প্রতিবেদন : শীত মানেই চারপাশ শুধু কমলায় কমলা। রসাল আবেশে মাখামাখি। মুখে দিলে চুপচুপে মিষ্টি বা মিঠেকড়া অনুভূতির একেবারে মর্মে প্রবেশ। বাঙালি, অবাঙালি, দেশি, বিদেশি সকলের আত্মার আত্মীয় কমলাফল। শীত পড়তে না পড়তে তার দেখা মেলে। রসবতীর কোয়াগুলো জড়াজড়ি করে কাটিয়ে দেয় গোটা শীত। এক একটি কোয়া জীবনদায়ী। সুস্থ থাকার সব রসদ লুকিয়ে আছে তার মধ্যে। এই ফলেই প্রকৃতি উজাড় করে দিয়েছে তার সেরাটুকু। কমলালেবুর বৈজ্ঞানিক নাম সাইট্রাস রেটিকুলাটা। আদি বাড়ি সেই সূদুর চিন। আজ থেকে প্রায় চার হাজার বছরেরও আগে চিনেই প্রথম কমলালেবুর চাষ শুরু হয়েছিল। এখন গোটা পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র কমলালেবুর চাষ হয়। বিশ্বে কমলালেবু উৎপাদনে ভারতের স্থান তৃতীয়। পৃথিবী বিখ্যাত যত কমলালেবু আছে তার মধ্যে নাগপুরের কমলালেবু অন্যতম। এখানকার কমলালেবুর অপূর্ব স্বাদ আর গুণমানের জন্য নাগপুরকে কমলালেবুর শহর আখ্যা দেওয়া হয়েছে। এ যেন এক অমৃতফল।
একটা গোটা কমলালেবু কী কী জোগান দেয় মানবদেহে, দেখে নেওয়া যাক। একটি মাঝারি মাপের (১৪০ গ্রাম) কমলালেবুতে রয়েছে মোটামুটি তার ওজনের প্রায় ৮৬ শতাংশ জল, ৬৬ কিলো ক্যালরি, প্রোটিন ১.৩ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ১৪.৮, সুগার ১২ গ্রাম, ফাইবার ২.৮ গ্রাম, ফ্যাট ০.২, ভিটামিন সি ৯২ শতাংশ দৈনিক অনুপাতে, এছাড়া ক্যালসিয়াম ৫ শতাংশ দৈনিক অনুপাতে, পটাশিয়াম ৫ শতাংশ দৈনিক অনুপাতে, ফোলেট ৯ শতাংশ দৈনিক অনুপাতে। এছাড়াও রয়েছে ফসফরাস, ফ্ল্যাভনয়েড, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যারটিনয়েড, থায়ামিন, রাইবোফ্লোবিন, নায়াসিন, ভিটামিন ই, ভিটামিন বি, জিঙ্ক ও আরও অনেক উপাদান। আমাদের শরীরে প্রতিদিন যে পরিমাণ ভিটামিন সি প্রয়োজন তার পুরোটাই কমলালেবু থেকে পাওয়া যায়।
কমলালেবুর পাতলা ত্বকে রয়েছে আঁশ। এই আঁশই হল পেকটিন। যে কারণে একে ফাইবার জাতীয় খাদ্যের তালিকায় প্রথম সারিতেই রাখা হয়। সেই কারণে এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং ওজন না বাড়িয়ে পেট ভরায়। ফ্যাটের পরিমাণ খুবই কম থাকে কমলালেবুতে। কমলালেবুতে রয়েছে ফোলেট যেটা বি ভিটামিন । এই বি ভিটামিন আমাদের দেহে মেটাবলিজম, মাতৃগর্ভে ভ্রূণের বিকাশ, সুস্থ গঠনে সাহায্য করে।
কমলালেবুর মধ্যে থাকা ফ্ল্যাভনয়েড-এর দুটি মূল উপাদান হেসপারডিন এবং নারিনজেনিন হল অন্যতম অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। এই ফ্ল্যাভনয়েড উচ্চ রক্তচাপকে প্রশমিত করে, অ্যান্টিইনফ্লামেটরি বা প্রদাহজনিত সমস্যা প্রতিরোধ করে,রক্ত সংবাহী নালির ক্রিয়াশীলতা বৃদ্ধি করে এবং রোগপ্রতিরোধ শক্তিবৃদ্ধি করে।
আরও পড়ুন : রাজ্য পুলিশেই হবে ভোট
কমলালেবুর উচ্চমাত্রার ক্যারোটিনয়েড খুব শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। এই অ্যান্টি অক্সিডেন্টের জন্য কমলালেবুর রং এত আকর্ষণীয়। এটি হার্ট ডিজিজ জনিত রিস্ক কমাতে ভীষণ কার্যকরী। গবেষণা অনুযায়ী কমলালেবুর রস শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। ব্লাড সুগার বা ডায়াবেটিসের মতো লাইফস্টাইল ডিজিজ বিশেষ করে টাইপ টু ডায়াবেটিস এবং যে কোনও ক্রনিক রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। ক্যানসার রোগে কার্যকরী কমলালেবু। এর মধ্যে থাকা ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট ক্যানসার প্রতিরোধ করে। যেমন, লাং ক্যানসার, মাউথ ক্যানসার, স্টমাক ক্যানসার, হেড এবং নেক ক্যানসার। লিউকেমিয়া বা ব্লাড ক্যানসার প্রতিরোধে কমলালেবুর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। শুধু তাই নয়, ত্বকের ক্যানসার, ব্রেস্ট ক্যানসারও প্রতিরোধ করে কমলালেবু।
কমলালেবুর মধ্যে থাকা ভরপুর ভিটামিন সি অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ করে। এই ফল খেলে লোহিত রক্তকণিকার উৎপাদন বৃদ্ধি পায় ফলে রক্তাল্পতার সমস্যা থাকে না। এর মধ্যে ভিটামিন সি ছাড়াও রয়েছে কোলিন, পটাশিয়াম এবং ডায়েটরি ফাইবার যা স্ট্রোক, অ্যারিথমিয়ার, সেরিব্রাল অ্যাটাকের সম্ভাবনা কমায়। সেল ড্যামেজ প্রতিরোধ করে। যে কোনও প্রদাহকে প্রশমিত করে। ভিটামিন সি প্রচুর থাকার ফলে যে কোনও সংক্রমণের বিরুদ্ধে দারুণ কাজ করে। রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি আর সংক্রমণ থেকে বাঁচা যা করোনা অতিমারি থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে জরুরি তা সম্পূর্ণ রয়েছে কমলালেবুতে।
যাঁদের ইনসমনিয়া বা নিদ্রাহীনতার সমস্যা রয়েছে বা দীর্ঘদিন ভুগছেন, তাঁরা রোজকার ডায়েটে কমলালেবু অবশ্যই রাখুন। এই ফলে থাকা ফ্ল্যাভনয়েড অনিদ্রা দূর করতে সাহায্য করে। স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। পেটের যে কোনও ধরনের আলসার প্রতিরোধে কমলালেবুর জুড়ি মেলা ভার। ডিমেনশিয়া রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটা কমে যায়, যাঁরা নি…