হিমালয়ের জীবাশ্ম গবেষণার এক ঐতিহাসিক রহস্য

ভারতবর্ষের সেলিব্রেটি জীবাশ্ম বিজ্ঞানী ড. বিশ্বজিৎ গুপ্তের খোঁজ করা বহু প্রশংসিত জীবাশ্মগুলোর সবটাই নাকি ধোঁকাবাজি; বৈজ্ঞানিক মহলে যা ‘গ্রেটেস্ট সায়েন্টিফিক ফ্রড অব দ্য সেঞ্চুরি’ হিসেবে বদনাম! সে-সবকিছুই খতিয়ে দেখলেন তুহিন সাজ্জাদ সেখ

Must read

বিজ্ঞান মানবজাতির অগ্রগতির চালিকাশক্তি। প্রাকৃতিক জগতের রহস্য উন্মোচনে বিজ্ঞানীরা যুগে যুগে অসাধারণ অবদান রেখে গেছেন। তাঁদের আবিষ্কার ও অনুসন্ধান আমাদের জ্ঞানের পরিসরকে প্রসারিত করেছে। তবে কখনও কখনও কিছু ঘটনা আমাদের এই বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠানের উপর প্রশ্ন তোলে— কখনও ইচ্ছাকৃত প্রতারণা, কখনও ব্যক্তিগত খ্যাতির পেছনে ছোটা। ঠিক তেমনই এক বিতর্কিত অধ্যায়ের নাম ড. বিশ্বজিৎ গুপ্ত, যিনি একসময় হিমালয় অঞ্চলের জীবাশ্ম আবিষ্কারে এক অনন্য কৃতিত্বের দাবিদার ছিলেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সেই দাবির ভেতরে লুকানো সত্য উন্মোচিত হলে বিজ্ঞান জগৎ স্তম্ভিত হয়ে ওঠে। এই নিবন্ধে আমরা অনুসন্ধান করব, কীভাবে এক প্রতিভাবান বিজ্ঞানীর প্রতারণা শতাব্দীর অন্যতম বড় বৈজ্ঞানিক কেলেঙ্কারিতে পরিণত হল।
বৈজ্ঞানিক ছলনা
সময়টা ১৯৬৬–১৯৮৯ সাল, ৪৫০টির বেশি গবেষণাপত্র এবং সেই সব গবেষণা সংবলিত ৫টি বই, প্রকাশিত এবং বহুল জনপ্রিয়। ফলত ভারতবর্ষের সর্বাধিক প্রশংসিত জীবাশ্ম বিজ্ঞানীর খ্যাতি তাঁর কপালে শোভা পাচ্ছিল, তিনি অধ্যাপক জীবাশ্মবিদ ড. বিশ্বজিৎ গুপ্ত, চণ্ডীগড়ের পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটিতে কর্মরত। হিমালয় পর্বতের বুকে নতুন নতুন জীবাশ্মের খোঁজ এবং ভূতাত্ত্বিক গঠনের উপর গবেষণায় তিনি পৃথিবী জুড়ে একটি অনন্য পরিচিতি লাভ করেন। দুঃখের কথা, সময়ের কাঠগড়ায় তাঁর অধিকাংশ জীবাশ্ম-অনুসন্ধানের গল্পগুলো প্রমাণিত হয় মিথ্যা— তাঁর গবেষণার পুরোটাই ছিল একটা ধোঁকাবাজি! বৈজ্ঞানিক মহলে সকলের মাথা হেঁট হয়ে যায়। প্রায় ৩০ বছর ধরে তিনি গোটা পৃথিবীকে বোকা বানিয়েছিলেন; তাঁকে কেউ বলেন দ্য মোস্ট নটরিয়াস প্যালিওন্টোলজিক্যাল ফ্রডস্টার, আবার কেউ বলেন দ্য হুডিনি অব দ্য হিমালয়াস।
তখন ১৯৯০ সাল, তাঁর যা কিছু গবেষণা ও আবিষ্কার, সেগুলো আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক মহলে একটি বড়সড় কেলেঙ্কারি ঘটায়। জীবাশ্মের উপর তাঁর অনৈতিক বা বিতর্কিত কাজ প্রকাশ্যে আসে এবং সমাজে ব্যাপক আলোড়ন বা নিন্দার সৃষ্টি হয়, যা ‘দ্য হিমালয়ান ফসিল হোক্স’ নামে কুখ্যাত! এই ঘটনার সূত্রপাত হয় ১৯৬৭ সাল থেকেই, যখন ইংরেজ ভূতাত্ত্বিক ফ্রাঙ্ক এইচ টি রোডস্ এবং আর এল অস্টিনের সঙ্গে একত্রে নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে তিনি দাবি করেন, বেশকিছু কনোডন্টস আবিষ্কারের কথা। কনোডন্টস বা কনোডন্ট প্রাণী— প্রাচীন সামুদ্রিক মেরুদণ্ডী প্রাণীর একটি শ্রেণি, যাদের অস্তিত্ব ছিল মূলত প্যালিওজোয়িক যুগে; অর্থাৎ আজ থেকে প্রায় ৫৪১ থেকে ২৫২ মিলিয়ন বছর আগে ক্যামব্রিয়ান ও ট্রায়াজিক পিরিয়ডের মধ্যবর্তী কালে। কনোডন্টসদের দাঁতের (কনোডন্ট) মতো জীবাশ্ম বিজ্ঞানীদের সেইসময়কার সামুদ্রিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র সম্পর্কে সম্যক ধারণা পেতে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
ড. গুপ্তর ওইরকম খোঁজ তখন ভারতবর্ষের বুকে প্রথম। চারিদিকে প্রশংসা ছড়িয়ে পড়েছিল; অধ্যাপক গুপ্ত জীবাশ্মবিদ্যার শীর্ষস্থানীয় মহলের সভ্য হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি তাঁর কাজগুলোকে বেশ মর্যাদা ও বিশ্বাসযোগ্যতা দিতে পেরেছিলেন, তবুও সবসময় একটা সন্দেহের ছায়া পড়েছিল তাঁর নানারকম বোল্ড দাবির জন্য। শুরু হয়েছিল তদন্ত— কালক্রমে দেখা যায় তিনি প্রায় তিন দশক যাবৎ ভুল তথ্য দিচ্ছেন; নানা জায়গা থেকে কেনা বা লুকিয়ে সংগ্রহ করা ও এমনকী উপহার হিসেবে পাওয়া জীবাশ্মের টুকরোগুলোকে নিয়ে তিনি দাবি করেছেন সেগুলো নাকি হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের কিছু দুর্গম ও প্রত্যন্ত এলাকায় পাওয়া যায়! বছরের পর বছর তিনি ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটির ড. গ্যারি ওয়েবস্টার, ইউনিভার্সিটি অব সাউদাম্পটনের ড. আর এল অস্টিন এবং ইউনিভার্সিটি কলেজ অব স্বনসীর ফ্রাঙ্ক রোডসের মতো প্রায় ১২৬ জন স্বনামধন্য সহ-লেখক গবেষকদের ভুল পথে চালিত করেছেন; শুধুমাত্র একটি উৎপাদনশীল গবেষণাপত্র প্রকাশ করতে!

আরও পড়ুন-মোহনবাগান রত্ন পাচ্ছেন টুটু বোস

অধ্যাপক গুপ্তর পরিচয়
সেদিন ছিল ৪ নভেম্বর, সাল ১৯৪২ ভারতবর্ষের চণ্ডীগড়ে ড. বিশ্বজিৎ গুপ্ত জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর কর্মজীবনে গবেষণার বিষয় ছিল মূলত জীবাশ্মবিদ্যা বা প্যালিওন্টোলজি, এবং স্ট্র্যাটিগ্রাফি বা ভূবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা, যার মাধ্যমে পৃথিবীর ভূত্বকের স্তর বা ‘স্তরবিন্যাস’ নিয়ে গবেষণা করা হয়। সহজ ভাষায় বললে, স্ট্র্যাটিগ্রাফি হল মাটির বা শিলার বিভিন্ন স্তর কীভাবে তৈরি হয়েছে, কী কী উপাদানে গঠিত এবং তাদের আপেক্ষিক বয়স বা ক্রম কী— তা নির্ধারণ করার বিজ্ঞান। তিনি শ্রীনগরের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে মজুত প্যালিওজোয়িক পাথরের গঠন ও তাদের বৈশিষ্ট্য নিয়ে অনেক কাজ করেছিলেন।
গবেষণার শুরুতে ড. মুলকরাজ সাহানির তত্ত্বাবধানে তাঁর প্রথম গবেষণাপত্র দুটি ১৯৬৪ সালে নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। দুটো পেপারই ছিল জীবাশ্মের প্রতিবেদন। প্রাচীন টেরোব্রাঙ্কিয়া শ্রেণির গ্রাপ্টোলিথিনা উপশ্রেণির একদল বৃহৎ গোষ্ঠীভুক্ত প্রাণীদের জীবাশ্ম ‘গ্রাপ্টোলাইটস’-এর সন্ধান পাওয়া যায় ওই গবেষণাপত্র থেকে। এরপরই আরও দুটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয় কারেন্ট সায়েন্স পত্রিকায়, প্রাপ্তি ফসিল অ্যাসেমব্লেজ— কোনও নির্দিষ্ট ভূতাত্ত্বিক স্তরে বা এলাকায় একসঙ্গে পাওয়া একাধিক প্রজাতির জীবাশ্মের সমষ্টি বা গুচ্ছ। এমন একধরনের জীবাশ্মের দল যা একসঙ্গে পাওয়া যায় এবং যা থেকে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন সেই সময়ে বা অঞ্চলে কী ধরনের পরিবেশ ছিল, পরিবর্তন ও বিলুপ্তির কারণ, কী ধরনের জীববৈচিত্র ছিল এবং কোন সময়কাল ছিল, প্রভৃতি। আরও একটি রিসার্চ পেপার প্রকাশিত হয় দ্য জার্নাল অব দ্য প্যালিওন্টোলজিক্যাল স্যোসাইটি অব ইন্ডিয়াতে। ড. গুপ্তর জীবাশ্মের উপর কাজকর্ম আন্তর্জাতিক পরিচিতি পায়। জাতীয় আন্তর্জাতিক সব মিলিয়ে প্রায় ১২৮ জন খ্যাতনামা বিজ্ঞানীর সঙ্গে কোলাবরেশন করেন— প্রকাশ করেন ৪৫৮টি পেপার ও ৫টি বই। তবে তাঁর ওইরকম অভাবনীয় সাফল্য বৈজ্ঞানিক সমাজের সন্দেহের কাছে নত হয়। ১৯৯০ সাল নাগাদ গবেষণা ক্ষেত্রে তাঁর ওই প্রকার অনৈতিক কাজকর্ম জনসাধারণের সামনে চলে আসে। ভারতবর্ষের প্রথম সারির একটি বিজ্ঞান সংবাদ মাধ্যম বিষয়টিকে শতাব্দীর মধ্যে সবচেয়ে লজ্জাজনক ঘটনা বলে দায়ী করেছিলেন!
সন্দেহের কালো ছায়া
তাঁর গবেষণার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রথম প্রশ্ন তোলেন তিনজন ভারতীয় বিজ্ঞানী— ড. এস ভি শ্রীকান্তিয়া, ড. এইচ এম কাপুর ও ড. এস কে সাহ, তাও আবার সেই ১৯৭৮ সালে। বৈজ্ঞানিক মহল তাঁদের সন্দেহকে ঠিক তখন পাত্তা দেয়নি। এরপর ১৯৮১ সাল নাগাদ, লখনউ ইউনিভার্সিটির ড. প্রেম এন আগরওয়াল এবং ড. এস এন সিং প্রথম অধ্যাপক গুপ্তর গবেষণার ‘মেথোডিক্যাল ও ক্রিটিক্যাল’ অনুসন্ধান করে দেখতে পান, ড. গুপ্ত যে নতুন জীবাশ্মগুলির কথা বলেছেন তাদের সঙ্গে তাদের প্রাপ্তিস্থানের অসামঞ্জস্য রয়েছে। বিজ্ঞানী আগরওয়াল দ্য জার্নাল অব দ্য প্যালিওন্টোলজিক্যাল স্যোসাইটি অব ইন্ডিয়াতে ড. গুপ্তর কনোডন্টস আবিষ্কারের উপর গুরুতর সন্দেহ প্রকাশ করেন। তবুও এ-বিষয়ে আর কোনও ভাবনাচিন্তা এগোয়নি। কেটে যায় আরও সাতটি বছর…
তখন ১৯৮৭ সাল, অস্ট্রেলিয়ার জিওলজিস্ট জন আলফ্রেড ট্যালেন্ট এবং তাঁর প্রাক্তন ছাত্র ও সহযোগী গ্লেন অ্যান্টনি ব্রুক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ড. গুপ্তর আবিষ্কার করা প্রায় ১০০টি জীবাশ্মকে ভুয়ো বা ফ্রড বলে দাবি করেন। ওই বছরই আগস্ট মাসে, ড. বিশ্বজিৎ গুপ্তর উপস্থিতিতে কানাডার ক্যালগেরিতে আয়োজিত ‘দ্য ইন্টারন্যাশনাল সিম্পোজিয়াম অন দ্য ডেভোনিয়ান সিস্টেমে’র সভায় ট্যালেন্ট সবার সামনে বিষয়টি খুলে বলেন এবং তিনি দেখান ড. গুপ্তর আবিষ্কার করা জীবাশ্ম মরক্কোতে খুঁজে পাওয়া জীবাশ্ম হুবহু এক! গোটা বিষয়টি জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টের ন্যাচারমিউজিয়েম সেঙ্কেনবার্গ দ্বারা প্রকাশিত একটি আর্থ সায়েন্স জার্নালে বিজ্ঞানী ট্যালেন্ট একটি ৫০ পাতার এক্সোপোজার প্রকাশ করেন। এই ঘটনা তখন পৃথিবীর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে!
বিষয়টি একটি গ্লোবাল নিউজ হয়ে পড়ে, যখন ড. ট্যালেন্টকে স্বনামধন্য নেচার পত্রিকা ওই ব্যাপারে একটি কমেন্টারি লিখতে নির্দেশ দেয়। তখন ১৯৮৯ সাল, প্রমাণ-সহ নেচার পত্রিকায় তিন পাতার কমেন্টারি প্রকাশিত হয়— আরোপ ছিল ড. গুপ্তর আবিষ্কার করা জীবাশ্মগুলো কখনও কিনে আনা হয়েছে, কখনও চুরি করা হয়েছে, তো কখনও উপহার হিসেবে পেয়েছেন সেগুলো পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে; সেগুলো প্রকৃত অর্থে হিমালয়ের নয়! তাদের বৈশিষ্ট্য এবং প্রাপ্তিস্থলের মধ্যে কোনও যোগসাজশ নেই। খবরটি বিজ্ঞান সাংবাদিক রজার লুইনও তদন্ত করে দেখেন এবং তা সায়েন্স পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। বৈজ্ঞানিক সমাজে ড. বিশ্বজিৎ গুপ্তের গবেষণা কে ‘কুয়াগমায়ার অব প্যালিওন্টোলজিক্যাল ডিসইনফরমেশন’ বলে দাগিয়ে দেওয়া হয়!!!

আরও পড়ুন-মোহনবাগান রত্ন পাচ্ছেন টুটু বোস

মিথ্যার খেসারত
ওইসব অভিযোগ সর্বজনীন হতেই পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ ১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অধ্যাপক গুপ্তকে সাসপেন্ড করে, তবে মাত্র ১১ মাসের জন্য। ১৯৯২ সালে জানুয়ারিতে তিনি আবার কাজে যোগদান করেন। পরের বছর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি আয়োগ তাঁর বিভাগীয় সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডি ইন প্যালিওন্টোলজি অ্যান্ড হিমালয়ান জিওলজির স্ট্যাটাস ক্ষুণ্ন করে এবং তহবিল বন্ধ করে দেয়। সেইসময় বেশ কিছু অন্তর্বর্তী বিজ্ঞানীর তৎপরতায়, পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখতে সিকিম হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত মুখ্য বিচারপতি এম এস গুজরালের নেতৃত্বে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়। দেখা যায় অধ্যাপক গুপ্ত ডেটা রিসাইক্লিং, প্লেগিয়ারিজম, কল্পনাপ্রসূত রিসার্চ লোকেশন এবং সহ-বিজ্ঞানীদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে অভিযুক্ত।
আইনি ভাবে তিনি দোষী সাব্যস্ত হলেও তাঁর ওইসব ভুয়ো গবেষণাপত্রগুলোর একটিও বাতিল করা হয়নি। এমনকী তিনি তাঁর সমস্ত ডিগ্রি ও সুযোগসুবিধা-সহ স্বাভাবিক ভাবেই ২০০২ সালে অবসর নেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তিনি গত ৩১ ডিসেম্বর, ২০২২ সালে আমাদের ছেড়ে না-ফেরার দেশে চলে যান। তাৎপর্যপূর্ণভাবে বিজ্ঞানের জীবাশ্মবিদ্যা শাখার বয়স ৩০০ বছরেরও কম— বিখ্যাত ফরাসি পণ্ডিত জর্জ ক্যুভিয়ার (১৭৬৯-১৮৩২) সর্বপ্রথম প্যালিওন্টোলজিকে একটি বিষয় হিসেবে ছাত্রদের কাছে তুলে ধরেন। এরপর ১৮৩৮ সালে জীবাশ্মবিদ্যা বিষয়টিকে পুরোপুরিভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। এই জায়গায় দাঁড়িয়ে, অধ্যাপক গুপ্তর হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের জীবাশ্ম ও ভৌগোলিক গঠনের উপর গবেষণাগুলোকে জীবাশ্মবিদ্যার পঠনপাঠনের ‘ফান্ডামেন্টালস’ হিসেবে গণ্য করা হত। দুঃখের বিষয়, তাঁর এইপ্রকার অনৈতিক কাজকর্ম জনসাধারণের সামনে আসার পর যেন এ-বিষয়ে ভারতীয় বিজ্ঞানীদের গবেষণার উপর সন্দেহের একটি কালো ছায়া নেমে এসেছিল!
আমাদের কথা
বিজ্ঞান, কলা কিংবা বাণিজ্য, যে বিষয়ই হোক না কেন, সময়ের চলার পথে তার গুরুত্ব, প্রাসঙ্গিকতা, জনপ্রিয়তা কমে আসে বইকি। বিশেষ করে যখন নানারকম যান্ত্রিক ও পরিকাঠামোগত সমস্যা এবং ম্যালপ্রাকটিসের কথা উঠে আসে। ক্লাইমেট চেঞ্জ, কুয়াটার্নারি জিওলজি, ওশেন কারেন্ট ফোর কাস্টিং, মনসুন মডেল, লাইফ এবং এক্সটিংশনের রহস্য উন্মোচনে জীবাশ্মবিদ্যার গুরুত্ব যথেষ্টই অপরিসীম। খুব স্বাভাবিক, এই ঘটনায় ভারতীয় বিজ্ঞানীরা বিশ্বের বাজারে কিছু সময়ের জন্য তাঁদের মর্যাদা হারিয়েছিলেন। অধ্যাপক রাজনাথ, ড. বীরবল সাহানি, ড. ডি এন ওয়াডিয়া, ড. এম এস কৃষ্ণন ও ড. এল রামারাও-এর মতো ভারতীয় প্যালিওন্টোলজিস্টদের কাছে আজ বিশ্ব-সমাদৃত। জিওলজিক্যাল স্যোসাইটি অব ইন্ডিয়া সগৌরবে জীবাশ্মের উপর গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি বীরবল সাহানি ইনস্টিটিউট অব প্যালিওসায়েন্সের একজন জৈব-ভূবিশারদ ড. আরিফ হুসেইন অনসারি লাদাখের হাই-অলটিটিউড হট স্প্রিংয়ের মধ্যে খুঁজে পেয়েছেন ‘অরিজিন অব লাইফে’র গন্ধ! তাঁদের এই গবেষণা প্রমাণ করে ভারতীয় বিজ্ঞানীদের নিষ্ঠা ও প্রতিষ্ঠার সংস্কার ও সংস্কৃতির মান বিশ্ববন্দিত। তবে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় নীতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তা সততা, স্বচ্ছতা ও দায়িত্ব নিশ্চিত করে। তথ্য জালিয়াতি, চুরি ও পক্ষপাত এড়িয়ে সঠিক উপায়ে গবেষণা পরিচালনা বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির ভিত্তি। নীতিনিষ্ঠ গবেষণাই সমাজে আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করে।

Latest article