জে আল্ট্রাসাউন্ড করা হয়, তখন আদিত্যর পেটে ৫৬টি জিনিস দেখা যায় ৷ এবার প্রশ্ন হল, মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আদিত্যর পেটে থাকা জিনিসের সংখ্যা বাড়ল কী করে? এই নিয়ে আদিত্যর পরিবারের সদস্যদের মতো কিছুটা হলেও ধোঁয়াশায় রয়েছেন চিকিৎসকরাও ৷