প্রতিবেদন : চাকরি স্থায়ীকরণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে শ্লীলতাহানি করেছেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস (CV Ananda Bose)। বেনজির ও চমকে যাওয়ার মতো এই গুরুতর অভিযোগ করেছেন রাজভবনেরই এক মহিলা কর্মী। একবার নয়, একাধিকবার তাঁর সঙ্গে এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগে জানিয়েছেন ওই মহিলা। ২০১৯ সাল থেকে রাজভবনেই অস্থায়ী কর্মী হিসেবে রয়েছেন তিনি। চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল প্রথমবার তাঁকে শ্লীলতাহানি করেন রাজ্যপাল বোস। এরপর বৃহস্পতিবার বিকেলে ফের তাঁর সঙ্গে একই ঘটনা ঘটে। প্রথমবার অভিযোগ না করলেও এবার আর চুপ থাকেননি ওই নির্যাতিতা। এদিন বিকেলে প্রথমে সুপারভাইজারকে সঙ্গে নিয়ে রাজ্যপালের কাছে যান, ডাক পড়ায়। তখন অত্যন্ত কুৎসিত ব্যবহার করে সুপারভাইজারকে বের করে দেন বোস। এরপরই ঘটে শ্লীলতাহানির ঘটনা। প্রতিবাদে আজ, শুক্রবার ধিক্কার মিছিল করবে মহিলা তৃণমূল কংগ্রেস। মৌলালি থেকে ডোরিনা ক্রসিং পর্যন্ত মিছিলের নেতৃত্ব দেবেন মহিলা তৃণমূলের সভানেত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।
বৃহস্পতিবার রাজভবনে রাত্রিবাস করেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সময় রাজভবনেরই এক অস্থায়ী মহিলা কর্মী রাজ্যপালের (CV Ananda Bose) বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির মতো গুরুতর অভিযোগ আনায় হইচই পড়ে গিয়েছে রাজ্য জুড়ে। এই ঘটনায় প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, বাংলাকে কালিমালিপ্ত করলেন রাজ্যপাল। সন্দেশখালি নিয়ে বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীও বহু কথা বলেছেন। এবার তিনি ও বিজেপি নেতারা কী বলবেন সেটা জানতে আগ্রহী আমরা। মুখে মহিলাদের সম্মান ও মহিলা সশক্তিকরণের কথা বললেও আসলে বিজেপি ও তার অনুগত অনুচরেরা যে সে বিষয়ে বিন্দুমাত্র গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেন না রাজ্যপালের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগই তা ফের প্রমাণ করল। মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, বাংলার এই পবিত্র মাটিতে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে এহেন গুরুতর অভিযোগ এনেছেন এক মহিলা। চাকরি স্থায়ীকরণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এই জঘন্য কাণ্ড ঘটিয়েছেন রাজ্যপাল। নিন্দার ভাষা নেই আমাদের।
আরও পড়ুন- ‘এই সিপিএম দল যে কী সাংঘাতিক ছিল কল্পনা করতে পারবেন না’ বিস্ফোরক মুখ্যমন্ত্রী
ঘটনার অভিঘাত ও অভিযোগ এতটাই গুরুতর এবং যাঁর বিরুদ্ধে এই শ্লীলতাহানির অভিযোগ আনা হয়েছে তিনি বাংলার সাংবিধানিক প্রধান। এহেন এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ পেয়ে প্রাথমিকভাবে পুলিশও হকচকিয়ে যায়। পরে ঘটনার গুরুত্ব বুঝে অভিযোগ অভিযোগকারিণীকে হেয়ার স্ট্রিট থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তিনি তাঁর অভিযোগ লিপিবদ্ধ করেন। হেয়ার স্ট্রিট থানায় লিখিত অভিযোগে ওই মহিলা জানিয়েছেন, এর আগেও রাজভবনে অন্য মহিলার সঙ্গে একই ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন। এরপর অন্য কোনও মহিলার সঙ্গে ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা না ঘটে তাই তিনি প্রতিবাদে সরব হয়েছেন। অভিযোগকারিণী রাজভবনের কোয়ার্টারেই থাকেন। গোটা বিষয়টি রাষ্ট্রপতিকে জানানো যায় কি না তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে পুলিশ।
জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার বিকেলে আচমকাই রাজভবনের ভিতর থেকে কাঁদতে কাঁদতে রাজভবনেরই পুলিশ আউটপোস্টে আসেন অভিযোগকারিণী। কর্তব্যরত পুলিশ কর্মীদের তিনি বলেন, রাজ্যপাল তাঁকে শ্লীলতাহানি করেছেন। একবার নয় একাধিকবার। ঘটনার গুরুত্ব বুঝে এক মহিলা অফিসার সেখানে ছুটে আসেন। সবটা শোনার পর তাঁকে হেয়ার স্ট্রিট থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। থানা থেকে গোটা বিষয়টি জানানো হয় লালবাজারের শীর্ষ কর্তাদের। কিন্তু ভারতের সংবিধান অনুযায়ী (আর্টিকেল ৩৬১) রাজ্যপালের বিরুদ্ধে কোনওরকম ফৌজদারি মামলা দায়ের করা বা তদন্ত করা যায় না। রাজভবনে মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যর প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা বৃহস্পতিবার রাতে জারি করেন বোস। যা নিয়ে বিস্ময় তৈরি হয়েছে। তাঁকে গ্রেফতার করারও কোনও আইনি সংস্থান নেই। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রাজ্যপাল।